চালকলে ধান বিক্রি করে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে চেক পেয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু তা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে জানলেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ‘চেক বাউন্স’ করে গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকে শুধু মালঞ্চা পঞ্চায়েতেই শ’দুয়েক ধানচাষি এই বিপাকে পড়েছেন। বুধবার বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার আশিসকুমার সরকার বলেন, “গত ১৩ জানুয়ারি তারিখে দেওয়া ১১৭টি চেক বাউন্স করেছে। পরে আরও প্রায় ৭০ জন চাষি চেক জমা দিতে এলে তাঁদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
মুর্শিদাবাদ থেকে বর্ধমানের মতো অনেক জায়গাতেই ইতিমধ্যে একের পর এক চেক ‘বাউন্স’ হওয়ার খবর এসেছে। সর্বত্রই চালকল মালিকেরা এর জন্য সরকারের কাছ থেকে সময়ে টাকা না পাওয়াকে দায়ী করেছেন। কিন্তু বুধবার খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেন, “যথাসময়ে আমরা চালকলগুলিকে টাকা দিচ্ছি। ওরা কাকে, কী চেক দিয়েছে তার দায় সরকারের নয়।” |
এই পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যবস্থার প্রতি চাষিদের আস্থা নড়ে গিয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। কেননা বর্ধমানের গলসিতে ১০টি শিবির খুলে জরুরি ভিত্তিতে ধান সংগ্রহ শুরু হলেও চাষিদের তরফে তেমন সাড়া মেলেনি। রাজ্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে দিনে দু’হাজার টন, সেখানে মঙ্গলবার মোটে ৬৬ টন এবং বুধবার ১২০ টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত ৩ ফেব্রুয়ারির বদলে আজ, বৃহস্পতিবারই তা শেষ করে দেওয়া হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “শুক্রবার ওই শিবিরগুলি গলসি ২ ব্লকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
এ দিনই গলসির পারাজে গিয়ে বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “গ্রামের মানুষ জানেন, কোথায় ধান কেনা হচ্ছে। তবে তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। কারও সংশয়, কতটা ধান বাদ দিয়ে কেনা হবে বস্তা? আবার চেক হাতে পেলেও কবে নগদ টাকা মিলবে তা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। অনেকেই হয়তো বোঝেননি, এখানে যে শিবিরগুলি ধান কিনছে তার প্রতিটি থেকেই হাতে হাতে চেক দেওয়া হচ্ছে।” আজ থেকে প্রয়োজনে বাড়ি-বাড়ি প্রচার চালানো হবে এবং তাতে বেশি সাড়া মিলবে বলে আশাও প্রকাশ করেন তিনি। |
‘বাউন্স’ চেক হাতে নিয়ে তপনের চাষিরা জানান, ধান বিক্রির পর তাঁদের ‘ডিউ স্লিপ’ দেওয়া হয়। এর ৭-৮ দিন বাদে তাঁরা চেক পান। পরে তা গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ভাঙাতে গিয়ে শোনেন, চালকলের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে মাইলডাঙার চাষি হাইবাবু মণ্ডল বলেন, “ধান বেচার টাকা দিয়ে নাতির বই, জামা, ওষুধ কিনব ঠিক করেছিলাম। কবে টাকা পাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” পাহাড়পুরের চাষি চৈতন্য বর্মন বলেন, “১৫ বিঘা জমিতে চাষ করে প্রায় ৫৬ কুইন্টাল ধান পেয়েছি। দু’দফায় ৬ কুইন্টাল ধান সহায়ক মূল্যে বেচেও টাকা না মেলায় বিপদে পড়েছি। সংসার খরচ, দেনা মেটানোর দুশ্চিন্তা ও সামনের খরিফ চাষের ব্যবস্থাও করতে পারছি না।” এ দিনই বালুরঘাটের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” যে চালকল থেকে চেকগুলি দেওয়া হয়েছিল তার মালিক বিজয় দে-র সাফাই, “চেক দেওয়ার সময়েই চাষিদের বলেছিলাম টাকার সমস্যা আছে। ৪ ফেব্রুয়ারির আগে যেন চেক জমা না-দেন। সামনের সপ্তাহের মধ্যে সবাই টাকা পেয়ে যাবেন।” জেলা খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদার জানান, দ্রুত যাতে চাষিরা টাকা পান সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। |