উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ
গোলমাল চলছেই, বহু প্রকল্প থমকে
মুখ্যমন্ত্রী বা পঞ্চায়েতমন্ত্রীর উদ্যোগের পরেও জেলা পরিষদের গ্রামোন্নয়নের কাজে গতি এল না উত্তর ২৪ পরগনায়। এ নিয়ে জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট এবং বিরোধী তৃণমূলের মধ্যে চাপান-উতোরও চলছে। সেখানকার কর্মীদের একাংশের মতে, সাধারণ সভায় গণ্ডগোলের জন্যই বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ভুগছেন সাধারণ মানুষ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে মোট আসন ৫১। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ২৭টি আসন পেয়ে বামফ্রন্ট জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসে। বিরোধীরা পায় ২৪টি আসন। কিছু দিন আগে বামেদের এক সদস্য পদত্যাগ করেন। বিরোধী তৃণমূলের এক সদস্য বিধায়ক হওয়ায় জেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরিষদের মোট ১০টি স্থায়ী সমিতি রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়মানুযায়ী গ্রামোন্নয়নের কোনও প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য সংশ্লিষ্ট স্থায়ী সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অর্থ বিষয়ক স্থায়ী সমিতির কাছে পাঠায় অনুমোদনের জন্য। প্রকল্প অনুমোদিত হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সাধারণ সভা। ওই সভায় জেলা পরিষদের সদস্যেরা ছাড়াও পদাধিকার বলে গ্রামীণ এলাকার সাংসদ, বিধায়ক এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা থাকেন। বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বামফ্রন্ট ধরাশায়ী হওয়ায় জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায় তৃণমূল।
এই সমীকরণ থেকেই গোলমালের সূত্রপাত বলে দাবি জেলা পরিষদের কর্মীদের একাংশের। সিপিএমের অভিযোগ, গ্রামোন্নয়নের বহু প্রকল্প সাধারণ সভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের বিরোধিতায় আটকে যাচ্ছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের পাল্টা দাবি, বামেরা স্থায়ী সমিতিতে এমন অনেক প্রকল্প নিচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। তাই প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে না। সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তৃণমূল জেলা পরিষদে একটি উন্নয়ন উপ-সমিতি গঠন করেছে।
উন্নয়নের কাজে গতি আনতে গত অক্টোবরে ১৩ জন মন্ত্রী এবং মহাকরণের শীর্ষকর্তাদের বারাসতে নিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে স্থায়ী সমিতি নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে জেলা পরিষদের কাজ থমকে থাকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। সেখানে নজর দেওয়া হবে।” এর পরে গত ১১ জানুয়ারি মহাকরণে যে ৬টি জেলার সভাধিপতিদের বৈঠকে ডেকেছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সেখানে উত্তর ২৪ পরগনার সভাধিপতি ভরত দাসও ছিলেন। সেই বৈঠকেও পঞ্চায়েতমন্ত্রী গ্রামোন্নয়নের কাজে জোর দেন।
কিন্তু তার পরেও উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা পরিষদের গ্রামোন্নয়নের কাজ গতি পায়নি। এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে, যার দরপত্র ডাকা শেষ হয়ে গেলেও তার পরে সব বন্ধ। হাবরা-১ ব্লকের বেড়গুম-২, কুমড়ো, পৃথিবা এবং রাউতারা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চারটি রাস্তা ঝামা দিয়ে সংস্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি। রাউতারা পঞ্চায়েতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি নতুন ভবন এবং পৃথিবা পঞ্চায়েতের আনোয়ারবেড়িয়াতেও একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়নি।
বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সৌমেন দত্ত বলেন, “চারটি রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব দীর্ঘদিন আগে জমা দেওয়া হলেও আজও কাজ শুরু হয়নি।” বারাসত-১ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ১৫টি প্রকল্প জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। সমিতির সভাপতি তৃণমূলের তরুণ চক্রবর্তী বলেন, “সম্প্রতি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১০ লক্ষ টাকার উপরে প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য। আমরা ফের ৬টি প্রকল্প জমা দিয়েছি। মূলত, রাস্তা সংস্কার, নতুন রাস্তা তৈরি, কালভার্ট ও গার্ডওয়াল নির্মাণ রয়েছে তার মধ্যে।” একই অবস্থা গাইঘাটা ব্লকেও। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শেফালি বিশ্বাস বলেন, “মোট ৩৬টি প্রকল্প জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি।” এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।
জেলা পরিষদে বামফ্রন্টের সচেতক সঞ্জয় দত্ত চৌধুরী বলেন, “পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী সমিতিতে গ্রামোন্নয়নের যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে সাধারণ সভায় তৃণমূল বহু ক্ষেত্রে সেই সব প্রকল্প নিয়ে বাধা দিচ্ছে। ফলে, সেই সব কাজ থমকে রয়েছে। সভাধিপতি বিষয়টি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে জানিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।”
সভাধিপতি ভরত দাস বলেন, “পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় বহু ক্ষেত্রে কাজে সমস্যা হচ্ছে। ঠিকাদাররা কাজের সঠিক পরিবেশ পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সমস্যাগুলি মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবে, যে সব জায়গায় সমন্বয় রয়েছে, সে সব জায়গায় গ্রামোন্নয়নের কাজ হচ্ছে।”
সাধারণ সভায় তৃণমূলের বিরোধিতার যে অভিযোগ বামেরা তুলেছে সে প্রসঙ্গে পরিষদের উন্নয়ন উপ-সমিতির সদস্য তথা স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “সর্বজনগ্রাহ্য কোনও প্রকল্প ওঁরা নিতে পারছেন না বলেই সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তা পাশ হচ্ছে না। ওদের প্রকল্পগুলি বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া বামেদের কর্মাধ্যক্ষদের এলাকাতেই প্রকল্প বেশি নেওয়া হচ্ছে। এই সব কারণে আমরা বিরোধিতা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.