স্কুল থেকে ফিরে ঝাঁপ সহপাঠীর সঙ্গে, মৃত্যু কিশোরীর
নিউ ব্যারাকপুরের সাজিরহাটে একটি বহুতল আবাসন থেকে পড়ে এক কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তার সহপাঠী এক কিশোরকে ভর্তি করানো হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার পরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃত কিশোরীর নাম দীপশিখা দাম (১৪) এবং আহত কিশোরের নাম সুদীপ্ত চাকী। দীপশিখা দমদমের মেঘনাদ সাহা লেনের বাসিন্দা। সুদীপ্ত থাকে সাজিরহাটের ‘রীতা’ আবাসনে। দু’জনেই গঙ্গানগরের জুলিয়ান ডে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। এ দিন বিকেলে ওই দুই কিশোর-কিশোরী একসঙ্গেই স্কুল থেকে নিউ ব্যারাকপুরে ফেরে। দীপশিখাকে নিয়ে সুদীপ্ত সোজা চলে যায় তাদের আবাসনের পাঁচতলায়। ছাদে থাকা দু’টি চেয়ারের সাহায্যে কার্নিসে উঠে তারা ঝাঁপ দেয় বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
কেন এই ঝাঁপ, গভীর রাত পর্যন্ত সেই রহস্য ভেদ হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে দু’টি সুইসাইড নোট পেয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ইংরেজি হরফে বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে সুইসাইড নোট। দুই পড়ুয়াই যা লিখেছে, তার সারমর্ম: মা-বাবার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েই তারা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে দু’জনেই লিখেছে, এ দিন স্কুল থেকে পাওয়া পদক রয়েছে তাদের ব্যাগে। ছাদে দু’জনের স্কুলব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে-ছাত্র বা ছাত্রী স্কুলে পদক পায়, তারা মা-বাবার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার কথা কেন লিখবে? কেনই বা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেবে?
এই আবাসনের ছাদ থেকেই ঝাঁপ দেয় দুই স্কুলপড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র
মনোবিদ হিরণ্ময় সাহা বলেন, “কম বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আবেগতাড়িত হয়ে বা মানসিক অবসাদে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। লেখাপড়ায় ভাল হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্কের কোনও টানাপোড়েনও এই ধরনের ঘটনার কারণ হতে পারে। সে-দিক থেকেও মা-বাবার প্রত্যাশা পূরণ করতে না-পারার গ্লানি জন্মাতে পারে।” রাতে ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “সুইসাইড নোট দু’টি পরীক্ষা করছি। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, মানসিক অবসাদেই ওরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পড়াশোনায় দু’জনেই ভাল ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। স্কুলেও ওদের বিষয়ে কথা বলতে হবে। দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তদন্তে সেটাও দেখা হবে।”
ঠিক কী ঘটেছিল? সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওই ঘটনার সময়েই উৎসা পোদ্দার নামে আবাসনের এক ছাত্রী টিউশনে বেরোচ্ছিল। সে বলল, “বেরিয়ে দেখি, মূল গেটের সামনে সুদীপ্ত এবং একটি মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। চার দিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তখনই চেঁচিয়ে সকলকে ডাকি।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চেঁচামেচিতে বেরিয়ে আসেন সুদীপ্তের জেঠিমা লীনা চাকি এবং তার দিদি সুস্মিতা। তাঁরাই ওই ছাত্রের মা মীনাক্ষীদেবীকে খবর দেন। তিনি নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালের চিকিৎসক। ঘটনার সময় তিনি হাসপাতালে ছিলেন। খবর পেয়েই মীনাক্ষীদেবী একটি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। সুদীপ্তকে তুলে নিয়ে তিনি প্রথমে যান পুর হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুদীপ্তকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হলেও দীপশিখা রক্তাক্ত অবস্থাতেই পড়ে ছিল বলে জানান বাসিন্দারা। বেশ কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ এসে দীপশিখাকে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, সুদীপ্তের সঙ্গে সঙ্গে দীপশিখাকেও অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অন্তত কিছু ব্যবস্থা করা যেত। হয়তো তখনও সে বেঁচে ছিল। মীনাক্ষীদেবীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। দীপশিখার পরিবারকে খবর দেয় পুলিশ। রাতে সাজিরহাটে সোদপুর-মধ্যমগ্রাম রোডের ধারে ওই আবাসনের সামনে গিয়ে দেখা গেল, মানুষ জটলা করছেন। চলে এসেছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং অন্যান্য পুলিশকর্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রীতা আবাসনের দোতলায় মা মীনাক্ষীদেবী ও দিদি সুস্মিতার সঙ্গে থাকে সুদীপ্ত। তার বাবা বিপুল চাকী কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকেন। ওই আবাসনেরই তেতলায় থাকেন সুদীপ্তের জেঠু। পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, সুদীপ্ত রোজই স্কুলবাসে বাড়ি ফিরত। কিন্তু এ দিন দীপশিখাকে নিয়ে সে অটোরিকশায় এসেছিল। আবাসনের রক্ষী ছুটিতে থাকায় গেটে কেউ ছিল না। সকলের চোখ এড়িয়ে দু’জনে ছাদে যায়। সুদীপ্তের জেঠিমা লীনাদেবী বলেন, “শীতের দুপুরে পড়াশোনার জন্য সুস্মিতা ছাদে দু’টি চেয়ার নিয়ে গিয়েছিল। তার উপরে উঠেই ওরা কার্নিসে পৌঁছয় বলে মনে হচ্ছে।” দীপশিখাও আগে কখনও ওই আবাসনে আসেনি বলেই পুলিশের কাছে দাবি করেছে সুদীপ্তের পরিবার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.