|
|
|
|
ফুটপাথ ফের দখল, সৌন্দর্যায়ন সেই তিমিরে |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
কথা ছিল হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী থেকে দুর্গাচক টাউন রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তার সৌন্দর্যায়ন হবে। কথা মতো প্রাথমিক পর্যায়ে কাজও কিছুটা এগিয়েছিল। ফুটপাথের জবরদখল হঠিয়ে রাস্তার ধারে গড়ে তোলা হচ্ছিল একতলা সারিবদ্ধ দোকানঘর। কিন্তু ‘গোড়ায় গলদ’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়েছে। অর্ধসমাপ্ত দোকানঘরে আসল দাবিদারদের পুনর্বাসনের বদলে অস্থায়ী কিছু দোকানির জবরদখল ঘটেছে। অন্তত এলাকাবাসীর অভিযোগ এমনই। নতুন জবরদখলকারীরা ফের পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। দাবির চাপে ‘সৌন্দর্যায়ন’ শিকেয় উঠেছে।
এক মাংস বিক্রেতা দিলীপ দাসের কথায়, “আমি রাস্তার ধারে বহুদিন থেকেই ব্যবসা চালাতাম। কথা ছিল একটা দোকানঘর পাব। কিন্তু তা হয়নি। এখন তো অন্যরাই ছাদবিহীন ইটের ঘর দখল করেছে। সবারই পেটের তাগিদ রয়েছে। কিছু বলার নেই। তবে আমাদের যে দাবি ছিল সেটা কতখানি পূরণ হবে জানি না।”
সুপার মার্কেটের পর থেকে আইটিআই কলেজ পর্যন্ত এই মুহূর্তে প্রায় ২৫টি ওই জাতীয় অসম্পূর্ণ ‘স্টল’ হয়েছে। চারপাশে ইটের দেওয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই। ফুটপাথেও অস্থায়ী দোকান থেকে গিয়েছে। পাশাপাশি, অর্ধসমাপ্ত ‘স্টলে’ নতুন ভাবে আস্তানা গেড়েছেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার কিছু ক্লাব, সংগঠনের মদতে রমরমিয়ে চলছে জবরদখল। ফুটপাথে নির্বিঘ্নে চলার আশা ছেড়েছেন এলাকাবাসী। |
|
অর্ধসমাপ্ত দোকানঘর। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
ব্যস্ততম রাস্তা ধরেই চলতে হচ্ছে আম আদমিকে। এলাকার প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী প্রেমাশিস সরস্বতীর কথায়, “এলাকায় এ রকম একটা পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। কাজও চলছিল। হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সবাই-ই। আসল দোকানদারেরা সেই তিমিরেই। গোটা এলাকাটাই কুৎসিত চেহারা নিচ্ছে। মানুষও মুখ বুজে সাইকেল, গাড়ির ধাক্কা সয়েই ব্যস্ত রাস্তা ধরে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
কেন বন্ধ হল স্টলে পুনর্বাসন ও সৌন্দর্যায়নের কাজ? হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-২০০৯ সালে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। খড়্গপুর আইআইটি-কে দিয়ে একটা ‘মাস্টার প্ল্যান’ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তাতে মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে দুর্গাচক পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দৃশ্যগত রূপান্তরের একটা ছক আঁকা হয়। তবে প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেয় ফুটপাথের অস্থায়ী দোকান। তখন এক কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটপাথের দোকানিদের পুনর্বাসনের জন্য ‘স্টল’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কাজও চলেছিল ২০১০-এর মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু জায়গাটি পূর্ত দফতরের হওয়ায় এবং তাদের ছাড়পত্র না থাকায় বাধা আসে। অন্য দিকে, নির্মিত ‘স্টলের’ নীচে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপলাইন থাকায় রক্ষণাবেক্ষণে অন্তরায়ের অভিযোগ তোলে তারাও। এ-সব আগাম বিবেচনা না করে পরিকল্পনা করাতেই ঘটে যায় গোড়ায় গলদ। বন্ধ হয়ে যায় নতুন স্টলে পুরনো দোকানিদের পুনর্বাসনের কাজ। মুখ থুবড়ে পড়ে সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা।
ক্রমশ আরও কুৎসিত চেহারা নেয় ওই এলাকা। যত্রতত্র কাঠ, নির্মাণ সামগ্রী, মোটরগাড়ি সারাইয়ের ওয়ার্কশপ, মাংসের দোকান, এমনকী ভুসিমালের দোকানও চলতে থাকে। অসম্পূর্ণ স্টল নতুন করে জবরদখলও হয়ে যায়। এমনই এক ভুসিমাল দোকানি ফরজুল ইসলাম বলেন, “দোকান হবে বলেছিল। আমরা সরেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তা যখন হয়নি তখন না খেয়ে তো থাকতে পারি না। তাই নিজেরাই অসম্পূর্ণ স্টলের ছাদে চাল লাগিয়ে পেট চালাচ্ছি। আমরাও তো চাই পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হোক। তা আর হচ্ছে কই?” বিষয়টি স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিমল মাজির এক্তিয়ারে না পড়লেও তাঁর কাছেও পরিকল্পনা মতো কাজ শেষের দাবি জানিয়েছেন অনেকে। তিনি বলেন, “অনেকে জানতে চেয়েছেন তবে বিষয়টি পুরোপুরি এইচডিএ-এর আওতাভুক্ত । আমিও চাই যাতে জবরদখল উঠে সুষ্ঠুভাবে সবাই ব্যবসা করতে পারেন।” একই বক্তব্য হলদিয়া পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তথা ওই এলাকার নাগরিক নারায়ণ প্রামাণিকেরও।
অন্য দিকে, এইচডিএ-এর সিইও পি উলগানাথনের বক্তব্য, “আমি নতুন আসায় পুরো বিষয়টি ঠিক জানা নেই। তবে এ রকম হয়ে থাকলে আমরা পদক্ষেপ করব।” এইচডিএ-এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র তড়িৎ পাল বলেন, “আমরা জানি দোকানগুলির কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পূর্ত দফতরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে বলে শুনেছি। চেষ্টা করব সমস্যা সমাধানের।” একই ভাবে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র শঙ্করনারায়ণ সাহার বক্তব্য, “এইচডিএ জানালে আমি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”
আলাপ-আলোচনার পর্ব শেষে কবে যে ফের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ খুলবেসে নিয়ে সংশয় কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|