এরনান ক্রেস্পো ইতিমধ্যেই ভারতে খেলার জন্য সইসাবুদ সেরে ফেলেছেন।
কানাভারো, পিরেস, ফাউলার, ওকোচার মতো তারকারা বিশ্ব ফুটবলে প্রথমবার নিলামে উঠে উত্তেজিত। কেউ টুইট করছেন, কেউ কাগজে কাগজে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।
ফ্রান্স থেকে রবার্ট পিরেসের স্ত্রী বিখ্যাত টি ভি প্রযোজক জেসিকা মেল পাঠিয়েছেন পি এল এস কর্তাদের। একটি তথ্যচিত্র তৈরির অনুমতি চেয়ে। পিরেসের চোখ দিয়ে ভারতের ফুটবল ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে চান তিনি। ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশে। একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে।
বিশ্বের বিভিন্ন কাগজ, ওয়েবসাইটে লেখা হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ সকার ভারতীয় ফুটবলের নতুন দিক উন্মেচিত করে দেবে।
৬ ফেব্রুয়ারি ছয়টি ফ্রাঞ্চাইজির সঙ্গে বসে সূচি-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সভা ডেকে দিয়েছে আই এফ এ। ফ্ল্যাগ-পোস্টার-জার্সি, থিম-সং তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞাপন থেকে চিয়ার গার্ল, নাচ-গানের আয়োজন চলছে জোর কদমে।
অথচ ১৫০ কোটির আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট নিয়ে ফেডারেশন বনাম আই এফ এ বিরোধ বুধবার তুঙ্গে উঠেছে। চিঠি-পাল্টা চিঠির পর শুরু হয়েছে বিবৃতির লড়াইও।
টুনার্মেন্টের নাম বদলাতে হবে, কোনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দিয়ে টুর্নামেন্ট করানো যাবে না জানিয়ে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছিল ফেডারেশন। বলা হয়েছিল, কেন সেলিব্রিটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের নাম বেশি লিখছে মিডিয়া? বুধবার দিল্লি থেকে ফেডারেশন সচিব কুশল দাস ফোনে আরও এক কদম এগিয়ে বলে দিলেন, “টিমগুলোকে আই এফ এ-তে নথিভুক্ত করা হয়নি। টুর্নামেন্টের নাম বদলাতে হবে। টিমগুলিকে আরও অনেক নিয়ম মানতে হবে পি এল এস করতে হলে। আমরা জরুরি সভা ডেকেছি সেখানে সব কিছু নিয়ে আলোচনা হবে। তার পর তো টুর্নামেন্ট।” আর তা শুনে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিলেন, “ভেবেছিলাম ফুটবলের উন্নতির কথা ভেবে ফেডারেশন আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু উল্টে তারা নানাভাবে বাগড়া দিচ্ছে। সব নিয়মকানুন মেনেই টুর্নামেন্ট হবে। সি এম জি তো আমাদের কমার্শিয়াল পার্টনার।” ক্ষুব্ধ আই এফ এ সচিবের কথায়, “পি এল এস হবেই। ক্লাবগুলো ফিফায় ট্রান্সফার ম্যাচিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের নথিভুক্তি করেই রেখেছে। পাসওয়ার্ডও পেয়েছে। সে জন্যই তো ক্রেস্পোদের সই করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। আই এফ এ-ও খেলার জন্য যা দরকার করে দেবে। ফেডারেশন চিঠি দিয়েছিল, উত্তর দিয়ে দিয়েছি।”
খেলার মাঠে সর্বভারতীয় সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সংস্থার বিরোধ নতুন নয়।
ক্রিকেটে শরদ পাওয়ার বনাম জগমোহন ডালমিয়ার বিরোধ একসময় তীব্র আকার নিয়েছিল।
টেবল টেনিসে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের জেরে তিন টুকরো হয়ে গেছে রাজ্য সংস্থাই। তিন গোষ্ঠীর কর্তাদের মুখ দেখাদেখিই নেই এখন।
পি এল এসকে কেন্দ্র করে রাজ্য সংস্থা ও জাতীয় সংস্থার ঝামেলা নতুন মাত্রা পেয়েছে বাংলায় দুটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরে। আই এফ এ কর্তাদের অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই টুর্নামেন্ট করছে এআইএফএফ।
ঝামেলা শুরু হয়েছে শিলিগুড়ির জাতীয় যুব ফুটবল থেকেই। এর আগে বাংলায় কোনও টুর্নামেন্ট করতে হলে আই এফ এ-র মাধ্যমেই তা করত ফেডারশন। আই এফ এ-ই স্টেডিয়াম ঠিক করত। ফেডারেশন আবার এখন সরাসরি ম্যাচ করতে চাইছে। আগে অনেক রাজ্য সংস্থা টাকার নয়ছয় করেছে বলে। এ বার ফেডারেশন সরাসরি শিলিগুড়িকে বেছে নিয়ে সেখানে বি সি রায় ট্রফি শুরু করেছে। কল্যাণীর ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। ক্ষুব্ধ উৎপলবাবু বললেন, “টুর্নামেন্ট যে ওখানে করা হবে সেটা তো ফেডারেশন জানায়নি। ফেডারেশন নিজেরাই শিলিগুড়ি এবং কল্যাণীকে বেছেছে। যা কখনও হয়নি। কাজ করার জন্য শিলিগুড়িতে তিন জন লোক চায় ওরা। আমরা পাঠাইনি। বলে দিয়েছি জেলা থেকে নিয়ে নিন। কল্যাণীতেও আমাদের কেউ যায়নি।”
উত্তেজিত আই এফ এ সচিব যোগ করলেন, “আমাদের কাছে আইন ছিল। জেলাগুলোর অনুমোদন বাতিল করে টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দিতে পারতাম আমরা। কিন্তু করিনি। কারণ এতে বাংলার ফুটবলের ক্ষতি হত। ফুটবল আগে, ইগো নয়। তারপরও পি এল এস নিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে।” ফেডারেশন সচিব কুশলবাবু অবশ্য আই এফ এ-র দাবি মানতে নারাজ। বললেন, “সব কিছু ওদের জানিয়েই করা হয়েছে। ওরা ঠিক বলছে না।” উৎপলবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “আমরা যে ওখানে টুর্নামেন্ট করতে সম্মতি দিয়েছি এই চিঠি দেখাক।”
কুশল বনাম উৎপল লড়াইয়ে এসে পড়েছে সুব্রত দত্তের নামও। যিনি একই সঙ্গে ফেডারেশন এবং আইএফএ দুই সংস্থারই ভাইস প্রেসিডেন্ট। দুই সংস্থাতেই যখন বড় পদে আছেন, তখন আপনি ঝামেলা মেটাতে পারছেন না কেন.? সুব্রতবাবুর জবাব, “ফেডারেশন থেকে পি এল এসের অনুমতি তো আমিই এনে দিয়েছি। চাই এই টুর্নামেন্ট হোক। এতে ফুটবলের প্রচুর উন্নতি হবে। আমি আগে বাংলার, পরে ভারতের। তবে চাইব না পেরেন্ট বডি ফেডারেশনের সঙ্গে আইএফএ- র কোনও ভুল বোঝাবুঝি হোক। সভায় সেটা মেটানোর জন্য আমি উদ্যোগী হব।” বলেন দুই সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ঝামেলা না মিটলে পি এল এসের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় মুছছে না। |