ঝাড়খণ্ড থেকে ঢুকে পড়া হাতির হামলায় জখম হলেন এক প্রৌঢ়া। বুধবার ভোরে বাঘমুণ্ডির সুইসা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। বন দফতর জানিয়েছে, জখম প্রৌঢ়ার নাম শান্তি ভকত। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে রাঁচির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরুলিয়ার ডিএফও অজয় দাস বলেন, “ঝাড়খণ্ডের দলছুট একটি হাতি বাঘমুণ্ডিতে এসে হামলা চালিয়েছে। হাতিটির উপরে বনকর্মীরা নজর রেখেছেন। জখম প্রৌঢ়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” অন্য দিকে বাঁকুড়ার জয়পুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় দলমার হাতির পাল জমির ফসল নষ্ট করায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়ে চলেছে।
পুরুলিয়ার বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে প্রাতঃকৃত্য করতে গিয়েছিলেন শান্তিদেবী। সেই সময় তিনি হাতিটির সামনে পড়ে যান। হাতিটি তাঁকে আক্রমণ করে। পরে বাসিন্দারা ওই প্রৌঢ়াকে উদ্ধার করেন। বাঘমুণ্ডির রেঞ্জ অফিসার পঞ্চানন শীট বলেন, “হাতিটি বাঘমুণ্ডির দুয়ারসিনির জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। তাকে ঝাড়খণ্ডে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” বাঁকুড়ায় ঢুকে পড়া ১৫০টি হাতিকে দলমামুখী করতে বন দফতরেরও নাজেহাল অবস্থা। হাতিরা বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ায় বনকর্মীরা সমস্যায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার রাতে জয়পুর রেঞ্জের কুচিয়াকোল পঞ্চায়েতের কাশীপুর, মাধববাটি, চুনিশোল গ্রামে এক পাল হাটি ঢুকে আলু খেতে তাণ্ডব চালায়। আতঙ্কে বাসিন্দাদের অনেকে সারা রাত ঘরের দরজা আটকে জেগে থাকেন। বুধবার সকালে তছনছ আলুর খেত দেখে অনেকে মুষড়ে পড়েন। অনেক বাড়িতে এ দিন রান্নাও চড়েনি। |
কাশীপুরের সনাতন মহাদণ্ডের ক্ষোভ, “ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু হাতির পাল অলুর পুরো খেত নষ্ট করে দিয়েছে। এ বার সংসার চালাব কী করে? ঋণ মেটাব কী ভাবে?” তাঁর বাড়িতে এ দিন রান্না হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “হাতিরা আমাদের সর্বনাশ করলেও বন কর্মীদের দেখা মিলছে না।” একই অভিযোগ ওই গ্রামের মদন মহাদণ্ডেরও। তিনি বলেন, “হাতিরা আমাদের গ্রামের বিঘার পর বিঘা জমির আলু নষ্ট করেছে। গ্রামে তাই শোক নেমে এসেছে। ঘরে ঘরে অরন্ধন চলছে।” জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার স্বপন ঘটক বলেন, “বাঁকাদহ থেকে হঠাৎ হাতির পাল ওই গ্রামগুলিতে ঢুকে আলু খুঁড়ে খেয়েছে। আমরা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবচ্ছি।” তিনি জানান, হাতিদের রুখে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের আমাদের সঙ্গে আসতে বলছি। আমরা হুলা, তেল দেব।” বাঁকাদহ রেঞ্জ আধিকারিক বলাই ঘোষ বলেন, “জয়পুরে বেশ কয়েকটি হাতি গিয়েছে। তাদের একটি অংশ পশ্চিম মেদিনীপুরের পথ ধরেছে।”
এ দিকে বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় ও সোনামুখীতে বাকি ১০০টি হাতি বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে বড়জোড়ার কমলাগ্রামে একটি মাটির ঘর তারা ভেঙেছে। হরিরামপুর ও হাটআশুরিয়ায় খেতের ফসল নষ্ট করেছে। বড়জোড়ার রেঞ্জ অফিসার সৌমেন মণ্ডল বলেন, “এখানে কয়েকটি বাচ্চা নিয়ে প্রায় ১৫টি হাতি রয়েছে। তারাই হামলা চালাচ্ছে। তাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |