দলের মধ্যে কোন্দল কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে মঙ্গলবার সকালে চুঁচুড়ায় এসে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টেপাধ্যায়। তিনি দলের তরফে হুগলি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও। পার্থবাবুর ওই হুঁশিয়ারির পরেও ওই রাতেই একটি মেলায় বোমাবাজি-ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরামবাগে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল।
আরামবাগের গৌরহাটি মৌজার ডিহিপুকুরে রবিবার থেকে চার দিনের একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন দলীয় নেতা নইমুল হক ওরফে রাঙ্গার নেতৃত্বে তাঁর অনুগামীরা মেলায় ঢুকে যথেচ্ছ বোমাবাজি, স্টল ভাঙচুর এবং লুঠপাট করে বলে অভিযোগ তুলেছেন মেলা কমিটির সম্পাদক তথা ওই এলাকারই আর এক তৃণমূল নেতা সাহাজামাল মল্লিক ওরফে লাল্টু। মেলা কমিটির কয়েক জন প্রতিবাদ করলে তাঁদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। রাতেই ঘটনাস্থলে আরামবাগ এবং খানাকুল থানার পুলিশ যায়। পুলিশ জানায়, বোমাবাজিতে কেউ জখম হননি। তবে, আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মেলায় আসা সাধারণ মানুষ।
বুধবার আরামবাগ থানায় নইমুল ও তাঁর ১৫ জন অনুগামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সাহাজামাল মল্লিক। তিনি বলেন, “কী কারণে ওরা হামলা চালাল কিছুই বুঝতে পারলাম না। বোমাবাজি করতে করতে ওরা মেলায় ঢোকে। মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা কী চায়, জানতে গেলে কমিটির কয়েক জনকে পেটায় এবং বেশ কিছু স্টল ভাঙচুর করে মালপত্র লুঠ করে পালায়। গোটা বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, মেলায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ চেয়েও পাওয়া যায়নি।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নইমুল। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি মেলায় যাননি। তিনি বলেন, “অযথা ওই ঘটনার পিছনে দলকে জড়ানো হচ্ছে। মেলায় জুয়া ও মদের ঠেক চলছিল। গ্রামের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষ ওই সব ঠেক ভাঙতে গিয়েছিলেন। মেলা কমিটির লোকজন তাতে বাধা দেন। ধাক্কাধাক্কি হয়। এর বেশি কিছু হয়নি। বোমাবাজি, লুঠপাটের মিথ্যা গল্প বলা হচ্ছে।” মেলায় জুয়া বা মদের ঠেক চলার অভিযোগ মানতে চাননি সাহাজামাল। তাঁর দাবি, “মেলায় ওই জাতীয় কোনও ঠেক ছিল না। ওই রকম ঠেক যাতে না চলে তার জন্য আগেভাগেই প্রচার চালানো হয়েছিল।” গোটা ঘটনার প্রসঙ্গে খানাকুলের তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ বলেন, “মেলায় ওই অশান্তিতে মানুষের কাছে খারাপ বার্তা গিয়েছে। কোনও অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে নেওয়া যাবে না বলে দলনেত্রীর নির্দেশ। জুয়া-মদের ঠেক ভাঙার জন্য পুলিশ আছে। আমাদের কাজ পুলিশকে খবর দেওয়া।” আরামবাগ থানাসূত্রে জানানো হয়েছে, মেলায় পুলিশ মোতায়েন চেয়ে কোনও লিখিত আবেদন করা হয়নি। তবে মেলায় পুলিশ টহল ছিল। অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। |