ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টগুলিকে (আই আই এম) কিছুটা স্বশাসন দিতে সম্মত হইয়াছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এই মর্মে দেশের পাঁচটি আই আই এমের পরিচালকমণ্ডলীর প্রস্তাব মন্ত্রক অনুমোদন করিয়াছে। ইহার ফলে অতঃপর ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলির পরিচালক ও সভাপতিদের নিয়োগের পদ্ধতিটি মসৃণতর ও দ্রুততর হইবে এবং তাহাতে সংস্থাগুলিরও ভূমিকা থাকিবে। এত কাল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীই একতরফা ভাবে এই সব নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত লইতেন। শুধু তাহাই নহে, সংস্থাগুলি অপেক্ষাকৃত স্বাধীন ভাবে সম্পত্তি ক্রয় ও বিক্রয় করিতে পারিবে, বিদেশে সংস্থার শাখা খুলিতে পারিবে, বিদেশ হইতে কৃতবিদ্য অধ্যাপকদের আনাইয়া শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের পাঠ দিতে পারিবে। এই সকল কাজে আই আই এমগুলির বিশেষ স্বাধীনতা ছিল না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকই প্রতি পদে ছড়ি ঘুরাইত। এখন আগের তুলনায় বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করা সম্ভব হইবে।
আই আই এমগুলি এ দেশের উচ্চ মানের ম্যানেজমেন্ট পাঠের কেন্দ্র। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য উপরের দিকের সেরা ছাত্ররাই সচরাচর এই সব কেন্দ্রে পড়িতে যান। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে এখানকার স্নাতকোত্তর ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখ্য। বিদেশেও বহুজাতিক বিভিন্ন নামী কোম্পানির পরিচালকের পদে তাঁহারা নিয়মিত নিযুক্ত হইয়া আসিতেছেন। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক যেহেতু এই সংস্থাগুলিকে অনুদান দিয়া থাকে, তাই সংস্থা পরিচালনার প্রতিটি বিষয়ই মন্ত্রক নিয়ন্ত্রণ করিয়া আসিয়াছে। এই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করিয়া সংস্থাগুলিকে স্বশাসন দিবার দাবি দীর্ঘ দিনের। সেই দাবিকেই অংশত স্বীকৃতি জানানো হইয়াছে মন্ত্রকের সিদ্ধান্তে। ইহা যথেষ্ট নয়। এখনও সংস্থা-পরিচালনার অনেক বিষয়ই রহিয়াছে, যেগুলিতে স্বশাসন জরুরি। তবু পদ্ধতিগত সংস্কার ক্রমে নীতিগত সংস্কারে রূপান্তরিত হইবে, ইহাই প্রত্যাশা। বিশ্বায়নের ভুবনে আজ-না-হউক কাল উদারনৈতিক সংস্কারের প্রবক্তাদের ওই পথে হাঁটিতেই হইবে। প্রথম ইউ পি এ সরকারের জমানায় অর্জুন সিংহের মন্ত্রিত্ব সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটিয়া আই আই টি-র ন্যায় আই আই এমের মতো উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতেও মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অনগ্রসরদের জন্য কোটা সংরক্ষণের রাজনীতির প্রবর্তন করিয়াছিল। তাহাতে যে গুণমানের অবনমনের সম্ভাবনার সঙ্গেই আপস করা হয়, সেই সত্য অগ্রাহ্য করিয়া লোকপ্রিয়তার রাজনীতিকে উৎকর্ষের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। উচ্চ শিক্ষার অঙ্গন হইতে এই বিকৃতিও দূর করিতে হইবে।
উদারীকরণের যুগে আই আই এমগুলিকেও বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষণ কেন্দ্রগুলির সহিত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হইতে হয়। দেশীয় সংস্থাগুলির সহিত বিদেশের অগ্রণী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও। প্রতিযোগিতা কেবল শ্রেষ্ঠ পড়ুয়াদের আকৃষ্ট করার নয়, উপরন্তু শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অধ্যাপনায় আকর্ষণ করারও। সেই প্রতিযোগিতায় সাফল্য চাহিলে সংস্থার পরিচালনায় রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ দূর করা জরুরি। ‘টাকা দিতেছি, অতএব আমার কথা শুনিয়া চলিতে হইবে’ মনোভাব সেই স্বাধীনতা মঞ্জুর করে না। স্বাধীনতা হীনতায় সংস্থার মান উন্নয়নেও পরিচালকদের কোনও তাগিদ থাকে না। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে তাই উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের মতো তহবিল সংগ্রহ, প্রশিক্ষক-পরিচালক নিয়োগ, ছাত্র-ভর্তি করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বশাসন দিতে হইবে। সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি যদি সেই পথেই একটি দ্বিধাগ্রস্ত পদক্ষেপও হয়, তবে তাহা স্বাগত। |