সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্রের অপমৃত্যু
রাজনীতির অপার মহিমা। কোলের শিশুটির মৃত্যুতে আর্তনাদ করিলেও শুনিতে হয়, ওই স্বর রাজনৈতিক চক্রান্ত-প্রসূত। সন্তানের মৃত্যুতে যাঁহারা ক্ষোভ প্রকাশ করিতেছেন তাঁহারা মূর্খ, যাঁহারা কারণ তল্লাশ করিতেছেন তাঁহারা বিরোধী, যাঁহারা প্রতিকার চাহিতেছেন তাঁহারা রাষ্ট্রদ্রোহী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুলিয়াছেন, বি সি রায় হাসপাতালে শিশুমৃত্যু ঘটিলে তাঁহাদের দল হাসপাতাল অচল করিয়া দিয়াছে বহু বার। আজ সরকারি কুর্সিতে বসিবামাত্র তাঁহাদের বোধোদয় হইয়াছে, ওই শিশুগুলি মরিতই। উহাদের বাঁচিবার সম্ভাবনা ছিল কি না, কী করিলে উহারা বাঁচিতে পারিত, সে প্রশ্ন করিলেও তাঁহারা ধমকাইতেছেন। তীব্র তিক্ততায় মনে হইতে পারে, ওই শিশুগুলি মরিয়া বাঁচিয়াছে, একটি শিশুর জীবনকে যে রাজ্যে একটি পরিসংখ্যান বলিয়া দেখা হয় সে রাজ্যে প্রাণ ধারণ করিয়া কী লাভ? বরং বাবা-মায়েরা অশ্রুসংবরণ করিয়া আশায় বুক বাঁধিয়া থাকুন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলিয়াছেন, রাজ্যের শিশুমৃত্যুর সূচক তিন বিন্দু কমিয়াছে, আগামী বছর তাহার তথ্য-প্রমাণ মিলিবে। এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখিবার পরেও বিনা চিকিৎসায় সন্তানের মৃত্যুতে কাঁদিবার কী যুক্তি থাকিতে পারে? আমাদের নেতারা ভুলিয়াছেন, প্রতিটি জীবন অমূল্য, তাই প্রতিটি মৃত্যু অনুসন্ধান দাবি করে। হাসপাতালে আনা সত্ত্বেও শিশুটি কেন মরিল, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাহার উত্তর দিতে হইবে।
সংবাদমাধ্যমে গত কয়েক দিনে মন্ত্রীদের যে সকল বক্তব্য প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা ভয়ানক। সুদীপবাবু বলিয়াছেন, হাসপাতালে শিশুমৃত্যু লইয়া অহেতুক শোরগোল করা হইতেছে, কারণ এ রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। ইহাতে স্পষ্ট হয়, সুদীপবাবু পরিসংখ্যানের অর্থ উদ্ধার করিতে অক্ষম। শিশুমৃত্যু হ্রাসের বহু কারণ রহিয়াছে। পুষ্টি, টিকাকরণ, রাস্তা-পরিবহণ প্রভৃতির উন্নতি, মায়ের শিক্ষার হারে বৃদ্ধি, এই সকল কারণেই শিশুমৃত্যু কমিতে পারে। উন্নত চিকিৎসার কারণেই শিশুমৃত্যু কমিয়াছে, এমন অনুমান অনুমানমাত্র। অপর দিকে, চিকিৎসার পরিণামই চিকিৎসা ব্যবস্থার মান বুঝিবার একমাত্র পরিমাপ নহে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষের প্রয়োজনের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল এবং তৎপর কি না, তাহা সেই ব্যবস্থার উৎকর্ষের তিনটি সূচকের একটি। বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, এ রাজ্যে সেই পরিমাপে হাসপাতালগুলি আদৌ ভাল ফল করে নাই। হাসপাতাল সাধারণ নাগরিকের নিকট আশ্বাসস্থল না হইয়া আশঙ্কাস্থল হইয়া উঠিয়াছে।
অতিরিক্ত রোগীর চাপেই যদি যথাযথ চিকিৎসা অসম্ভব হইয়া উঠিয়া থাকে, তাহা হইলে এত বৎসরেও কেন সেই ভিড় কমাইবার ব্যবস্থা করা হয় নাই? চাপ কমাইবার কাজটি কাহার, সে কী করিতেছে? যদি হাজারে ৩১টি শিশুমৃত্যু কমিয়া আসে হাজারে ২৮টিতে, তাহা হইলে কি আর প্রশ্ন করিবার প্রয়োজন নাই যে, ওই ২৮টি শিশু কেন প্রাণ হারাইল? কেরলে যদি ১০টির অধিক মৃত্যু না হয়, এ রাজ্যে বাড়তি ১৮টি মৃত্যু হইবে কেন? কেনই বা কেরলকে পিছনে ফেলিয়া আগাইয়া যাইবার সঙ্কল্প করিবে না পশ্চিমবঙ্গ? এই প্রশ্নগুলির উত্তর না খুঁজিয়া, কখনও অভিভাবকের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা, কখনও চিকিৎসকের অপারগতার অজুহাত দেখাইতেছেন রাজনৈতিক নেতারা। ইহা ভাল চিকিৎসার উপায় নহে, ইহা ভাল রাজনীতিও নহে। জনসাধারণের প্রয়োজন-প্রত্যাশা নেতাদের নাড়িতে স্পন্দিত হইবার কথা। তাঁহারাই আজ সন্তানহারা পিতামাতাকে অপমান করিতেছেন। ইহা গণতন্ত্রের অপমৃত্যু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.