|
|
|
|
গণমঞ্চ গড়ে দলের ভিত বাড়ানোর দাওয়াই কারাটের |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
সিপিএমেরই ‘খোলস’ থেকে সিপিএমকে বার করে আনতে চাইছেন প্রকাশ কারাট।
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক এখন তিন রাজ্যের বাইরে দলের প্রভাব ছড়াতে মরিয়া। এই ক্ষেত্রে তাঁর নতুন দাওয়াই হল, দলকে তার নিজস্ব রাজনৈতিক গণ্ডি থেকে বার করে আনা। কারাট চাইছেন, দলিত বা আদিবাসীদের কাছে টানতে দলের বাইরে তৈরি হোক পৃথক মঞ্চ বা সংগঠন। দলের বাইরে সেই মঞ্চ থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন হলে, সেখানে অন্য রাজনৈতিক চিন্তাধারার মানুষকেও একই ছাতার তলায় নিয়ে আসা যাবে। যার ফলে যে সব এলাকায় সিপিএমের কোনও অস্তিত্ব নেই, সেখানেও ‘ধীরে ধীরে’ শিকড় ছড়ানো যাবে বলে মনে করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলে সেই দিশানির্দেশই থাকছে।
জাতপাতের রাজনীতির সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে হিন্দি বলয়ে হালে পানি পাচ্ছে না সিপিএম। জাতপাতের ভিত্তিতে ভেদাভেদ বা অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সিপিএমের লড়াইয়ের ডাকও পুরনো গল্প। এই পরিস্থিতিতে শুধু বাম সমর্থকদের নিয়ে আন্দোলন করে যে উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে ঢেউ তোলা যাবে না, তা বুঝতে পেরেই এ বার বৃহত্তর মঞ্চ তৈরির ডাক দিচ্ছেন কারাট। তাঁর বক্তব্য, সিপিএমের পক্ষে জাতপাতের বা আত্মপরিচয়ের রাজনীতি করা সম্ভব না হলেও দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুর মতো বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়েও দলকে সরব হতে হবে। কিন্তু প্রথমেই শ্রেণি সংগ্রামের তত্ত্ব বোঝাতে গেলে তাঁরা উল্টো মুখে হাঁটা দেবেন। এই ‘উভয় সঙ্কট’-এ কারাটের দাওয়াই হল, দলের বাইরে পৃথক মঞ্চ তৈরি করা।
এ কে গোপালন ভবনের নেতারা বলছেন, ‘আদিবাসী অধিকার রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’ আদিবাসীদের নিজস্ব সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করায় দলের বাইরের লোকদেরও টেনে আনা গিয়েছে। যদিও ওই মঞ্চের নেতৃত্বে কিন্তু রয়েছেন বৃন্দা কারাট, বাজুবন রিয়াংয়ের মতো সিপিএম নেতারাই। একই ভাবে তামিলনাড়ুতে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী ফ্রন্টের আন্দোলন এবং হরিয়ানায় খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে মহিলা সংগঠনের লড়াই সাড়া ফেলেছে।
রাজনৈতিক দলিলে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই সূত্রে। “মনমোহন সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সেখানে সিটু-এআইটিইউসি-র সঙ্গে একই ছাতার তলায় জড়ো হয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির শ্রমিক সংগঠনও।” কিন্তু দলেই কারাট-বিরোধীদের প্রশ্ন, পৃথক মঞ্চ গড়ে আন্দোলন করলেই কি সিপিএমের ভোট বাড়বে? যৌথ আন্দোলনে থাকলেও কংগ্রেসি ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা কি সিপিএমকে ভোট দেবেন? একমাত্র রাজস্থানে জল ও বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনের নির্বাচনী সুফল পেয়েছে সিপিএম। কিন্তু ২০০৮-এ কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হওয়া রণকৌশলের পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনেক জায়গাতেই আন্দোলন গড়ে তুলেও তার প্রভাব ধরে রাখতে পারেনি দল। এই ক্ষেত্রে কারাট শিবিরের জবাব, আন্দোলনকারীদের মধ্যে গণসংগঠন কাজ করতে না পারার ফলেই এমনটা ঘটেছে।
যদিও উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসলে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কাজ করতে নেমেও কৃষক সভা যে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি, সেই উদাহরণও রয়েছে। ফলে কারাটের এই নতুন রণকৌশল নিয়েও সংশয় থেকেই যাচ্ছে দলে। |
|
|
|
|
|