স্টিফেন কোর্ট দেখেছে এ শহর। আগুন বাড়ির ছ’তলায় আটকে পড়া মানুষগুলোকে নামিয়ে আনতে সে দিন দমকল পৌঁছেছিল জাল বা জাম্পিং কুশন ছাড়াই। ৪৩টি প্রাণের বিনিময়ে সরঞ্জামের ব্যবস্থা, নানা প্রশিক্ষণের পরে মাস কয়েক আগে উল্টোডাঙার পুলিশ আবাসনের সাত তলায় আটকে পড়া একটি কুকুরকে নামাতেও জাল ছাড়াই হাজির হন দমকলকর্মীরা। সাততলা থেকে পড়ে মেরুদণ্ড ভাঙে সেই কুকুরের। কিন্তু একের পর এক ঘটনাতেও দমকলের যে ‘চৈতন্য’ হয়নি, বুধবার তা ফের দেখল কলকাতা।
এ দিন দুপুরে ঠাকুরপুকুরের একটি বহুতলের ১৩ তলার ল্যান্ডিংয়ে উঠে যান স্থানীয় বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর অভিজিৎ বিশ্বাস। ল্যান্ডিংয়ের কাচ ভেঙে শরীর বাইরে বার করে দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন অনেকটা ‘শোলে’ ছবিতে জলের ট্যাঙ্কে উঠে ‘ছুছাইড, ছুছাইড’ (সুইসাইড) বলা দৃশ্যের মতো। এক হাতে গ্রিল ধরে শরীর ঝুঁকিয়ে দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে অন্য হাতে মোবাইল ফোন ধরে তিনি কথা বলছিলেন ক্রমাগত। ফোনে কাকুতিমিনতি করেও স্বামীকে নামিয়ে আনতে না পেরে ১০০ ডায়ালে ফোন করেন তাঁর স্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী। লালবাজার থেকে খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। এবং এ বারও জাল ছাড়াই। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রাণ বাঁচাতে একমাত্র বড় ধরনের জালই সাহায্য করতে পারে।
বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি লালবাজার থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের পাঠানো হয় ঠাকুরপুকুরে। পর্বতারোহীদের মতো তাঁরা দড়ির সাহায্যে দ্রুত কোনও বহুতলে উঠে যেতে পারেন। পুলিশ ও দমকলের কর্মীদের সঙ্গে তাঁরাও উঠে যান বাড়িটির ১৩ তলায়।
এ বারও কেন জাল ছাড়াই পৌঁছে গেল দমকল? দমকল সূত্রে খবর, বেহালা ডিভিশনে একটিও জাম্পিং কুশন নেই। যদিও দমকলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ওই ব্যক্তি যে অবস্থায় ছিলেন, তাতে জাম্পিং কুশন নিয়ে গিয়েও লাভ হত না।”এ দিন শেষমেশ ওই প্রৌঢ় নিজেই নেমে আসেন। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, অভিজিৎবাবু অবসাদে ভুগছেন। কিছু পারিবারিক মনোমালিন্যের সমস্যাও আছে।। |