প্রচারে যতটা তৎপর, প্রয়োগেও কি ততটা?
মোটরবাইক-আরোহীদের হেলমেট পরার উপরে পুলিশি নজরদারির শিথিলতা তুলে দিল এই প্রশ্ন। কারণ অভিযোগ উঠেছে, হেলমেট না-পরে চালানোর প্রবণতা তো আছেই, সেই সঙ্গে পথেঘাটে যে ধরনের হেলমেট পরে যাতায়াত করেন চালক বা আরোহীরা, সেগুলো আইন বাঁচালেও মাথা বাঁচায় না।
হেলমেট না-পরে মোটরবাইকে ‘হিরোগিরি’ রুখতে নিত্যনতুন অভিনব ছড়ায় প্রচার কিংবা হেলমেটহীন চালক বা আরোহীকে ধরপাকড় করে পুলিশ। কিন্তু ‘নিয়ম মেনে’ হেলমেট পরলেও অনেক ক্ষেত্রেই, বিশেষত ছোট-বড় দুর্ঘটনার পরে দেখা যায়, ‘যথাযথ মান’ (‘আইএসআই’ লোগোযুক্ত)-এর হেলমেট নেই মোটরবাইক চালক বা আরোহী কারও মাথাতেই। মঙ্গলবার রাতে মধ্য কলকাতায় মোটরবাইক-লরির সংঘর্ষে এক বাইকচালকের আহত হওয়ার ঘটনার পরে আরও একবার চোখে পড়েছে এই ‘উপযুক্ত মান’-এর হেলমেট না পরার বিষয়টি।
ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের দাবি, এ ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে চালক-আরোহীদের ‘অসচেতনতা’ই মূল কারণ। কিন্তু বাইক-আরোহীদের যথাযথ মানের হেলমেট না পরার অর্থ তো ‘সতর্কতার বাণী’ সত্ত্বেও সে সব হেলমেট বাজারে বিকোচ্ছে এবং ক্রেতারাও কিনছেন। পুলিশি নজরদারি ঢিলেঢালা না-হলে যা সম্ভব নয়। পুলিশেরই একটা বড় অংশের অভিমত, সবার আগে হেলমেট পরার উপরেই জোর দেওয়া প্রয়োজন। তা না-হলে কে কেমন হেলমেট পরছেন, সেই প্রশ্নটাও অনেকটাই অর্থহীন হয়ে যায়। |
কিন্তু কী করে ‘আইএসআই’ লোগোহীন হেলমেট বিক্রি হয় বাজারে? পুলিশের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ‘ট্রেডমার্ক’ আইনে সেই সব হেলমেট-বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ‘এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ’ (ইবি)। বাজেয়াপ্ত হয় ওই ধরনের হেলমেট। পুলিশ থেকে শুরু করে খোদ বাইকচালক-আরোহী বা হেলমেটবিক্রেতা সকলেরই দাবি, আগের তুলনায় ‘আইএসআই’ লোগোযুক্ত হেলমেট পরার ‘প্রবণতা’ বেড়েছে। তবে হেলমেট না-পরা বা ‘যথাযথ’ হেলমেট না-পরার এই ছবির বিষয়ে সব পক্ষই কম-বেশি স্বীকার করেন, ‘সচেতনতা’র স্বার্থে আরও প্রচার দরকার।
বুধবারও ওয়েলিংটন চত্বরের দোকানির সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানা গেল, ‘আইএসআই’ লোগোযুক্ত হেলমেটের বিক্রি বাড়লেও ‘অসচেতনতা’ কাটেনি। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড সংলগ্ন ফুটপাথের দোকানি পবিত্র চৌধুরীর কথায়, “১৯৮১ সাল থেকে ব্যবসা করছি। বেশির ভাগ খদ্দের এখন ‘আইএসআই’ লোগো রয়েছে, এমন হেলমেটই চান। কিন্তু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এসে সস্তার হেলমেটের জন্য আবদার করেন।” দোকানিদের অভিজ্ঞতা বলছে, “আমরা সাধারণত ‘আইএসআই’ লোগোযুক্ত হেলমেট কেনার কথাই বলি। কিন্তু ৫০-৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাইক কেনার পরেও অনেককে বলতে শুনি, ‘আরে, চড়ব তো আমি! ৫০ টাকার হেলমেটটাই দেখান’।” ‘ফুল মাস্ক’ বা মুখ-ঢাকা হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে যে এখনও চালকদের একাংশের ‘অনীহা’ রয়ে দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। যে অনীহার শিকড় আসলে ‘অসচেতনতা’য়। যে সব হেলমেট পরে আদৌ বাইক চালানো উচিতই নয়, সে সব কেনার ‘আগ্রহ’ও ওই ‘অসচেতনতা’ থেকেই।
কিন্তু চালক-আরোহীদের এই মনোভাবের ব্যাপারে কী বলছে পুলিশ?কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সচেতনতা বাড়ানোর জন্য যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কলকাতা শহরে তার প্রভাব আগের তুলনায় অনেক ভাল। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই, প্রচার যত বেশি হবে, তত বাড়বে চালক-আরোহীর সচেতনতা। তবে হেলমেট না-পরা এবং ‘আইএসআই’ লোগোহীন হেলমেট পরা দু’টি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কলকাতা শহরে ধারাবাহিক ভাবে কেসের সংখ্যা কমছে। অর্থাৎ এই দু’টি ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে অগ্রগতি ভালই হচ্ছে।” তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতা পুলিশের আওতায় আসা ‘সংযোজিত’ এলাকায় সেই ‘প্রভাব’ যে এখনও তেমন চোখে পড়েনি, তা মানছেন ডিসি নিজেই। তিনি বলেন, “ওই সব এলাকায় যেহেতু দীর্ঘদিন আইন প্রণয়ন এবং তা মানার কোনও ব্যবস্থা সে ভাবে ছিল না, তাই ওই এলাকার উপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” |