বিনা অনুমতিতে ধর্মঘট ও সরকার-বিরোধী মিটিং-মিছিল-বিক্ষোভের প্রবণতা রুখতে মঙ্গলবার সরকারি কর্মচারীদের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ করার অধিকার বিলোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী। বুধবার সরকারি এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রীও একই সুরে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাজের সময়ে কাজ না-করে বিক্ষোভ দেখালে কর্মীরা ওই
অধিকার হারাতে পারেন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত পাঁচ মন্ত্রীর সামনেই তুমুল স্লোগানের টক্কর চালিয়ে দুই সংগঠন এ দিন বুঝিয়ে দিল, কোনও হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা তারা করছে না। এদের একটি শাসকদল তৃণমূল প্রভাবিত। পরে দুই ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতিও বাকি থাকেনি।
এ দিন খাদ্যভবনে দফতরের নতুন ভবনের শিলান্যাস উপলক্ষ্যে হাজির ছিলেন খ্যদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মঞ্চে ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার আরও তিন সদস্য ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, প্রতিমন্ত্রী
সুনীল তিরকে এবং উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। অনুষ্ঠান চলাকালীন অ-বাম কর্মী সংগঠন ‘নবপর্যায়’ বিক্ষোভ দেখাতে
শুরু করে, সরকারি-আধা সরকারি শূন্যপদে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশের প্রতিবাদে। অন্য দিকে নির্দেশের সমর্থনে
স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল-প্রভাবিত ‘স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (ইউনিফায়েড)’-এর সদস্যেরা। |
চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এবং কাজের সময়ে এ হেন ‘বিশৃঙ্খলা’য় নিজের দলের সমর্থক কর্মীদেরও সামিল হতে দেখে ক্ষুব্ধ খাদ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দেন, “অফিসের সময়ে কর্মসংস্কৃতি না-মেনে মিটিং-মিছিল করলে, সময়মতো অফিসে না-এলে সরকারি কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার হারাতে পারেন।”
কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। কোনও পক্ষই মন্ত্রীর কথায় কর্ণপাত করেনি। বরং বিক্ষোভ-মিছিল চলে আসে অনুষ্ঠান মঞ্চের একশো হাতের মধ্যে। উপরন্তু ‘রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা’ এবং সরকারি-আধা সরকারি পদে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের নির্দেশের প্রতিবাদে এসইউসি-র যুব শাখার মিছিলও খাদ্যভবনে ঢুকে পড়ে। তিন পক্ষের স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে ডুবে যায় মন্ত্রীদের বক্তৃতা। আর মন্ত্রীরা বিদায় নিতেই দুই কর্মী সংগঠনের স্লোগান-যুদ্ধ হাতাহাতিতে গড়ায়। রীতিমতো দক্ষযক্ষ বেধে যায় অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশে।
অন্য চার মন্ত্রীর সামনে নিজের দফতরের কর্মীদের এই কাণ্ড দেখে বিরক্ত জ্যেতিপ্রিয়বাবু পরে বলেন, “ব্যাপারটা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তিনি নেবেন। তবে এ ভাবে চললে সরকারি কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার হারাতে পারেন। সরকারি কর্মীদের নিশ্চয় ইউনিয়ন করার অধিকার আছে। কিন্তু তাঁদের সময়ে আসতে হবে, কাজ করতে হবে। বারোটায় এসে চারটেয় বাড়ি চলে গেলে হবে না।”
সরকারি কর্মীদের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ নিয়ে রাজ্য সরকারের ‘কঠোর’ মনোভাবের কথা মঙ্গলবার মহাকরণে জানিয়ে দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এ দিন খাদ্যমন্ত্রীর গলাতেও একই সুর শুনে তাঁদের দল সমর্থিত ইউনিয়ন কী বলছে?
তৃণমূল-প্রভাবিত ওই ‘স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (ইউনিফায়েড)’-এর রাজ্য সম্পাদক সমীরণ রায় বলেন, “সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে আমাদের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। আমাদের বিশ্বাস, মা-মাটি-মানুষের সরকার কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সিদ্ধান্ত নেবে না।”
এ দিকে যে বিষয়টিকে ঘিরে খাদ্যভবনে এ দিনের বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত, অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগের সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে কর্মীমহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যে যখন বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তখন এর যৌক্তিকতা কী?
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ব্যাখ্যা, “খাদ্য দফতরে প্রচুর কর্মী দরকার। বিশেষত জঙ্গলমহলে অবিলম্বে কর্মী পাঠাতেই হবে। কিন্তু পাবলিক সার্ভিস কমিশন মারফত লোক নিতে হলে আড়াই বছর কেটে যাবে। তাই তিন মাস করে চুক্তির ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।” এই প্রচেষ্টা ‘বানচাল’ করার যে কোনও চেষ্টা তাঁরা রুখবেন বলেও জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। |