|
|
|
|
পুজোয় শব্দ-তাণ্ডব |
টান পড়বে বাজেটে, কালনায় কেনা
হল না আগুন নেভানোর সরঞ্জাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাসা দাহ্য উপকরণ। অথচ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে অধিকাংশ ক্লাবই ছিল উদাসীন। আর গ্রাম-শহর সর্বত্রই ছিল মাইকের শব্দ তাণ্ডব। সরস্বতী পুজো এ ভাবেই কাটল কালনায়।
এই পুজো কালনার সবথেকে বড় উৎসব। কোথাও তিন দিনের। কোথাও আবার চার দিনের। কালনা শহরেই এ বার পুজো শ’খানেকের বেশি। তার মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুজো করেছে মাত্র ৫৩টি ক্লাব। পুজোর সপ্তাহ দু’য়েক আগে কালনা থানা ক্লাবগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক করে। সেখানে আয়োজকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা-সহ সমস্ত ব্যবস্থাই রাখতে হবে মণ্ডপে।
অথচ, উৎসবের দিনগুলিতে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গিয়েছে, সর্বত্রই দাহ্য পদার্থে ঠাসা মণ্ডপ। কাপড়, গামছা থেকে বেতের ঝুড়ি, কুলো, সবই রয়েছে সেখানে। উৎসব উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু নিয়ম কানুনের কোনও তোয়াক্কা করেনি ক্লাবগুলি। বহু ক্লাবেই প্রবেশ পথ ছিল সংকীর্ণ। দমকলের অনুমতি পত্র নিয়ে এলেও অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি অনেকেই। শহরের এমনই একটি ক্লাবের সদস্য অবনী চক্রবর্তীর কথায়, “দমকলের অনুমতি রয়েছে ঠিকই। তবে অগ্নি নির্বাপনের কোনও জিনিসপত্র কেনা হয়নি। ও সব কিনতে গেলে মূল বাজেটে টান পড়ে যাবে।”কেউ কেউ আবার বাড়ির বাথরুম থেকে জলের সরু পাইপ লাইন এনে কোনও মতে নিয়মরক্ষা করেছেন।
আগুন লাগলে নিজেদের মণ্ডপ আর দর্শনার্থীদের কী ভাবে রক্ষা করবেন, এই প্রশ্নে কেউ জানিয়েছেন, দমকলকে খবর দেবেন। আবার কারও জবাব, স্থানীয় পুকুর থেকে জল আনা হবে। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
এ বারই কালনার সরস্বতী পুজোয় উৎসাহ দিতে এগিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। ১২টি পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে পর্যটন দফতর। প্রতিমা, আলো-সহ চারটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়ার জন্য পুজোর দ্বিতীয় দিনে ১৮ সদস্যের একটি বিচারক দল গঠন করে মহকুমা প্রশাসন। বিভিন্ন ক্লাব ঘুরে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার অপ্রতুলতা দেখে বিচারকদের মধ্যে অনেকেই বিরক্ত। দলের সদস্য তথা শিল্পপতি সুশীল মিশ্র বলেন, “আগুন নেভানোর জন্য ক্লাবগুলির বিশেষ ভাবে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। অথচ, সেখানেই তাদের গাফিলতির অন্ত নেই।”
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে দমকলের ভূমিকা নিয়ে। যারা নিয়ম মানে না তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। দমকলের কালনা শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তাদের কর্মী সংখ্যা কম। পুজোর সময় কোথাও আগুন লাগছে কি না তা দেখতেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। ফলে ক্লাবগুলির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা তাঁদের পক্ষে আর সম্ভব হয় না। কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “আগামী বছর বিচারকদের যে দল তৈরি হবে, সেখানে দমকল ও সাধারণ প্রশাসনের প্রতিনিধিদেরও রাখা হবে। তাঁরা নিজেরাই ক্লাবগুলির ত্রুটি বিচ্যুতি দেখবেন।” পাশাপাশি উৎসব উপলক্ষে চার দিন ধরে শব্দ তাণ্ডব চলেছে গ্রাম-শহর সর্বত্র। মাইকের চোঙা থেকে সাউন্ড বক্সের দেখা মিলেছে যত্র তত্র। শহরের এক বাসিন্দা রূপঙ্কর সরকার বলেন, “চার দিকে এত আওয়াজ হচ্ছিল, যে পাশের লোকের কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাবার হার্টের অসুখ আরও বেড়ে গিয়েছে ক’দিনে।” মহকুমাশাসকের আশ্বাস, “বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|