|
|
|
|
অভিজ্ঞতা তিক্ত, সংযত কর্মীরা |
কাজ শুরুর আগে উচ্ছ্বাসে রাজি নয় এমএএমসি |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
কথায় বলে, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
বারবার ঠেকে এই শিক্ষাই হয়েছে তাঁদের। দুর্গাপুরের বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশনের (এমএএমসি) প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের এমনই দাবি। তাই রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দ্রুত কারখানা খুলতে চাওয়ার কথা ঘোষণা করলেও বিশেষ উচ্ছ্বাস নেই এমএএমসি টাউনশিপের বাসিন্দাদের।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনে ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে মাসে কারখানাটি চালু হয়। খনির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি হত এখানে। এক সময় কারখানায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক-কর্মী ছিলেন। পরে নানা কারণে কারখানাটি রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯২ সালে তা বিআইএফআর-এর অধীনে চলে যায়। পরে বিআইএফআর কারখানা বন্ধের সুপারিশ করলে হাইকোর্ট তা অনুমোদন করে। ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল কারখানাটি লিক্যুইডেটরের অধীনে চলে যায়। |
|
এমএএমসি অধিগ্রহণ প্রশ্নে আগ্রহ প্রকাশ করে ২০০৭ সালের ১ জুন তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল), কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) মৌ স্বাক্ষর করে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আবির খেলা শুরু হয়ে যায় টাউনশিপে। বাসিন্দারা উচ্ছ্বাসে ভেসেছিলেন ২০১০ সালের ১১ জুনও। সে দিন কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা দর দিয়ে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায় ওই তিন সংস্থার ‘কনসর্টিয়াম’। আবির মেখে, ব্যান্ড বাজিয়ে, পটকা ফাটিয়ে আনন্দে মেতেছিলেন টাউনশিপের বাসিন্দারা। সে বছরেই ১৮ অগস্ট লিক্যুইডেটরের থেকে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় কনসর্টিয়াম। সে দিনও ফের এক প্রস্থ মাতামাতি হয় টাউনশিপে।
মঙ্গলবার মহাকরণে বিইএমএল-এর চেয়ারম্যানকে দ্রুত কারখানা খোলার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থবাবু। কিন্তু তাতে বিশেষ হেলদোল নেই টাউনশিপে। বাসিন্দারা জানান, ২০০৭ সাল থেকেই তাঁরা ভেবে আসছেন, যে কোনও দিন কারখানা খুলবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর শহরে বিএসিউপি প্রকল্পে নির্মিত আবাসনের উদ্বোধন করতে এসে ঘোষণা করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এ উৎপাদন শুরু হবে। তার পরে কেটে গিয়েছে পুরো এক বছর। তাই শিল্পমন্ত্রীর মঙ্গলবারের ঘোষণা তাঁদের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলেনি। অবনী রায়, নীহাররঞ্জন রায়, সাক্ষীগোপাল হোড়রা বলেন, “আগে কাজের কাজ কিছু হোক। তার পরে না হয় আনন্দ করা যাবে।”
কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য নানা রকম মন্তব্য করেছে। আইএনটিইউসি অনুমোদিত হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিল্পমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। তবে কারখানায় সিআইএসএফ পাহারা বহাল রাখার বিষয়ে বিইএমএলের ভূমিকা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। এক বার সিআইএসএফ চলে গেলে দুষ্কৃতীরা সব সাফ করে দেবে।” তাঁর অভিযোগ, শিল্পমন্ত্রী তিন মাসের মধ্যে কারখানা খোলার কথা ঘোষণা করেছেন। অথচ সিআইএসএফ বহাল থাকবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। বিষয়টি নিয়ে বিইএমএলের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রীকে কথা বলার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এআইটিইউসি অনুমোদিত এমএএমসি শ্রমিক ইউনিউনের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন বিশ্বাস আবার বলেন, “শিল্পমন্ত্রী একটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে কারখানা খোলার ঘোষণা করেছেন। কনসর্টিয়ামের তিনটি সংস্থার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়েছে। কাজেই সব ক’টি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ঘোষণা করলে আমরা নিশ্চিন্ত হতাম।” সিটু নেতা বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর দাবি, “এই কনসর্টিয়াম এখনও এমন কোনও সদর্থক ভূমিকা নেননি, যাতে কারখানা খোলার ব্যাপারে তাঁদের উপরে বিশ্বাস জন্মায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত, সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা।”
কারখানার প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের দাবি, এমএএমসি টাউনশিপে স্কুল, হাসপাতাল, বাজার থেকে শুরু করে স্টাফ ক্লাব, সিনে ক্লাব, সুইমিং ক্লাব, সব কিছু ছিল। নামী শিল্পীদের অনুষ্ঠান, নাটক, যাত্রাপালা ইত্যাদি লেগেই থাকত। স্টাফ ক্লাবের মাঠে কৃশানু দে, বিকাশ পাঁজি, মইদুল ইসলাম, তরুণ দে, কুলজিৎ সিংহদের খেলার কথা এখনও উঠে আসে কর্মীদের স্মৃতিচারণে। সন্ধ্যায় পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখার ব্যবস্থাও ছিল। কারখানা ফের চালু হলেও টাউনশিপের সেই সুদিন ফিরবে কি না, জানা নেই। তবে উৎপাদন শুরু হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি যে বদলে যাবে, সে ব্যাপারে এক মত সব শ্রমিক-কর্মীই। |
|
|
|
|
|