|
|
|
|
চাষের বিপর্যয়ে ফের অভিযোগ আত্মহত্যার |
রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান |
কখনও ধান তো কখনও আলু। চাষে বিপর্যয় ও ফসলের দাম না পাওয়ার জেরে ফের চাষির আত্মহত্যার অভিযোগ উঠল বর্ধমানে।
বর্ধমান শহর থেকে কিলোমিটার বিশেক দূরে বহরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় পাট্টা পাওয়া সামান্য জমিতে খরিফ ধান, আলু এবং বেগুন চাষ করেছিলেন লালু মাঝি (৫০)। পরিবারের অভিযোগ, ধান বিক্রি হয়েছে জলের দরে। টাকার অভাবে আলু চাষে ক্ষতি হয়েছে। বেগুনেরও তেমন
দাম পাননি। ২০-২২ হাজার টাকা মহাজনি ঋণ ছিল। ক্ষতির বহর সামলাতে না পেরে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।
|
লালু মাঝি |
সিপিএম আগাগোড়াই চাষিমৃত্যুর জন্য নতুন সরকারকে দায়ী করে আসছে। বুধবার মেদিনীপুরে প্রকাশ্য সমাবেশে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “গত সাড়ে ৩ মাসে ৩১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম, দিঘায় উৎসব করছেন। নদীবক্ষে যাচ্ছেন!” প্রাক্তন
মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “রাজ্যে ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে। আট মাসেই মানুষ বুঝতে পারছেন, কী ছিল আর কী হল! ধান বিক্রি হচ্ছে না। চাষি আত্মহত্যা করছেন।”
প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই চাষে বিপর্যয়ের কারণে কারও আত্মহত্যার মানতে চাইছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তবে স্থানীয় বেলকাশ পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা মৃণাল ঘোষের বক্তব্য, “অভাবের সংসারে চাষই ছিল লালুবাবুর জীবিকা নির্বাহের এক মাত্র উপায়। সার, জল, কীটনাশক কিনতে ওর বেশ কিছু টাকা দেনা হয়েছিল। উনি আমাদের দলেরই কর্মী ছিলেন। ওঁর পরিবারের জন্য আমরা সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইব।” তবে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুভাষ মণ্ডলের মন্তব্য, “এখন তো সবাই আমাদের সমর্থক। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, চাষের জন্যই উনি আত্মঘাতী হয়েছেন কি না।” |
|
আত্মঘাতী কৃষক লালু মাঝির শোকার্ত পরিবার। ছবি: উদিত সিংহ |
রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য বলেন, “আমার দফতরের অফিসারদের বলছি বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে। কী ভাবে মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো যায় দেখছি।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। তবে শুনেছি, ওঁর পারিবারিক সমস্যা ছিল। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
লালুবাবুর ভাই জয়দেব মাঝি জানান, দু’বিঘের চেয়ে সামান্য বেশি জমি ছিল তাঁর দাদার। গত বার হিমঘরে আলু রেখে শেষ পর্যন্ত ৮-১০ হাজার টাকার আলু বের করতে পারেননি। টাকার অভাবে ন্যায্য দর না পেয়েও ফড়ের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তাতেও মহাজনের ধার শোধ হয়নি। টাকার অভাবে সার, কীটনাশক ও সেচের ব্যবস্থা করতে না পারায় এ বার আলুর চাষ মার খেয়েছে। বেগুনের ফলন ঠিক হলেও মাঝে দর পড়ে যাওয়ায় কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। |
|
রাজ্য জুড়ে চাষিমৃত্যুর প্রতিবাদে সিপিআইয়ের বিক্ষোভ।
বর্ধমানে
কার্জন গেটের সামনে বুধবার ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ। |
জয়দেববাবু বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে দাদা কীটনাশক খান। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।” লালুবাবুর স্ত্রী রিঙ্কুদেবী কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। তাঁদের দুই ছেলে বিনোদ ও বিষ্ণু মুম্বইতে কাজ করতে গিয়েছেন। বুধবার পর্যন্ত ফিরতে পারেননি। তাঁদের খেতে গিয়ে দেখা যায়, ফলহীন কিছু বেগুন গাছ দাঁড়িয়ে। আলু গাছ নেতিয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “চাষে ক্ষতি আর দেনার দায়ে উনি জেরবার হয়ে গিয়েছিলেন। সংসার চলত না। তা নিয়ে অশান্তিও হত। তারই জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন লালু।” গ্রামের দেবব্রত ঘোষ, ধর্মদাস ঘোষেরা বলেন, “গত বার আলু নিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। এ বারও রবি ফসলের দাম নেই। চাষি বাঁচবে কী ভাবে?” |
|
|
|
|
|