গত দু মাস ধরে বেতন বন্ধ হয়ে রয়েছে। পরিবারে চলছে চরম আর্থিক সঙ্কট। এক সপ্তাহ পর মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা। এই অবস্থায় মানসিক অবসাদে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে রায়গঞ্জের স্পিনিং মিলের কম্পাউন্ডারের বিরুদ্ধে। অরুণকান্তি বিশ্বাস নামের ওই কর্মীকে সোমবার রাত ১০টা নাগাদ রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অরুণকান্তিবাবুর বাড়ি রায়গঞ্জের বোগ্রাম এলাকায়। ওই সন্ধ্যায় বিধাননগর এলাকায় তিনি পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে একাধিক ঘুমের ট্যাবলেট খান বলে অভিযোগ। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। মঙ্গলবার দিনভর তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁঁজখবর নিতে হাসপাতালে যান স্পিনিং মিলের বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের সদস্যরা। অরুণকান্তিবাবুর শ্যালিকা বুলবুল দাস বলেন, “গত চারমাস ধরে জামাইবাবু নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। দুই মাস ধরে বেতন পুরোপুরি বন্ধ। আগামী ৮ ফ্রেব্রুয়ারি তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে দিন ঠিক হয়েছে। সমস্ত কিছু মিলিয়ে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।” অরুণকান্তিবাবুর বাবা পেশায় ব্যবসায়ী সুশীলবাবু বিধাননগর এলাকায় নিজস্ব আলাদা বাড়িতে থাকেন। |
প্রায় ১৪ বছর আগে অরুণকান্তিবাবু বোগ্রাম এলাকায় বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। ছেলে স্থানীয় হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোটমেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক অবধি পড়াশুনো করেছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁরই রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকায় বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। অরুণকান্তিবাবুর মা মাধুরীদেবী বলেন, “ওঁ বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি অরুণ একাধিক ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে।” জেলাসাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “আত্মহত্যা করার চেষ্টার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। মিলের স্বাভাবিক এবং নিয়মিত বেতনের জন্য রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।” রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “স্পিনিং মিলের উৎপাদন বন্ধ। কর্মীরা বেতন না পেয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। বহু কর্মী মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছেন। রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরেই স্পিনিং মিলের কর্মীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।” একই ভাবে সিটু’র ওয়েস্ট দিনাজপুর স্পিনিং মিল ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র দেব বলেন, “একাধিকবার রাজ্য সরকার এবং বিভাগীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে চিঠি পাঠালেও মিল স্বাভাবিক করে কর্মীদের নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। এই রকম চললে বহু কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন। উৎপাদন চালু ও বেতনের আশায় প্রতিদিন ৭০৭ জন কর্মী মিল চত্বরে দিনভর বসে অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।” মিলের বর্তমান অবস্থার জন্য তৃণমূল পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকেই দায়ী করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অসীম ঘোষ বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের জন্যই মিলটি এই দশা। আশা করছি, রাজ্য সরকার দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেবে।” |