কেন্দ্রের জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণে মানুষকে সচেতন করে তুলতে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুথে বুথে আন্দোলন সংগঠিত করার ডাক দিল প্রদেশ কংগ্রেস। তাঁদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন থেকে জেলা পরিষদ ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে ব্যর্থ বলেই রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ এই জেলা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে জেলাশাসকের দফতরের সামনে জেলা কংগ্রেসের ডাকে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ওই অভিযোগ তুলে সরব হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি বালুরঘাট বরাবর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এসেছে। সেই জেলা আজ কেন ঘরে বসে থাকবে? তিনি জেলার আরএসপি কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি হতাশাগ্রস্ত তৃণমুল কর্মীদেরও কংগ্রেসে যোগ দিতে আহ্বান জানান। প্রদেশ সভাপতি আক্ষেপ করে বলেন, “আরএসপি দীর্ঘদিন ধরে এখানে ক্ষমতা দখল করে রয়েছে। আর থাকবে না। সিপিএম পরিচালিত বামফ্রন্ট পরীক্ষিত হয়ে গিয়েছে। তারা এখন ১০ ফুট মাটির গভীরে। |
সিপিএমের উপর ভর করে চলা আরএসপিও ১৫ ফুট মাটির নিচে চলে যাবে। তাই আগামী পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে বুথে গিয়ে দল তৈরির ডাক দেন প্রদীপবাবু।” আর পঞ্চায়েতে নিজ শক্তিতে আত্মমর্যাদার সঙ্গে কংগ্রেস উঠে আসবে বলে প্রদেশ সভাপতির দাবি। এ দিনের বিশাল জমায়েত দেখে তথা বহরমপুরের সাংসদ, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেন, “কেন্দ্র জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা জনমুখি প্রকল্পে জেলাকে আর্থিক সাহায্য করছে। অথচ এ জেলার গরিব মানুষ তার সুবিধা পাচ্ছেন না।” প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্র অভিযোগ করেন, “উপেক্ষিত এই জেলায় ১০০ দিন, ইন্দিরা আবাস, রাজীব গাঁধী বিদ্যুৎ যোজনা, পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের মত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজে ব্যর্থ সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদ। প্রশাসনিক কাজেও গতি নেই। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর এসব দেখার সময় নেই।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের অভিযোগ, বাম আমলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা লুঠ হয়েছে। এখনও অবস্থার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “যারা মনে করছেন এই জেলায় কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে তারা মনে রাখুন, সামনের পঞ্চায়েতে মোকাবিলা হবে। ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে।” পরে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবু বলেন, “পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে জেলা কংগ্রেসই শেষ কথা বলবে।”
|
এ দিন জেলার ৮টি ব্লক থেকে বহু মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। গোটা অফিসপাড়া এলাকা ও রাস্তা জুড়ে জনতার ভিড় উপচে পড়ে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে থাকে গোটা কাছারিপাড়া এলাকা। বালুরঘাটে যাওয়ার আগে এ দিন মালদহে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মালদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রদীপবাবু। হাসপাতালে শিশু মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যেভাবে মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যু হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের উচিত কলকাতা থেকে বিশেষ টিম, শিশু বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে, ক্যাম্প বসিয়ে মোকাবিলা করা। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলা দরকার। সেটা না-করে শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যন নিয়ে জাগলারি চলছে। সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগ পরিদর্শনের সময় ইংরেজবাজারের বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি, বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক ঈশাক খান চৌধুরি এবং পুরাতন মালদহের বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এর পর প্রদীপ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ মিশ্র প্রমুখ যান গাজলের ডুহুচি গ্রামের আত্মঘাতী চাষি দয়ালচন্দ্র বর্মনের বাড়িতে। |