তিন দিক কংক্রিটের দেওয়াল ঘেরা ব্যাঙ্কের লোহার সিন্দুক ভেঙে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিল একদল দুষ্কৃতী। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ির হুসলুরডাঙায় উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চূড়াভান্ডার শাখায়। দুষ্কৃতীরা চূড়াভান্ডার নদীর পাড় ধরে পালিয়ে যায় বলে পুলিশের সন্দেহ। প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে গিয়ে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। জলপাইগুড়ির ডিএসপি দমন চন্দ কর্মকার বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুশলুরডাঙা পাকা সড়কের পাশে ভাড়া বাড়িতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চূড়াভান্ডার শাখা। দোতলা বাড়ির নীচে ব্যাঙ্ক। উপর তলা ফাকা থাকে। মঙ্গলবার গভীর রাতে দুষ্কৃতী দলটি বিপদ সঙ্কেত দেওয়ার জন্য থাকা ‘ইলেকট্রনিক সাইরেনে’র তার কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপর জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ব্যাঙ্কের ভেতরে ঢোকে। দুটি লোহার গেট ভেঙ্গে পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট উঁচু কংক্রিটের দেওয়াল ঘেরা লোহার সিন্দুকে কাছে পৌঁছয়। সিন্দুক খোলার জন্য কংক্রিটের দেওয়াল ভাঙে। এরপর সিন্দুকের দরজা খুলে পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। |
ব্যাঙ্কে কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকলেও সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। কিন্তু কেউ বিষয়টি টের পাননি বলে জানিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অরবিন্দ সিদ্ধান্ত অফিসে গেলে বিষয়টি তাঁর নজরে পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘সদর দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে বিষয়টি বুঝতে পারি। পুলিশকে সব জানিয়েছি।” ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ ব্যাঙ্কের ২ কর্মী জলপাইগুড়ি শাখা থেকে ২০ লক্ষ ২ হাজার ৬৭ টাকা নিয়ে হুশলুরডাঙায় যায়। আজ, বুধবার চূড়াভান্ডার, সাপ্টিবাড়ি-১ এবং সাপ্টিবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৪০টি প্রাথমিক স্কুলের অন্তত দুশো শিক্ষকের বেতন দেওয়ার কথা। এ ছাড়াও তিনটি ফার্মাস ক্লাবের সদস্য কয়েকশো চাষিকে আলু চাষের জন্য ঋণ দেওয়ার কাজ চলছে। সে কারণেই এদিন অতিরিক্ত টাকা আনা হয়। পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা বিষয়টি আগাম জেনে লুঠের ছক কষে। ব্যাঙ্কের সিন্দুক কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছে, তা জেনেই তারা হানা দেয়। প্রশিক্ষিত কুকুর ‘দীপা’ রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তের গন্ধ শুকে ব্যাঙ্কের পেছনে জলাশয়ের পাড়ে যায়। সেখানে কিছু গুটকার ছেঁড়া প্যাকেট পাওয়া গিয়েছে। এর পর ‘দীপা’ আল পথ ধরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যায়। সেখান থেকে কিছুটা গিয়ে ফের আলু খেত ধরে চূড়াভান্ডার নদীর পাড়ে দাঁড়ায়। সেখানে ছেঁড়া গেঞ্জি এবং কয়েকটি কয়েন পাওয়া গিয়েছে। কিছু মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি দুষ্কৃতীদের বলেই পুলিশের সন্দেহ। ঘটনার কথা শুনে ঋণ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় করেন। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক ম্যানেজার শ্যামলকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা বিমা করা রয়েছে। আমানতকারীদের ভয়ের কিছু নেই। পুলিশি তদন্তের কাজ শেষ হলে ঋণ দেওয়া ও টাকা জমা নেওয়ার স্বাভাবিক কাজ শুরু হবে।” |