জল ছাড়ার ১৫ দিনের মধ্যে ক্যানেল ভেঙে যাওয়ায় জলের অভাবে ফাঁসিদেওয়ার জালাস এলাকার চাষিরা বোরো ধানের রোপণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। এই নিয়ে ওই পঞ্চায়েত এলাকার বোরো চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেচ দফতরে সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। চাষিদের অভিযোগ, জানুয়ারির প্রথম দিকে মেন ক্যানেলে জল ছাড়া হয়। পরে জালাস এলাকায় ৩ নম্বর ডিস্টিবিউটরের মাধ্যমে জালাসের লিউসিপাখুরি, কিনাজোত, রাভভিটা, রূপনদিঘি, শৈলানিজোত ইত্যাদি বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো চাষের জন্য জল ছাড়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে জলের চাপে লিউসিপাখুরি এলাকায় শাখা ক্যানেলের প্রায় কুড়ি ফুট ভেঙে যায়। এর পর লিউসিপাখুরির কিনাজোত এলাকায় ওই ডিস্টিবিউটরের লক গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। লক গেট বন্ধ করে দেওয়ায় জমিতে জলই পৌঁছয় না। বীজ ছড়ানো থেকে শুরু করে রোপণ, কিছুই করা যাচ্ছে না বলে চাষিরা জানান। লিউসিপাখুরি এলাকার বোরো চাষি মহম্মদ জামাল, মহম্মদ মজিদ, আজিত আলিরা বলেন, “গত বছরেও পর্যাপ্ত জল না পেয়ে ভালভাবে বোরো চাষ করতে পারিনি। এবার জল ছাড়ার কথা জেনে আগেভাগেই জমি চাষ করেছিলাম। যাও জল ছাড়া হল। তাও ক্যানেলের পাড় ভেঙে গেল। পরে লক গেট বন্ধ করে দেওয়ায় বীজতলা তৈরি ও রোপণই করতে পারছি না।” এলাকার বাসিন্দা তথা ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বলেন, “মেন ক্যানেলে জল ছাড়ার পর ওই ৩ নম্বর ডিস্টিবিউরে জল ছাড়া হয়েছিল। চাষিরা জোর উদ্যামে বীজতলা শুরু করেছিলেন। রোপণ করার জন্য জমিও তৈরি করেছেন। আচমকা ওই ডিস্টিবিউটরের কুড়ি ফুট পাড় ভেঙে যাওয়ায় জল বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল। অজস্র ইঁদুরের গর্ত থাকার ফলে এমনটা হয়েছে। ওই ডিস্ট্রিবিউটর চ্যানেলে এক ফোঁটা জলও নেই। বাকি উপ ক্যানেলগুলিতে ১ ফুটের মতো জল বইছে। সে জলে কোনও কাজে লাগে না। চাষিরা বীজতলা ও রোপণ করতে পারছেন না। আমি নিজেও জলের অভাবে বোরো রোপণ করতে পারছি না।” তিনি জানান, এই নিয়ে তিনি সেচ দফতরে কথা বলেছিলেন, টেণ্ডার হলেই ওই ভাঙা অংশ মেরামত হবে। তার আগে জল ছাড়া যাবে না বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। বীজতলা ও জামি চাষ করে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।” পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলবাড়ি মহানন্দা ব্যারেজ প্রকল্প থেকে ফাঁসিদেওয়ার ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ডিস্টিবিউটর দিয়ে ফাঁসিদেওয়া এলাকায় জল ছাড়া হয়। মহানন্দা ব্যারেজ ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “গত বর্ষায় ওই এলাকায় শাখা ক্যানাল ভেঙে গিয়েছিল। তা মেরামত করে ফের জল ছাড়ার কথা ছিল। চাষিরা একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। জালাসের প্রধান আমাদের বলেছিল, এখন জলের দরকার হবে না। চাষিরা নাকি জল চাইছেন না। আগে ওঁরা নিজেরাই ঠিক করুন।” পঞ্চায়েত প্রধান আনন্দ সিংহ জানান, জালাসের বেশির চাষিই সব্জি চাষ করেছেন। তিনি বলেন,“এখনও বিভিন্ন খেতে সব্জি রয়েছে। সব্জি খেত নষ্ট হয়ে যাবে বলে তাঁরা জল চাইছেন না। কিছু সংখ্যক চাষি বোরো ধান করবেন বলে জলের কথা বলেছিলেন। চাষিদের নিয়ে বৈঠক করে তাঁদের মত নিয়ে জলের দরকার হবে না বলে সেচ দফতরে জানিয়েছি।” জালাসের কৃষকসভার সম্পাদক সন্তোষ রায় জানান, শাখা ক্যানেলগুলির বেহাল অবস্থা। সংস্কার না করেই কী করে জল ছাড়া হল? জালাসে সেভাবে সব্জি চাষ হয় না। প্রধান শুধু তাঁর গ্রামের সব্জি চাষিদের কথা ভেবে জলের দরকার হবে না বলে সেচ দফতরে জানিয়েছে। তিনি সব চাষিদের নিয়ে বৈঠক করেননি। |