কাগজে-টিভিতেই শিল্প এবং চাকরি, কটাক্ষ নিরুপমের
শিল্প হোক বা কৃষি, ‘মা-মাটি-মানুষে’র সরকার কোনও নির্দিষ্ট নীতি ছাড়াই চলছে বলে ফের সরব হল প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের কটাক্ষ, “মা-মাটি-মানুষের সরকার। তারা মাটিতে আঁচড় পড়তে দেবে না! কিন্তু শিল্পও করবে! ঘোষণা হয়েই চলেছে। মনে হচ্ছে, ওই সব শিল্প খবরের কাগজের পাতা আর টেলিভিশনের পর্দাতেই হবে!”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতি, প্রকল্পের জন্য সরাসরি জমি কিনে নিতে হবে শিল্পপতিদেরই। নিরুপমবাবুর জেলা বর্ধমানের কাটোয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সেই পথেই এগোতে হচ্ছে এনটিপিসি-কে। এবং তা করতে গিয়ে সেখানে দালালরাজ মাথাচাড়া দিয়েছে। জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা না-থাকলে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়বে, গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন নিরুপমবাবুরা। কার্যক্ষেত্রে তা-ই ঘটতে শুরু করায় মমতার সরকারের নীতির সমালোচনায় ধীরে ধীরে সুর চড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে সিপিএম। নব্য উদারনীতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের কনভেনশনে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী যেমন বলেছেন, “রাজ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় এখন যুক্তি বস্তুটির মৃত্যু হয়েছে! যা এক জন বলছেন, তা-ই মানতে হবে সকলকে!” তাঁর বক্তব্য, কাজকর্ম দেখে নতুন রাজ্য সরকারকে ‘নীতিহীন’ বলেই মনে হচ্ছে।
মাত্র আট মাসের মধ্যে বিপুল কর্মসংস্থানের যে খতিয়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিচ্ছেন, তাকেও কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপমবাবু। তাঁর বক্তব্য, নব্য উদারনীতির প্রভাবে গোটা দুনিয়ায় আর্থিক সঙ্কট নেমে এসেছে। ভারতও সেই সঙ্কট থেকে মুক্ত নয়। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার থমকে গিয়েছে। নিরুপমবাবুর কথায়, “এই অবস্থায় একটা রাজ্যে কয়েক মাসে আড়াই লক্ষ কর্মসংস্থান হলে গর্বের কথা! মুখ্যমন্ত্রী তো তেমনই বলছেন। তবে চাকরি হলে তো দেখা যেত। হয়তো সেটাও ওই খবরের কাগজের পাতায় আর টেলিভিশনের পর্দায় হয়েছে!” কোষাগারে টানাটানির জন্য যে সরকার বর্তমান কর্মচারীদের সকলের নিয়মিত বেতন-পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারছে না, তারা নতুন নিয়োগ করবে কী ভাবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
পরিবহণ নিগমের কিছু কর্মীর বেতন কয়েক মাস বন্ধ রেখেছে সরকার। পরিবহণ থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণার পরে আবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ৬ মাস নিয়মিত বেতন দেওয়া হবে। তবে তার মধ্যে পরিবহণ নিগমগুলিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজতে হবে। ভাড়া বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের ‘নীতি’ ঠিক কী? এই সূত্র ধরেই নিরুপমবাবু বলেন, বাম জমানায় তাঁরাও পরিবহণের সংস্কারের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। রাজ্য সংস্কারের কাজ করতেই পারে। কাজ করিয়ে কর্মচারীদের বেতন না-দেওয়া কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
নিরুপমবাবুর জেলা বর্ধমানেই সব চেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যাঁরা আত্মঘাতী হচ্ছেন, তাঁরা কেউ (এখনও পর্যন্ত এক জন বাদে) কৃষক নন। লাগাতার ঘটে-চলা এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য, “সমস্যা স্বীকার করলে তবে তা মোকাবিলার পথ খোঁজা যায়। এই সরকার সমস্যা অস্বীকার করছে!” তাঁর আরও মন্তব্য, “মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের নীতির পরিবর্তন না-হলে আপনি (মমতা) কিছু করতে পারবেন না!” নিরুপমবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রের নীতির ফলেই অন্ধ্র বা মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে কৃষকেরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এখন এ রাজ্যের কৃষকেরাও সেই পথে যাচ্ছেন। কিন্তু এক দিকে যেমন কেন্দ্রের নীতি পরিবর্তন হচ্ছে না, অন্য দিকে আবার মমতার সরকার সমস্যা স্বীকারই করছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.