অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ডাল ‘পাচার’ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল সিপিএমের এক জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যের স্ত্রীকে। তাঁর কাছ থেকে কয়েক কেজি ডালও আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জয়পুর এলাকার ঘটনা। পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “সমস্ত দিক খতিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।”
অভিযুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মঞ্জু পাণ্ডে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ষড়ানন পাণ্ডের স্ত্রী। তিনি গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জয়পুর ব্লকেরও নেত্রীও। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ডাল পাচার করার অভিযোগে বাসিন্দারা এ দিন সকালে স্থানীয় উত্তরবাড় গ্রামে ঘণ্টা খাড়েক আটকে রাখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে বাসিন্দারা গণ স্বাক্ষর করে পুলিশের কাছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চাল ও ডাল পাচার করার অভিযোগ জানান। পুলিশ জানিয়েছে, পরে রাতে স্থানীয় বাসিন্দা দিলিপ হালদার মঞ্জু দেবীর বিরুদ্ধে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ডাল পাচার করার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। আজ বুধবার, তাকে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হবে। জয়পুরের বিডিও’র নির্দেশে সিডিপিও অশ্বিনী হাঁসদা উত্তরবাড় চৌধুরীপাড়া শিশুবিকাশ কেন্দ্রে তদন্তে যান। পরে তিনি বলেন, “ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তদন্তে গিয়ে দেখেছি, চাল ও ডাল কম পরিমাণে রয়েছে।” প্রত্যাশিত ভাবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূলের রাজনৈতিক কাজিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। |
মঞ্জুদেবী জয়পুরের উত্তরবাড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী। তাঁর বাড়ি স্থানীয় কুলসায়র গ্রামে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন সকালে কেন্দ্রের পড়ুয়াদের জন্য রান্না শুরুর আগে মঞ্জুদেবী ব্যাগে কিছু চাল ভরে বাড়িতে নিয়ে যান। ছুটির পরে ফের তিনি কেন্দ্র থেকে ডাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। সেই সময় গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁকে ঘণ্টা খানেক আটক করে রেখে বাসিন্দারা চাল ও ডাল চুরি করার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, মঞ্জুদেবীর কাছে কিছু পরিমাণ মুসুর ডাল পাওয়া গিয়েছে। জয়পুরের বিডিও চিত্রদীপ সেন গ্রামবাসীদের কাছে অভিযোগ পেয়ে অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সিডিপিও-কে তদন্ত করতে বলেন। সিডিপিও বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখি চাল ও ডাল কম পরিমাণে রয়েছে।” তাঁর দাবি, “এ দিন সেখানে ২৫ কেজি চাল থাকার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ কেজি চাল পাওয়া গিয়েছে। ডালও কম পরিমাণে রয়েছে। আরও হিসেব করে দেখা হচ্ছে।”
উত্তরবাড় গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ, প্রদীপ কোনারদের অভিযোগ, “এর আগেও মঞ্জুদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চাল-ডাল পাচার করেছেন। বারণ করতে গেলে উল্টে সিপিএমের নেত্রী বলে আমাদের শাসানি দিত।” জয়পুর থানায় মঞ্জুদেবীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দাবি করেন, “বিরোধী রাজনীতি করি বলে জল ঘোলা করা হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।” তাঁর ছেলে তন্ময় পাণ্ডে বলেন, ‘‘মা অসুস্থ। তাঁকে হেনস্তা করা ঠিক হয়নি।” বিডিও বলেন, “সিডিপিও’কে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আবাসন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “সিপিএমের নেতা-নেত্রীরা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন যে শিশুদের খাবারও চুরি করছেন!” ষড়াননবাবুর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “ষড়াননবাবু ও তাঁর স্ত্রী অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। মঞ্জুদেবী গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জয়পুর ব্লকের নেত্রী। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।” |