দাবি মতো টাকা দিতে রাজি না-হওয়ায় দোকানের সামনে পাঁচিল গেঁথে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক দল যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই যুবকেরা সকলেই তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী।
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলির আমতলায়, ডায়মন্ড হারবার রোডে। এ ব্যাপারে বিষ্ণুপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই দোকানের মালিক। তাঁর অভিযোগ, সব কিছু জেনেও পুলিশ পাঁচিলটি ভাঙার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিষ্ণুপুর থানা এলাকার দু’জন তৃণমূল সমর্থককে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখব আমরা। এতে স্থানীয় থানার কী ভূমিকা রয়েছে, তা-ও দেখা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাসখানেক আগে আমতলার বাসিন্দা রামকৃষ্ণ মণ্ডল তাঁর মুদি দোকানটিতে মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। এর পরেই স্থানীয় তৃণমূল-কর্মীদের একাংশ তাঁর কাছে মাসিক দু’হাজার টাকা দাবি করেন বলে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রামকৃষ্ণবাবু। |
ওই দোকান-মালিক পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, তিনি মাসে এক হাজার টাকা করে দিতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু নিজেদের দাবিতে অনড় ওই যুবকেরা। এর পরেই গত ২৬ জানুয়ারি সকালে দোকানটির সামনে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়। রামকৃষ্ণবাবু জানিয়েছেন, নিজের জমিতে প্রায় ১০ বছর ধরে ওই দোকানটি চালাচ্ছেন তিনি। নিজেকে তৃণমূলের সমর্থক বলেও দাবি করছেন রামকৃষ্ণবাবু।
এলাকার তৃণমূল নেতাদেরও ঘটনাটি জানিয়েছেন ওই দোকানি। তিনি বলেন, “তৃণমূলের বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লক সভাপতি শ্যামল মণ্ডলকে বিষয়টি জানাই। শ্যামলবাবুও ওই যুবকদের দাবি মতো টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন।”
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই দোকানের সামনে সাড়ে তিন ফুট উঁচু পাঁচিল গাঁথা রয়েছে। দোকানটি আপাতত বন্ধ। ওই দোকানের আয় থেকেই রামকৃষ্ণবাবুর চার জনের সংসার চলে। দোকানটির উল্টো দিকেই তৃণমূল কংগ্রেসের অফিস। সেখানে তৃণমূল সমর্থকেরা জানান, ২৬ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটার পরে বিষ্ণুপুর থানায় মীমাংসার জন্য দু’পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। শ্যামলবাবু-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও হাজির ছিলেন সেখানে। পুলিশও জানায়, ওই বৈঠকে অভিযুক্ত তৃণমূল-কর্মীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় কোনও মীমাংসা হয়নি।
এখন কী করণীয়, বুঝতে পারছেন না রামকৃষ্ণবাবু। তিনি বলেন, “এখন দোকান বিক্রি করে দিতে নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।” দোকানের পাশে রামকৃষ্ণবাবুর আর একটি দোকানঘর রয়েছে। সেটি ভাড়া দেওয়া। সেটিও বিক্রি করে দিতে বলা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই দু’টি দোকানের বাজার-মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। রামকৃষ্ণবাবু বলেন, “দোকান দু’টি অর্ধেক দামে বিক্রি করার কথা বলছে ওরা। দোকান বিক্রি না-করলে মাসে মাসে দু’হাজার টাকা করে দিতে হবে। পাঁচিল গাঁথার পরে এখন তো আর দোকান খোলারও উপায় নেই।”
রামকৃষ্ণবাবুর অভিযোগের বিষয়ে কী বলছেন তৃণমূল নেতারা? শ্যামলবাবু বলেন, “ওখানে একটি সমস্যা হয়েছে, তা জানি। আমরা ওই সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা করব। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে।” আর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চৌধুরী মোহন জাটুয়া বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে ওই ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ পেলে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” |