সাঁঝেই বন্ধ বাস, অগম্য তেহট্ট
কে ট্রেন নেই। তার উপরে বাস চলে না সব রাস্তায়। কোথাও বা বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সন্ধ্যার পরেই। তেহট্ট মহকুমায় সাধারণ মানুষের ভরসা তাই বেআইনি যন্ত্রচালিত ভ্যানই।
শীতে কুয়াশা কিংবা কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ওই ভ্যানে যাতায়াত করতে হয় প্রসূতি থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই। প্রশাসন ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্টের বার্নিয়া থেকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিমি। সারা দিনে বেশ কয়েকটি বাস ওই রুটে চলাচল করলেও রাত আটটার পর থেকে বাস বন্ধ। এ বার রাতবিরেতে ভরসা বলতে ভ্যানরিকশা, লছিমন, সাইকেল কিংবা মোটর সাইকেল। যাঁদের সার্মথ্য রয়েছে, তাঁরা আপদে বিপদে গাড়ি ভাড়া করেন। বার্নিয়ার আছের আলি মণ্ডল বলেন, “শীতকালে রাত নামলেই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়। জরুরি কোনও দরকারে গ্রাম থেকে কোথাও যেতে হলেই তো সমস্যা। সন্ধ্যার পরে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।”
তেহট্টের বারুইপাড়ার বাসিন্দা তথা অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘শীতের রাতে ভ্যান কিংবা লছিমনও যে এক কথায় পাওয়া যায়, এটা ভাবলেও কিন্তু ভুল হবে। কারণ শীত ও কুয়াশার ভয়ে অনেকেই বেশি ভাড়াতেও যেতে চান না। তা ছাড়া এই সময় রাতে রাস্তায় চলাচলও খুব নিরাপদ নয়। ফলে বার্নিয়া, উজিরপুর, বরেয়া, চরকপোঁতা, পলশুন্ডা বা ধাওয়াপাড়ার মতো গ্রামগুলো থেকে রাতের পর কোথাও যাতায়াত করা সত্যিই খুব সমস্যার। এই সব পকেট রুটগুলোতে সন্ধ্যার পরে বাস বা অন্য কোনও বিকল্প যানবাহনের ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা মিটবে না।’’
বার্নিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের তরুণকুমার ঘোষচৌধুরী বলেন, ‘‘রাতে এই এলাকাতে বাস চলাচল না করায় আমাদের খুব সমস্যা হয়। বিশেষ করে রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধায় পড়তে হয়।’’
একই অবস্থা হাঁসপুকুরিয়া কিংবা চাঁদেরঘাট গ্রামেও। হাঁসপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “সন্ধ্যের পর গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার কোনও বাস থাকে না। তা ছাড়া তেহট্ট যেতে হলে জলঙ্গি নদী পার হয়ে যেতে হয়। ফলে রাতে হাঁসপুকুরিয়া বা চাঁদেরঘাট থেকে কাছাকাছি তেহট্টে বা বাইরে যাওয়া একটা বিরাট সমস্যা।”
একইরকম সমস্যায় রয়েছেন শিকারপুর, দাঁড়েরমাঠ, রাজাপুর, বেড়রামচন্দ্রপুর, পাকশি, মথুরাপুর ছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারাও। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুরপতি প্রামাণিক বলেন, “দিনের বেলায় প্রায় সব এলাকাতেই কিছু না কিছু বাস চলাচল করে। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় সন্ধ্যের পরে। তখন রাতে গ্রাম থেকে বেরোনোর আর কোনও বাস থাকে না।”
নদিয়া জেলা মিনি মোটর্স ড্রাইভার ইউনিয়নের সম্পাদক জয়ন্ত সাহা বলেন, “সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে রাত বিরেতে জরুরি কোনও কাজ বা আশঙ্কাজনক কোনও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুশকিল আসান করে ছোট গাড়ি গুলোই।” নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক পীযূষ রক্ষিত বলেন, “গ্রামের মানুষের সমস্যা হয়, এটা যেমন ঠিক তেমনই প্রত্যন্ত এলাকার রুটগুলোতে সন্ধ্যের পরে যাত্রী থাকে না বললেই চলে। ফলে সেই কারণেই সন্ধ্যের পরে বাস চলাচল করে না। তা ছাড়া বেআইনি কিছু যানবাহনের দাপটেই দিনের বেলাতেও বাসে যাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাসমালিকদের অবস্থাও খুব সুবিধের নয়।” তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “মহকুমার সীমান্ত লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে সন্ধ্যের পরে বাস চলে না। ফলে সমস্যা তো হয়ই। সেই গ্রাম থেকে এই শীতের রাতে দীর্ঘ পথ উজিয়ে রোগী নিয়ে হাসপাতাল আসাটাও একটা বড় সমস্যা। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ও বাস মালিক সমিতির সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। তবে যে রুটগুলোতে সন্ধ্যের পরে বাস চলে না, সেখানে অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে ব্যাপারেও আমরা একটা চিন্তাভাবনা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.