শ্বাসকষ্টে ভুগছেন গ্রামবাসীরা
ধুলোর সঙ্গে লড়াই করেই দিনযাপন মাঙ্গনপাড়ার
খনও ভোর ফোটেনি, উনুনে আঁচ পড়ে গিয়েছে মাঙ্গনপাড়ায়। ছেঁড়া ন্যাকড়ায় মুখ ঢেকে আটপৌরে ‘মাস্ক’ পরে শিশুরা পথে নেমেছে। স্কুলে যেতে আসতে এ ছাড়া উপায় কী? শেষ বিকেলে ধুলো মেখে ফিরে আসে তারা। ভোর রাতেই মহিলারা সেরে রাখছেন রান্না। ‘তা না হলে, ভাতের বদলে ধুলো সেদ্দ হবে যে!’
চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটার দিকে ছুটে যাওয়া ট্রাক্টরের দাপাদাপিতে এ ভাবেই দিনযাপন রেজিনগরের রামপাড়া-১ পঞ্চায়েতের মাঙ্গনপাড়া আর চড়কতলার। গ্রামের ওই এলাকার প্রায় সাড়ে চারশো পরিবার তাই ধুলো এড়াতে অন্ধকার থাকতেই দিন শুরু করছেন। আর শ্বাসকষ্ট কিংবা পেটের সমস্যায় ভুগে ছুটছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
মহকুমা থেকে ব্লক এমনকী স্থানীয় থানাকে বার বার জানিয়েও সুরাহা দূরস্থান, গ্রামের বাসিন্দাদের শুনতে হয়েছে, ‘ট্রাক্টরগুলো তাহলে যাবে কী করে?’ রেজিনগর ইটভাটা সমিতির সম্পাদক দিলওয়ার শেখ বলেন, “সমস্যা একটা হচ্ছে ঠিকই। তবে আমরাই বা কোন দিক দিয়ে ট্রাক্টর নিয়ে যাব বলুন?”
মাস খানেক আগে রাস্তা আবরোধ করে বাসিন্দারা এ ব্যাপারে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভের ধুলো থিতিয়ে যেতে সময় লাগেনি। সমস্যা মেটাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত বৈঠক ডেকেছিল। তবে ইটভাটা কিংবা ট্রাক্টর চালকেরা আসার সময় পাননি! ফলে শ্বাসকষ্ট আর ভোরের রান্না নিয়েই বেঁচেবর্তে রয়েছে মাঙ্গনপাড়া।
—নিজস্ব চিত্র।
রামপাড়া-মাঙ্গনপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী একটি ভাঙাচোরা পিচ রাস্তাই গিয়ে পড়েছে স্থানীয় তিনটি ইটভাটায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই ইটভাটার জন্য যে মাটির প্রয়োজন সেই মাটি ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে গত ৮ মাস ধরে ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতি দিন ভোর ৪টে থেকে প্রায় বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪০টি ট্রাক্টরের এই দাপাদাপি নিত্য ঘটনা। লাল ধুলোয় দিনভর আবছায়া হয়ে থাকছে গ্রাম। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের পাঁচুগোপাল মণ্ডল বলেন, “আমি স্থানীয় বাসিন্দা। ধুলোর উপদ্রবে রান্না বন্ধ, শ্বাসকষ্ট-সহ নানা সমস্যায় এলাকাবাসী একবার রাস্তা অবরোধও করেছিলেন। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি।” রামপাড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের বাহার আলি মল্লিক বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়ে ইটভাটা ও ট্রাক্টর মালিকদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলাম। ভাটা মালিকেরা এলেনই না।” তা বলে হাত গুটিয়ে বসে আছেন?
আর বাঁদা ধরা গতে বহরমপুর মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। পুলিশকে বিষয়টি দেখতেও বলা হয়েছে।” তবে স্থানীয় রেজিনগর থানা অবস্য সেই ‘দেখার’ সময় পায়নি। গ্রামের বাসিন্দা শেফালি বর্মন বলেন, “আমার রান্নাঘর উঠোনের এক ধারে। তাতে ছাদ নেই। ফলে রান্নার সামগ্রী ও রান্না করাই দায়। অপেক্ষা করতে কখন ট্রাক্টর যাওয়া বন্ধ হবে বা ধুলো কমবে।” তাঁর স্বামী ও নাতির শ্বাসকষ্ট, বমি ও পেট খারাপ লেগেই থাকে। এলাকার অর্জুন মণ্ডল, সুফল মণ্ডল, শঙ্কর কর্মকার....দীর্ঘ সেই তালিকায় অন্যান্যরাও এই ভাবে কোনওক্রমে ধুলোর সঙ্গে লড়াই করে দিনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে উঠছেন। এ ছাড়া উপায় কী!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.