সিপিএম সম্মেলনের সুর কাটল সেই সিআইডি
সোমবার সকালে সবে সিপিএম নেতৃত্ব উপস্থিত হচ্ছেন দলের জেলা সম্মেলন-স্থলে। তার আগে থেকেই মেদিনীপুর জেলা পরিষদ হলের চার দিকে ‘সাদা পোশাকের’ কড়া নজরদারি। তাঁরা নজর রাখছিলেন, কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত কেউ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে আসছেন কি না। যদিও কোনও অভিযুক্তই আসেননি।
সময় এগোতে থাকে। দুপুরেই খবর পৌঁছয়, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডেও সিআইডি আদালতে চার্জশিট দিচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে দলের ‘তাবড়’ নেতা লক্ষ্মণ শেঠের পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ‘দলের সম্পদ’ তপন ঘোষ, সুকুর আলিরও নাম রয়েছে চার্জশিটে। এ কথা জানার পরেই গুঞ্জন শুরু হয় জেলা পরিষদ হলের সম্মেলনস্থলে। উদ্বিগ্ন কয়েক জন প্রতিনিধি এমনকী চেয়ারে ব্যাগ রেখে বাইরেও বেরিয়ে আসেন।
মেদিনীপুরে সাংবাদিক বৈঠকে বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সন্ধের পরেও দলীয় নেতৃত্বের কাছে খবর যায়, সম্মেলন-স্থলে সিআইডি-র নজরদারি চলছেই। নজরদারি চালানো হচ্ছে ফোনে আড়ি পেতেও। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য অনুমান করেই ছিলেন, সম্মেলনে সিআইডি-র নজরদারি থাকবে। বিপদ হতে পারে আন্দাজেই কয়েক জন ‘ফেরার’ নেতাকে তাঁদের উৎসাহ সত্ত্বেও সম্মেলনে যোগ দিতে বারণ করেছিলেন জেলা নেতৃত্বই। সিআইডি-র আবার অনুমান ছিল, সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও অভিযুক্ত নেতাদের মন পড়ে থাকবে সম্মেলনেই। তাই সম্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা নিশ্চয়ই সম্মেলনে হাজির নেতা-কর্মীদের কাছে মোবাইলে জানতে চাইবেন, সম্মেলনে কী আলোচনা হয়েছে। ‘ফেরার’দের মোবাইল নম্বর সিআইডি-র কাছে না থাকলেও অন্য নেতাদের মোবাইল নম্বর রয়েছেই। সিআইডি এ-ও জানে কোন নেতা কাকে ফোন করতে পারেন। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত কোনও সিপিএম নেতা সম্মেলনে আসছেন কি না তা দেখার জন্য যেমন সম্মেলনস্থল জেলা পরিষদ হল, খাবার জায়গা বিদ্যাসাগর হলে নজরদারি চালানো হয়েছিল, তেমনই ফোনেও আড়িপাতার উপরে জোর দেওয়া হয়।
সিআইডি-র এ হেন ‘তৎপরতা’য় জেলা সম্মেলনের সুর কেটেছে ঘনঘনই। উত্তেজিত হয়ে প্রতিনিধিরাও রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে তুলোধনা করেছেন এই বলে যে কেন রাজ্য সরকারের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করা হচ্ছে না? একাধিক মামলা চালানোর ব্যাপারেও দলীয় নেতৃত্বের ‘সক্রিয়তায় অভাব ঘটছে’ বলে অভিযোগ করেন কয়েক জন প্রতিনিধি। পলাতক নেতাদের আত্মগোপনের ব্যবস্থা করা, তাঁদের রসদ জোগানোর ক্ষেত্রেও নেতৃত্বের ঢিলেমি রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অনেক অভিযুক্ত নেতার পরিবারকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইনজীবীর পরামর্শ নিতে হচ্ছে বলেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কয়েক জন প্রতিনিধি।
সিআইডি-র পাল্টা সম্মেলনস্থলে ‘নিরাপত্তা বলয়’ তৈরি রেখেছিল সিপিএমও। দলীয় কর্মীদের দিয়ে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাঁরা অচেনা মুখ দেখলেও যেমন তাঁর প্রতি নজর রেখেছেন, তেমনই সম্মেলনের প্রতিনিধিদের দিকেও নজর রেখেছিলেন। সম্মেলনের ভিতরের খবর যাতে বাইরে কেউ জানতে না পারেসে জন্যই প্রতিনিধিদের উপরেও নজরদারির ব্যবস্থা। এমনকী প্রথম দিনের আলোচনা শেষে প্রতিনিধিদের প্রতিবেদন বাইরে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন, পেন, প্যাড সমেত ব্যাগ জমা নিয়ে একটি করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যে নম্বর ধরে ফের মঙ্গলবার সকালে আলোচনা শুরুর মুখে প্রতিবেদন ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। যা পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাতেও সিপিএমে অভূতপূর্ব ঘটনা বলেই মানছেন দলের প্রবীণ নেতারাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.