যদি যোগ্য বিকল্প থাকে তা হলে টেস্ট দলের অধিনয়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াতে তৈরি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সাফ বলে দিলেন, পদ আঁকড়ে পড়ে থাকার কোনও ইচ্ছে তাঁর নেই। যদি ভারতীয় বোর্ড মনে করে তাঁর চেয়ে যোগ্য কেউ তৈরি আছে টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য, তা হলে তিনি খুশি মনে সরে দাঁড়াতে রাজি।
পাশাপাশি এ দিন সিডনিতে তাঁর করা আরও একটি মন্তব্য নিয়ে জল্পনা হতে বাধ্য। টেস্টের চেয়ে এক দিনের দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাই সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন ভারত অধিনায়ক। বলেন, এক দিনের দল তরুণ ছেলেতে ভর্তি। তাই ড্রেসিংরুমে সারাক্ষণ হুল্লোড় আর ক্যাঁচরম্যাচর লেগে রয়েছে। টেস্টের ড্রেসিংরুমের মতো শান্ত, চুপচাপ নয়। সারাক্ষণ আওয়াজে গমগম করছে। “আমাদের এক দিনের দলটাকে সম্পূর্ণ অন্য রকম দেখাচ্ছে। ওরা অনেক বেশি চেঁচামেচি করতে পারে আর সেটা ড্রেসিংরুমের মনোবলকে অনেক চাঙ্গা করে দিচ্ছে।” ধোনি এমনও বলেন যে, “দেখে মনে হবে যেন কিশোর কুমারের থেকে আপনি শন পল-এ ঢুকে পড়েছেন! দু’টো ড্রেসিংরুমে এতটাই তফাত।” যদিও সিনিয়র ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে এর পর তিনি বলেন, “বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। পারফর্ম করে গেলে কেউ বয়স নিয়ে কথা বলে না। যখন কেউ রান পাবে না, তখন এ সব বলা হয়।”
ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া মিলিয়ে টানা সাতটি টেস্ট হেরেছেন অধিনায়ক ধোনি। তাঁর নেতৃত্ব প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়েছে। অ্যাডিলেডের শেষ টেস্টে আইসিসি-র সাসপেনশন থাকায় খেলতে পারেননি ধোনি। তাঁর জায়গায় নেতৃত্ব দিয়ে টেস্ট হারেন বীরেন্দ্র সহবাগ। |
বুধবার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামছে ভারত। তার আগে নেতৃত্ব নিয়ে ধোনিকে জিজ্ঞেস করা হয়। তৎক্ষণাৎ ধোনি বলে দেন, “অধিনায়কত্ব তো কারও সম্পত্তি নয়। এটা একটা বাড়তি দায়িত্ব। আপাতত এই দায়িত্ব আমি পালন করছি। যতক্ষণ এই পদটায় আমি আছি, চেষ্টা করে যাই ভাল করে যাওয়ার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। যদি আমার চেয়ে ভাল কেউ থাকে তা হলে স্বচ্ছন্দে তাকে আনা যায়।” সঙ্গে যোগ করেন, “দিনের শেষে সবাই চায় ভারত ভাল খেলুক। যদি এমন কেউ থাকে, যে আমার চেয়ে ভাল নেতৃত্ব দিতে পারবে, তা হলে তাকেই ক্যাপ্টেন করা উচিত। আমাকে এই দায়িত্বটা সাড়ে তিন বছর আগে দেওয়া হয়েছিল। আমি চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে টিম চালানোর।” দেশের প্রাক্তন অধিনায়কেরা কিন্তু মনে করছেন, টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধোনি এখনও সবথেকে যোগ্য লোক। সুনীল গাওস্কর যেমন বলেছেন, “আমার মতে, ধোনি এখনও যোগ্যতম ক্যাপ্টেন। হয়তো আরও দু’তিন জন আছে যাদের নাম উঠতে পারে। কিন্তু বোর্ডের উচিত আরও দু’তিনটে মরসুম অপেক্ষা করা।” আজহারউদ্দিনও মনে করেন, ধোনিকেই অধিনায়ক রাখা উচিত।
আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, ধোনি ইতিমধ্যেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন যে, ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে হলে তাঁকে হয়তো দু’-এক বছরের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। শুধু অধিনায়ক হিসেবে নয়, ব্যাটসম্যান হিসেবেও টেস্টে তাঁর খারাপ ফর্ম চলছে। ইংল্যান্ডে চার টেস্টে ৩১.৪৩ গড়ে তিনি করেছিলেন মোট ২২০ রান। অস্ট্রেলিয়ায় তিন টেস্টে করেছেন ১০২ রান। গড় ২০.৪০। আপনি যে বলেছিলেন, ২০১৩-তে যে কোনও এক ধরনের ক্রিকেট ছেড়ে দিতে পারেন? জিজ্ঞেস করা হলে ধোনি বলেন, “২০১৩ হতে এখনও এক বছর বাকি। জানি না অত দিন বাঁচব কি না! এর মধ্যে আইপিএল থাকবে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থাকবে। পিঠোপিঠি আন্তর্জাতিক সিরিজ থাকবে। এটা ঠিক যে, ২০১৩-তে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলব কি না। কারণ আমি যদি না খেলি, আমার জায়গায় যে খেলবে তাকে তো আর ২৫টা ম্যাচ দেওয়া যায় না বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টের জন্য তৈরি হতে?” ধোনি নিজে মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর যাত্রা এখনও শেষ হয়নি। একই সঙ্গে তিনি যোগ করতে চান, “তবে আমি তো আর সিদ্ধান্ত নেব না। অন্যরা ঠিক করবে আমি ভাল না খারাপ।”
টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি অবহেলা করছেন এমন সমালোচনাকেও উড়িয়ে দিয়েছেন ধোনি। বলেছেন, “আমি আগে যে ভাবে খেলতাম, এখনও সে ভাবেই খেলছি। এখনও মনে করি টেস্ট ক্রিকেট হল আসল পরীক্ষা। তবে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অন্যান্য ফর্ম্যাটকে আমি ত্যাগ করি না। কারণ আমি মনে করি সমস্ত ফর্ম্যাটের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে।” |