নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
দলের অন্দরে ‘কোন্দল’ কোনও মতেই বরদাস্ত করবে না তৃণমূল। চুঁচুড়ায় এসে সে কথা ‘স্পষ্ট’ করে গেলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা দলের হুগলি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু বলেন, “দলের মধ্যে ছোট ছোট কারণে বিবাদ করে দলকে দুর্বল করা যাবে না। এমন করলে দল তাকে রেয়াত করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে দলটাকে ভালবাসতে হবে।”
এই জেলায় ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নানা ভাবে ভোগাচ্ছে তৃণমূলকে। বিশেষ করে আরামবাগ মহকুমা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘ঘর গোছানোর’ জন্য এখন থেকেই উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল। সেই কাজেই মঙ্গলবার চুঁচুড়ায় এসেছিলেন শিল্পমন্ত্রী। জেলার মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ ও প্রথম সারির নেতাদের নিয়ে এ দিন চুঁচুড়া পুরসভার সভাগৃহে বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই পার্থবাবু আরও বলেন, “কোনও রকম অসভ্যতা বরদাস্ত করা হবে না। সরকারি কাজে সহযোগিতা করতে হবে।”
২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘হোমওয়ার্ক’ এখন থেকেই শুরু করে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার এই বিশ্বস্ত সহকর্মীটি। |
পার্থবাবু এ দিন জানিয়ে দেন, যে সব পঞ্চায়েতে তাঁদের দল ক্ষমতায় আছে, সেখানে কাজের মূল্যায়ন দ্রুত সেরে ফেলতে হবে। কোথায় সাফল্য, তার খতিয়ান দরকার। কোথায় কোথায় দুবর্লতা, তাকেও চিহ্নিত করতে হবে। সেই মতো পদক্ষেপ করতে হবে। পঞ্চায়েত স্তরে কাজে কোনও সমস্যা হলে প্রয়োজনে দলের উপরের সারির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করারও ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েতের কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলি চাঙ্গা করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে এই জেলা অনেকটাই পিছিয়ে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই তথ্য। জেলা জুড়ে সেই কাজে অগ্রগতি আনতে সম্প্রতি উদ্যোগীও হয়েছে প্রশাসন। পার্থবাবু বলেন, “একশো দিনের কাজে কিছু সমস্যা আছে এখানে। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি।”
তিনি আরও জানান, পঞ্চায়েত ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে আগামী দিনে ব্লক-স্তর থেকে শুরু করে জেলা-স্তর এবং রাজ্য-স্তর পর্যন্ত এ ধরনের বৈঠকে বসবে দল। তবে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাইক বাজিয়ে কোনও সভা হবে না। এই সময় মাধ্যমিক পরীক্ষা চলবে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই রাজ্য-স্তরে ‘নির্দেশ’পাঠিয়েছেন। পরীক্ষা শুরুর আগের কয়েকটা দিনও ছাত্রছাত্রীরা পড়ায় ব্যস্ত থাকে। এই সময়েও মাইক বাজিয়ে সভা হবে না বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু।
সিঙ্গুরের জমি নিয়েও এ দিন প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী। সিঙ্গুরে জমি অনিচ্ছুক চাষিদের ফেরত দেওয়া যাবে কিনা, তা এখন আদালতের বিচারাধীন। কিন্তু যদি আদালতের রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে যায়, তা হলে যাতে জমি চাষিদের হাতে তুলে দিতে দেরি না হয়, সে জন্যও ‘কাজ এগিয়ে’ রাখতে চান পার্থবাবু।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারে আসার পরেই সিঙ্গুরে জমির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখন আদালতের উপরে ভরসা রাখতেই হচ্ছে। সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে।” |