|
|
|
|
বিতর্ক... |
বিতর্ক: ডায়েট করিয়া হায় কে বাঁচিতে চায় |
পক্ষে |
দু’চামচ তেলে লুচি ফোলে না |
• আলু খেয়ো না, সুগার হবে, লুচি-পরোটা খেয়ো না, মোটা হয়ে যাবে। সুস্থ নীরোগ হয়ে বাঁচতে গেলে মিষ্টি, পাঁঠার মাংস নৈব নৈব চ। এই সব ডাক্তারি নিদান মেনে চলা কী দুঃসহ, তা ভোজনরসিক বাঙালিমাত্রই হাড়ে হাড়ে টের পায়। পৌষ মাসে দুধপুলি আর পাটিসাপ্টা ছেড়ে অরুচিকর করলা আর কাঁচকলা খেয়ে বেশি দিন বেঁচে থেকে আমরা কী এমন স্বর্গডিম্ব প্রসব করব? তাই আমবাঙালির জীবনদর্শনই হল ‘খাও পিও জিও’। ‘যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ এই চার্বাক মতকে মেনে বাঙালি ডায়েট করে জিরো ফিগার হতে চায় না।
ডায়েটের গুণে (থুড়ি দোষে) লোকে এখন আশির আগে মরতেই চায় না। ট্রেনে-বাসে, রেশনে-বাজারে সর্বত্র থিকথিকে ভিড় আর লম্বা লাইন। দুর্বিষহ অবস্থা! ডায়েট করে বাঁচতে চাইলে দেশ ও দশের সমূহ বিপদ। এক দিকে দেশের অন্ন ধ্বংস, বাসগৃহের জন্য বনভূমি লোপাট, আর এক দিকে পেনশন দিতে দিতে সরকারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা। সুতরাং, ডায়েটের জিরো ফিগার নয়, ঘি-কাবাব আর মোয়া-ভেটকির স্থূলবপু দামোদর শেঠই বর্তমান সমাজের একান্ত কাম্য।
অমরেন্দু মজুমদার, সূর্যসেননগর, ডানকুনি, হুগলি
• আপনার মধ্যপ্রদেশের বাড়বাড়ন্ত দেখিয়া স্ত্রী আপনাকে জানান দিলেন যে, এ বার কিছু একটা করা উচিত। অগত্যা কোনও এক সন্ধেবেলায় যাঁহার দ্বারস্থ হইলেন... ইহারা কথা বলেন কম, হাসেন কম, দু’পাশে মাথা নাড়িয়া ‘হবে না/ চলবে না’ বলেন অনেক বেশি। আপনার কাকুতিমিনতির গলা টিপিয়া, ভ্রূ-যুগল কুঞ্চিত করিয়া মাঝপথে বলিয়া উঠিলেন: ‘দু’চামচ তেল, ব্যস।’ আপনি হতাশ হইয়া ভাবিতে বসিলেন। দু’চামচ তেলে ফুলকো লুচি আর বেগুন ভাজা করা সম্ভবপর কি না, অথবা, যে সাইজের পাত্রের এক পাত্র ভাত আপনাকে খাইতে বলিলেন, খুঁজিলে হয়তো সেই রকম একটি আপনার পুত্রের অন্নপ্রাশনের উপহারের ঝোলায় পাওয়া গেলেও যাইতে পারে, নচেৎ কুত্রাপি নয়। ফিরিবার পথে আপনার মা’র কথা মনে পড়িল। পাটিসাপ্টা, পুলিপিঠে, পায়েসের ‘অতিরিক্ত ক্যালরি’ আপনার স্মৃতিকে চনমন করিয়া চাগাইয়া তুলিল। হঠাৎ আপনার মাথায় রক্ত চড়িল, আর পর পর ভাসিয়া উঠিল দুমড়াইয়া-মুচড়াইয়া যাওয়া রেলকামরা, কোনও এক অসহায় রুগির আপ্রাণ বাঁচিতে চাহিবার চেষ্টা, আর চোলাই গিলিয়া লাট ধরিয়া পড়িয়া থাকার দৃশ্য। আপনার মনে পড়িল আপনি বাঁচিয়া আছেন। কিন্তু আগামিকাল? উত্তর খুঁজিতে গিয়া অন্ধকার নামিল। আপনি ‘পরামর্শ’-পত্র ছিঁড়িয়া উড়াইলেন আর হঠাৎ মন খুব ভাল হইয়া যাইবার আনন্দে মুখে একগাল হাসি লইয়া বাড়ি ফিরিতে ফিরিতে স্বগতোক্তি করিয়া বসিলেন, ‘খাব দাব কল-কলাব, ইহাই জীবন।’
কুণাল দাস। আসানসোল
|
|
• ডায়েট-বাতিকগ্রস্তরা বলবেন যে, খাওয়া কমাও, ক্যালরি ঝরাও, নয়তো মেদ বৃদ্ধি পাবে। তাঁরা ভুল বলবেন। সুকুমার সেন, স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে এখনকার বলিউডের নামী কোরিয়োগ্রাফার-সহ অসংখ্য মানুষের কর্মতৎপরতা ও কর্মদক্ষতার দৃষ্টান্ত পেশ করে। এই বাতিকবাবুদের যুক্তি ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায়। শরীর নেবে না বলে পিছপা হয়ে ‘ডায়েট অভ্যেস’ নয়, বরং জীবনের শুরু থেকেই সমস্ত সুস্বাদু অভিজ্ঞতা যাতে চেটেপুটে নেওয়া যায়, সে ভাবেই শরীরকে তৈরি করা দরকার। দরকার বেশি জল খাওয়া, অনেক পরিশ্রম করা, ভাল হজম করার অভ্যেস। অন্তরাত্মাকে খামখা অতৃপ্ত রেখে, খিটকেলে লোক হয়ে বাঁচা চরম নির্বুদ্ধিতা! যাঁরা ডায়েট করেন না, তাঁরা সহিষ্ণু ও উদারমনস্ক হন।
শঙ্খমণি গোস্বামী। নোনাচন্দনপুকুর, কলকাতা-১২২ |
|
|
|
বিপক্ষে |
বেশি করেই খান, তবে সবজি |
• শিরোনাম-পংক্তিটি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে’ স্মরণ করায়। কিন্তু দু’টি ব্যাপারে বেশ পার্থক্য আছে। পরাধীনতা, প্রকৃতপক্ষেই কোনও দেশ, জাতি বা ব্যক্তির কাছে জীবন্মৃতপ্রায় অবস্থা। কিন্তু ‘ডায়েট’ করার তাৎক্ষণিক নৈরাশ্য ও আত্মবঞ্চনা আজকাল অধিকাংশ স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তির কাছে সুস্বাস্থ্যের আনন্দময় সম্ভাবনার তুলনায় তুচ্ছ হয়ে যায়। বরং ‘কষ্ট করিলে কেষ্ট মেলে’ নীতিতেই তাঁরা বিশ্বাসী। নিরামিষাশী ব্যক্তিরা দীর্ঘায়ু হন। প্রাচীন সাধু-সন্ন্যাসীরাও আহারে সাত্ত্বিকতা ও সংযমে দীর্ঘায়ু হতেন। আজকের যুগে হাইপারটেনশন, হাই ব্লাড সুগার, ওবেসিটি, হার্ট-সমস্যাক্লিষ্ট মানুষদের পরিণত ও বিবেচক মানসিকতার কাছে ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ দর্শন হার মানে।
রূপশ্রী দত্ত। কলকাতা-১৩
|
|
• সবাই তো আর পটলডাঙার টেনিদা নয় যে আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট পর্যন্ত খেয়ে বেমালুম হজম করে ফেলবে! ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, থানকুনি জেলুসিল খেয়ে শুধু চলি’ এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে জিভের বিন্দুমাত্র সংযম না দেখিয়ে ফাস্ট-স্লো সব ধরনের জিভে-জল-আনা মশলাদার খাবার বেহিসাবি ভাবে খেয়ে এই অমূল্য জীবনটার সর্বনাশ ডেকে এনে কী লাভ? স্বাস্থ্য আর সাফল্য একই থিয়োরিতে চলে। স্বাস্থ্য খারাপ হলে আর সাফল্য কমে গেলে কেউ ফিরেও তাকাবে না। তাই শরীরটা যখন আপনার নিজের, তখন একটু কষ্ট স্বীকার করে ডায়েট-চার্ট মেনে চলে সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকলে ক্ষতি কী?
অরূপরতন আইচ। রাজীব গাঁধী রোড, কোন্নগর, হুগলি
• এ বাজারে বাঁচার থেকে মরার খরচ বেশি। শিব্রাম চক্রবর্তী তাই বেঁচে থাকলে অবশ্যই লিখতেন ‘খেয়ে নয়, না খেয়েই মরা ভাল’। ঠিক ঠিক ডায়েট না মেনে খাওয়াদাওয়া করার ফলে আমাদের সুগার, রক্তচাপ বৃদ্ধি, লিপিড প্রোফাইল বৃদ্ধি, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি প্রভৃতি প্রতিনিয়তই ভোগাচ্ছে। তা ছাড়া, কুকিং মিডিয়াম-এর গণ্ডগোলে গ্যাস্ট্রিক আলসার বা অম্বল তো আমাদের নিত্যসঙ্গী। বেপরোয়া খাওয়াদাওয়া করে, মাসে মাসে মুঠো মুঠো টাকা ওষুধের জন্য খরচ করে বেঁচে থাকার কোনও যৌক্তিকতা আছে কি? তাই, ডায়েট করে অবশ্যই বাঁচা উচিত। আর সাবেক খাবারের স্থান নিয়েছে ফাস্ট ফুডের স্রোত। তাই বলি, ডায়েট করিয়া
অবশ্যই বাঁচিতে চাই, বে-ডায়েটি হইয়া মরার আগে মরিতে চাই না।
পল্টু ভট্টাচার্য। রামরাজাতলা, হাওড়া
• শরীর যখন সুস্থ থাকে, তখন অনেকেই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ও-সব ডায়েট-ফায়েট করতে পারব না, যত দিন বাঁচব জমিয়ে খেয়ে যাব ভালমন্দ। এমন যাঁদের বক্তব্য, বলাই বাহুল্য, তাঁরাই দেখেছি শাক-সবজি ছোঁন না। তাঁদের কাছে ভাল খাদ্য মানে ঘি-মাখন, খাসির মাংস, মদ, কোল্ড ড্রিংকস, বিভিন্ন ফাস্ট-ফুড ইত্যাদি এবং অপরিমিত। হয়তো ভাত খেলেন আড়াইশো-তিনশো গ্রাম চালের, অথবা রুটি হলে দশ-বারোটা। সঙ্গে ঘি-মাখন, দুধ-গুড় কিংবা খান পনেরো রসগোল্লা। অপরিমিত এমন খেয়ে ভোজনরসিক সাজবার মানে হয় না। খেয়ে খেয়ে যখন সুগার কিংবা হার্টের ব্যামো হবে, অস্বাভাবিক রকম ওজন বেড়ে হাঁটু যখন আর শরীর-ভার বইতে পারবে না, তখন আফসোস আর অনুশোচনায় বলতে হবে কী ভুল করেছি, রাক্ষসের মতো খেয়ে!
সবই খাওয়া যায় পরিমাণ মতো। ফাস্ট-ফুড, বেশি ভাজাভুজি, কোল্ড ড্রিংকস, বেশি মিষ্টি, মদ, অন্যান্য তৈলাক্ত খাবার না খেয়ে, প্রতিদিন শাক-সব্জি মাছ-ডাল এবং পরিমিত শর্করা (ভাত কিংবা রুটি) আর দু’-একটা ফল খেলেই যথেষ্ট। তা হলে আর অঙ্কের নিয়মে ডায়েট না করলেও চলবে।
সাধন বিশ্বাস। অম্বরপুর, মুড়িঘাটা, উঃ ২৪ পরগনা |
|
|
মার্চ মাসের বিতর্ক |
জারোয়াদেরও দরকার উন্নয়নের সুযোগ |
আপনার চিঠি পক্ষে না বিপক্ষে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করুন।
চিঠি পাঠান ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই ঠিকানায়
মার্চের বিতর্ক,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|
|