সম্পাদকীয় ২...
ঘরে-বাহিরে
ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অবস্থাকে মাত্র একটি শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন ইমরান খান ‘ধারাবাহিক’! ক্রমান্বয়ে আটটি টেস্ট ম্যাচ হারা নেহাত মুখের কথা নহে। ইমরান সুরসিক, ফলে ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান হাঁড়ির হালটি তিনি রসিকতায় মুড়িয়া পেশ করিয়াছেন। তবে, সেইখানেই ছাড়িয়া দেন নাই। তাঁহার পরামর্শ, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন। তাহার জন্য দেশের সেরা ছয়টি দলকে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলিতে হইবে। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের অনুরূপ ব্যবস্থা। ইমরানের এই পরামর্শে এক ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিহিত আছে। ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটকে যে ভাবে দেখা হয়, সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেট নিতান্তই দুয়োরানির সন্তান যেন না থাকিলেও হয়। মনোভাবটি স্বয়ম্ভূ নহে, ক্রিকেট-কর্তারাই এই মনোভাবটি তৈরি করিয়া দিয়াছেন। ফলে, যাঁহারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের স্থান পাকা করিয়া ফেলিয়াছেন, তাঁহারা তো বটেই, এমনকী জাতীয় দলে যাঁহারা অপেক্ষাকৃত তরুণ, তাঁহারাও আর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলিতে গা করেন না। ভারতীয় দর্শকরা তারকাহত যে ময়দানে তারকা নাই, সেই ময়দানে দর্শকও নাই। দর্শক না থাকিলে বিজ্ঞাপনদাতাও নাই। ফলে, রঞ্জি ট্রফি, দলীপ ট্রফি থাকিল না গেল, তাহা লইয়া কাহারও মাথাব্যথা নাই।
এই অবস্থাটি বদলানো প্রয়োজন। ঘরোয়া ক্রিকেট অনেকগুলি কারণে জরুরি। প্রথমত, এই ময়দানই ভবিষ্যতের তারকাদের আঁতুড়ঘর। ঘরোয়া ক্রিকেট যদি তাহার প্রাপ্য মনোযোগ না পায়, তবে নূতন খেলোয়াড় তুলিবার প্রক্রিয়াটিও বিঘ্নিত হইবে। ভারতে তাহাই হইতেছে। টি টোয়েন্টি আর ক্রিকেট এক খেলা নহে। ফলে, আই পি এল-এর মাঠ হইতে ক্রিকেটার তুলিবার যে প্রচেষ্টাটি দেখা যাইতেছে, তাহার ফলে হিতে বিপরীত হইবারই সম্ভাবনা। ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়ার দ্বিতীয় কারণ, এই খেলাগুলি যদি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় তবে উঠতি খেলোয়াড়রা সেই পরিবেশে অভ্যস্ত হইতে পারেন। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সহিত আন্তর্জাতিক মানের এতই ফারাক যে নূতন খেলোয়াড়রা সেই মঞ্চে কূলকিনারা পায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
ঘরোয়া ক্রিকেটকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়ার একটিই উপায় দেশের সব খেলোয়াড়কে ঘরোয়া খেলায় নামিতে বাধ্য করা। সচিন তেন্ডুলকর বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অথবা অন্য কোনও নামজাদা খেলোয়াড় কাহারও ক্ষেত্রেই এই নিয়মের ব্যতিক্রম হইবে না। ভারতে ঘরোয়া খেলার মরসুম নভেম্বর হইতে ফেব্রুয়ারির চারটি মাস। এই সময় ভারতীয় দল কোনও বিদেশ সফরেও যাইবে না। যদি অন্য কোনও দেশের দল ভারতে খেলিতে আসিলে টেস্ট খেলা হইবে, নচেৎ এই সময় ভারতীয় ক্রিকেটাররা রঞ্জি ট্রফি খেলিবেন। বৎসরের অন্য কোনও সময় আন্তর্জাতিক সফর হইবে। সেরা খেলোয়াড়রা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলিলে স্বভাবতই খেলার মান বাড়িবে, আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হইবে। তাহা উঠতি খেলোয়াড়দের পাঠশালার কাজ করিবে। তাঁহারা দেশের সেরা খেলোয়াড়দের সান্নিধ্য পাইবেন, তাঁহাদের খেলা নিকট হইতে দেখিয়া, তাঁহাদের সহিত আলোচনা করিয়া নিজেদের উন্নতিসাধন করিতে পারিবেন। বিদেশি খেলোয়াড়রাও আসিতেই পারেন। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে যদি বিদেশিরা খেলিতে আগ্রহী হন, ভারতের রঞ্জি ট্রফিতেই বা আগ্রহী হইবেন না কেন? ঘর সামলাইবার কাজটি যথার্থ ভাবে করিলে ভারতীয় ক্রিকেটের পুনরুজ্জীবন সম্ভব। নচেৎ, ইমরান খানের ভাষায়, হারের অসামান্য ‘ধারাবাহিকতা’ বজায় থাকিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.