|
|
|
|
চিন্তা বিপুল ঘাটতি |
রেল ভাড়া দেখতে পৃথক সংস্থা চান দীনেশ |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
আয় কমছে হু হু করে। পণ্য পরিবহণেও ছোঁয়া যায়নি লক্ষ্যমাত্রা। বেতন-পেনশন ও অন্যান্য খাতে বাড়ছে খরচ। প্রায় শেষ হওয়ার মুখে সঞ্চিত তহবিল। সার্বিক ভাবেই আর্থিক দিক থেকে ধুঁকছে রেল মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে আজ ফের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে পরোক্ষে সওয়াল করলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর যুক্তি, যাত্রী ভাড়া বাড়া উচিত কী না, তা খতিয়ে দেখুক একটি পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হোক রেল মন্ত্রক। দীনেশ আজ এই মন্তব্য এমন একটি সময়ে করলেন, যখন মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
কী বলছে রিপোর্ট? যাত্রী কিংবা পণ্য পরিবহণ রেলের আয় বৃদ্ধি হওয়া তো দূর অস্ত, বরং তা দৌড়চ্ছে লোকসানের রাস্তাতেই। কমেছে অন্যান্য খাতে আয়ও। সার্বিক ভাবে, আর্থিক বছরের প্রথম আট মাসে আয় খাতে একটি ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি রেল। কিন্তু উপর্যুপরি বেড়েছে খরচ। পরিকাঠামোগত কাজে খরচ বৃদ্ধি তো হয়েছেই, বেতন-পেনশন খাতে মন্ত্রকের বোঝা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। রিপোর্ট বলছে, শুধু পেনশন খাতেই আট মাসে প্রায় অতিরিক্ত ১৩০৮ কোটি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে মন্ত্রকের ভাঁড়ার থেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাত পড়েছে সঞ্চিত অর্থে। লক্ষ্যমাত্রা ৪১০৫ কোটি টাকার হলেও বর্তমানে মন্ত্রকের ভাঁড়ারে রয়েছে মাত্র ১৪০৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আজ ফের একবার ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা উস্কে দিলেন দীনেশ।
উস্কে তিনি দিলেন বটে, কিন্তু প্রশ্ন হল, আদৌ বাজেটে ভাড়া বাড়বে কী? কেন না রেলে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে নীতিগত আপত্তি রয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর আগেও একাধিক বার নেত্রীর কাছে এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন দীনেশ। এই পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে আজ দীনেশ বলেন, “যেমন সাংসদের বেতন কী হবে, তা দেখতে একটি কমিটি রয়েছে। তেমনই রেলের যাত্রী ও পণ্য ভাড়া কী হওয়া উচিত, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা উচিত।”
যদিও ওই সংস্থা কবে, কী ভাবে গঠন হবে বা ওই সংস্থা কোন মন্ত্রকের কাছে জবাবদিহি করবে, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি দীনেশ।
|
আয় কমেছে |
যাত্রী ভাড়ায়
২১৯৫ কোটি
(সংশোধিত বাজেটে)
পণ্য পরিবহণে
১৯৬৪ কোটি
(সংশোধিত বাজেটে)
পেনশন খাতে খরচ
১০,০১৮ কোটি
(হওয়ার কথা ছিস ১৪,৭১০ কোটি)
অভ্যন্তরীণ আয় ঘাটতি
১২৯৮ কোটি
রেলের পরিকাঠামো
উন্নয়নে খরচ বেড়েছে
১১৩৯ কোটি টাকা |
|
বাস্তব বলছে, অবিলম্বে বাড়া উচিত রেলের ভাড়া। গত ন’বছর রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতায় রেলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটতে চাননি কোনও রেলমন্ত্রীই। অথচ খরচ বেড়েছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। রেলে ভাড়া বৃদ্ধি করা সময়ের চাহিদা এই যুক্তি গত দু’-আড়াই বছর ধরে রেল মন্ত্রককে বলে আসছে অর্থ মন্ত্রক ও যোজনা কমিশন। এমনকী রেলের আধুনিকীকরণ কমিটির চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদাও সমস্ত শ্রেণিতে এককালীন প্রায় ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ফলে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রেলের ঘরে জমা পড়ার কথা। আধুনিকীকরণ কমিটির ধাঁচে যে দীনেশের নির্দেশে গঠিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটিও নিরাপত্তা খাতে অর্থ বাড়ানোর জন্য যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব রেল মন্ত্রকে দিতে পারে বলে সূত্রের খবর।
ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য সব মহল থেকে চাপের মুখে পড়ে আজ দিল্লিতে ফিকি-র একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ভাড়া প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ার বিষয়ে সওয়াল করেন দীনেশ। তাঁর যুক্তি, “এমন একটি সংস্থা হোক, যারা বলবে, ভাড়া বাড়া উচিত কী না। তবে সেটি স্বাধীন সংস্থা হবে না রেলের অধীনে থাকবে, তা পরে ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু আমাদের তো শুরু করতে হবে।” এর পাশাপাশি আজ রেলের যাত্রী পরিষেবা উন্নত করার জন্য রেল বোর্ডকে ঢেলে সাজানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন দীনেশ। তাঁর কথায়,“ রেলে যাত্রী পরিষেবা দেখার জন্য একটি আলাদা বোর্ড মেম্বার থাকুক।” তবে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যে ভাবে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই আজ মন্তব্য করেন রেলমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, রেল মন্ত্রককে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত। |
|
|
|
|
|