ঘেরাও প্রধান শিক্ষক
স্কুলের সংস্কার ঘিরে বেনিয়মের অভিযোগ
রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ ‘চুরি’ করে গ্রামের স্কুলের সংস্কারের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে রামপুরহাট থানার বিনোদপুর গ্রামের কিছু বাসিন্দা সোমবার রাতে ওই স্কুলের অফিস ঘর ও অন্য একটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষকদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখান। পরে প্রধান শিক্ষক এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলে গ্রামবাসীরা বিদ্যালয়ের তালা খুলে দেন।
স্থানীয় কাবিলপুর বিনোদপুর প্রাথমিক স্কুল ঘিরে বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামবাসীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। সোমবার রাতে সেই ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। দু’বছর আগে স্কুলটি জুনিয়র হাইস্কুলের মর্যাদা পেয়েছে। চালু হয়েছে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি। কিন্তু পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়ন হয়নি। ইতিপূর্বে সীমানা প্রাচীর ও অন্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবিতে স্কুলে নানা ঝামেলাও হয়েছে। গ্রামবাসী তথা অভিভাবক সমিরুদ্দিন শেখ, হুমায়ুন কবীর, আমিরুল ইসলামদের অভিযোগ, “ছাত্রছাত্রীর তুলনায় শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য অধিকাংশ শিক্ষকই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। প্রধান শিক্ষকও স্কুলের কোনও উন্নয়নমূলক কাজে গ্রামবাসীদের মতামত নেন না। স্কুলে কোনও কমিটি নেই। এর ফলে পদাধিকার বলে গ্রামশিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসাবে স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক পঞ্চায়েত সদস্য হুমায়ুন চৌধুরী নিজের ইচ্ছায় বিদ্যালয়ের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ করাচ্ছেন। বরাদ্দ অর্থের কিছু টাকা তাঁকে দেওয়ার দাবিও করেছেন।”
প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
তাঁদের আরও অভিযোগ, “সোমবার রাতে বিদ্যুৎ চুরি করে ওই পঞ্চায়েত সদস্য বিদ্যালয় সংস্কারের কাজ করাচ্ছিলেন। কাজটি করার জন্য কোনও প্রস্তাবও গৃহীত হয়নি।” এমনকী সংস্কারের কাজে ব্যবহৃত ইট, বালি, পাথর ওই পঞ্চায়েত সদস্য বাইরে থেকে না কিনে স্কুল ভবনের সামনে নির্মীয়মাণ একটি বাড়ি থেকে নিচ্ছেন বলেও গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ। যদিও জেলা শিক্ষা দফতর বা প্রশাসনের কাছে এ সব নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি এলাকার বাসিন্দারা। রামপুরহাট দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক কিশোরকুমার মণ্ডল বলেন, “ওই স্কুলে ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নেব।”
এ দিন সকালে বিনোদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামবাসীরা প্রধানশিক্ষক আনন্দমোহন মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ চুরি করে কেন স্কুলের কাজ করা হচ্ছে। কেনই বা ডিসেম্বরে নিয়মিত মিড-ডে মিল দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষকের কাছে তাঁরা দাবি করেন, অবিলম্বে পঞ্চায়েত সদস্যকে ডেকে এনে প্রশ্নগুলির জবাব চাইতে হবে। আনন্দবাবু সব বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ তুলে নেন।
প্রধান শিক্ষক পরে বলেন, “সমস্ত শিক্ষক মিলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল স্কুলের মেঝে সংস্কার করা হবে। সেই মতো সভাপতি হিসাবে ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে জানানো হয়েছে। তবে আমরা রাতে কাজ করতে বলিনি।” তাঁর ও অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি প্রসঙ্গে আনন্দমোহনবাবুর বক্তব্য, “আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করি। বিভিন্ন বিষয়ে গ্রামবাসীর মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্কুলের বিভিন্ন কমিটি গঠন কিছু প্রশাসনিক কারণে আটকে আছে। খুব তাড়াতাড়িই তা কেটে যাওয়ার কথা।” স্কুলের উন্নয়নের খাতে থাকা ৪ লক্ষ ৯ হাজার টাকায় ভবিষ্যতে কাজ হবে বলেও তাঁর আশ্বাস।
স্থানীয় দখলবাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিনোদপুর সংসদের সদস্য হুমায়ুন চৌধুরী অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “কখনওই বরাদ্দ অর্থের টাকা দাবি করিনি। বিদ্যুৎ চুরি করে কাজ করানোর অভিযোগও ঠিক নয়। চার্জার লাইট দিয়ে কাজ চলছিল।” রাতে কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, “সামান্য একটি কাজ ছিল। এর জন্য একজন রাজমিস্ত্রিকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। ওই মিস্ত্রির সুবিধা অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যায় কাজ করা হচ্ছিল। গ্রামবাসীদের কয়েক জনের বাধায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.