স্কুলে ঘরের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। পড়াশোনা করতে অসুবিধায় পড়ে তাঁরই প্রিয় ছাত্রীরা। টাকার অভাবে নতুন ঘর তৈরির কাজ শুরু করাও যাচ্ছিল না। তাই অবসর নেওয়ার দিন নতুন ক্লাসঘর গড়ার জন্য স্কুল পরিচালন সমিতির হাতে এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের ঊষাঙ্গিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্যামা মজুমদার।
মাধ্যমিক স্তরের এই স্কুলে ছাত্রী-সংখ্যা ৭৫২। সেই অনুপাতে স্কুলে ঘর পর্যাপ্ত নেই। কয়েক বছর আগে স্কুলের শিক্ষিকা ও শিক্ষা-কর্মীরা ৫ কাঠা জায়গা কিনেছিলেন। সম্প্রতি সেখানেই কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন অর্থ প্রকল্প ও সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকায় তিনটি ঘর তৈরি হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো ও নতুন দু’টি ভবন মিলিয়ে স্কুলে ঘরের সংখ্যা ৮টি হলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লাবণ্যপ্রভা যশ (ঠাকুর) বলেন, “এখনও দু’টি বড় ঘর দরকার। এই অবস্থায় আমাদের শিক্ষিকা শ্যামা মজুমদার এক লক্ষ টাকা দান করায় উপকার হল। আর শ্যামাদেবী জানান, স্কুলের কাজ শুরু হলে প্রয়োজনে তিনি আরও আর্থিক অনুদান দেবেন। |
শ্যামাদেবী এক সময় শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান ছিলেন। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসাবেও দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। শ্যামাদেবীর দাদা দীপক মজুমদার বর্তমানে শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান। স্থানীয় গাঙ্গুলিডাঙা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে অবসর নেওয়ার সময় স্কুল উন্নয়নের জন্য তিনিও এক লক্ষ টাকা দান করেছিলেন।
তা হলে কি দাদার দেখানো পথেই হাঁটলেন শ্যামাদেবী? উত্তরে অবিবাহিতা শ্যামাদেবী বললেন, “সারা জীবন ছাত্রদের সঙ্গে থাকার ফলে তাঁদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা হয়। আর সেই কারণেই আমি ওই টাকা দান করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” শ্যামাদেবীর বিদায় সংবর্ধনায় উপস্থিত বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্যামাদেবী যে কাজ করলেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
তবে স্কুল উন্নয়নে দান করেই ক্ষান্ত থাকেননি শ্যামাদেবী। এ দিন স্কুলের ৭৫২ জন ছাত্রী-সহ ৮০০ জনের ‘মিড ডে মিল’-র খরচের ভারও নেন তিনি। এ দিন ‘মিড-ডে মিল’-র মেনু ছিল ভাত, আলুভাজা, নবরত্ন, মুরগির মাংস, মিষ্টি, পাঁপড়, আইসক্রিম, মুখশুদ্ধি।
বেরিয়ে আসার সময়ে স্কুলের ছাত্রীরা যখন ঘিরে ধরে শ্যামাদেবীকে তখন তাদের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে তিনি বলেন, “এত ভালবাসা পাব বলেই আইনে স্নাতক হয়েও স্কুলে পড়াতে এসেছিলাম।” |