আত্মঘাতীর ঋণশোধে কংগ্রেস
গলসিতে ধান কেনার শিবিরে মিলল না সাড়া
চার দিন আগে সরকারি হারে ধান কেনার দাবিতে হওয়া পথ অবরোধে আটকে পড়ে শিবির করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। বর্ধমানের সেই গলসিতে ধান কেনার শিবিরে প্রথম দিন তেমন লোকই হল না। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেও পৌঁছল না ধান সংগ্রহ।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, চাষিদের ঘরে বিপুল ধান জমে আছে বলে যে ‘প্রচার’ চলছে, তা ঠিক নয়। আসলে ফড়েরাই চাষিদের ‘প্ররোচিত’ করে পারাজের কাছে ওই অবরোধ করিয়েছিল। কিন্তু চাষিদের অনেকেই বলছেন, সরকার যে তাঁদের এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ধান কিনতে নেমেছে, তা তাঁরা জানতেনই না।
গত শুক্রবার অবরোধস্থল থেকেই খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মলয়বাবু ঘোষণা করেন, ৩১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিবির করে ধান কেনা হবে। সেই মতো মঙ্গলবার সকাল থেকে গলসি ১ ব্লকে ১০টি সমবায় ধান কিনতে শুরু করেছে। খাদ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, বিকেল পর্যন্ত ১২৪ জন চাষি মোটে ১১০০ বস্তা (৬০ কেজি) ধান দিয়েছেন। প্রতি দিন কুড়ি হাজার কুইন্টাল লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে, অথচ প্রথম দিনের সংগ্রহ মাত্র ৬৬০ কুইন্টাল। খাদ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “আসলে ধান বিক্রি না হওয়ার সমস্যা যত বড় করে দেখানো হচ্ছে, সেটা তত বড় নয়। গলসিতেই আমরা এমন ছ’জনের নাম জানতে পেরেছি, যাঁদের জমি নেই বললেই চলে অথচ একাধিক চালকলে কয়েকশো বস্তা ধান বিক্রি করেছেন। আমার মনে হয়, ওখানে এক শ্রেণির দালাল চাষিদের প্ররোচিত করে পথ অবরোধ করিয়েছিল।” সরকার ধান কেনার প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ায় জমিহীন ধান ব্যবসায়ী তথা ফড়েদের একটা বড় অংশ যে চাপে রয়েছেন, তা অনেকাংশেই সত্য। পারাজে এক ধান ব্যবসায়ী আত্মঘাতী হওয়ায় গত সোমবার তা ফের সামনে আসে।
কাটোয়ায় চালকলের ‘ডিউ স্লিপ’। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু তার মানে কি চাষিদের ঘরে যথেষ্ট ধান জমে নেই? শিবিরের কথা জানাতে যথেষ্ট প্রচার হয়েছে কি?
খাদ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “পারাজের অবরোধে তো নাকি হাজার হাজার চাষি ছিলেন। তাঁদের সে দিনই জেনে যাওয়ার কথা, শিবির খোলা হচ্ছে! তা ছাড়া ধান কেনার আগে মাইকে প্রচার চালানোর কথা। প্রচার তো হয়েছেই। চাষিরা ধান নিয়ে এলেন না কেন?” সিপিএমের কৃষক সভার জেলা সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক মণ্ডল পাল্টা বলেন, “অবরোধের দিন শিবির করার কথা বলা হলেও কোন গ্রামে কোন সমবায় ধান কিনবে, তা কেউই জানতে পারেননি।”
গত ১৯ জানুয়ারি গলসিরই হিট্টা গ্রামে ধানচাষি সুশান্ত ঘোষ আত্মঘাতী হন। তাঁর বাবা বিকাশচন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমাদের বাড়িতেই এখনও ৮০ বস্তা ধান মজুত আছে। কিন্তু ধান কিনতে শিবির হচ্ছে, তা শুনিনি!” বুদবুদের চাষি শিবশঙ্কর ঘোষ বলেন, “ঘরে ১০০ বস্তা ধান নিয়ে বসে আছি। শিবিরের খবর পেলে ছুটে যেতাম।” প্রদেশ তৃণমূল সদস্য পরেশ পালের ব্যাখ্যা, “সকালেই মাইকে ধান কেনার কথা বলা হয়েছে। তাই অনেকে খবর পাননি। আমরা সবাইকে বুঝিয়ে শিবিরে পাঠাব।” ধান কেনা হলেই যে চাষিরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন তা অবশ্য নয়। বহু জায়গায় ধানের দাম বাবদ পাওয়া চেক ‘বাউন্স’ করার খবর মিলছে। কাটোয়ার বেশ কিছু চালকল আবার চেক দেওয়ার বদলে চাষিদের হাতে ‘ডিউ স্লিপ’ ধরিয়ে দিচ্ছে। দু’তিন সপ্তাহ পরে সেই স্লিপ হাতে চালকলে গেলে তবেই মিলছে চেক। কিন্তু তাতে ধান বিক্রির তারিখই থাকছে। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের চাষি কালো মোল্লা, আব্দুল কেবির শেখ বা মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামের শেখ মহসিন, শেখ আনোয়াররা এমনই ‘স্লিপ’ পেয়েছেন। টাকা কবে ঘরে আসবে তা কেউই জানেন না।
ধান দিয়েও চেক না পাওয়ায় গত শনিবারই কেতুগ্রামে ভূতনাথ মণ্ডল নামে এক চাষি আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ। ‘ডিউ স্লিপ’ দেওয়া এক চালকলের মালিক সঞ্জয় দত্ত বলেন, “টাকার জোগান নেই। কিছু দিন পরের তারিখের চেকও দিতে বারণ করা হচ্ছে। তাই ডিউ স্লিপ দিতে বাধ্য হচ্ছি।” নন্দ অগ্রবাল নামে আর এক চালকল মালিকের যুক্তি, “সরকারি গুদাম ফাঁকা না থাকায় আমাদের চাল জমা দিয়ে বিল করতে দেরি হচ্ছিল। তাতে টাকার টান পড়ায় ডিউ স্লিপ দিতে হয়েছে।” তবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনও কারণেই ডিউ স্লিপ দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। ধান কিনে চেকই দিতে হবে।”
তৃণমূলের জোটসঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস প্রথম থেকেই দাবি করছিল, আত্মঘাতী চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের। এ দিন মালদহের গাজলে আত্মঘাতী চাষি দয়াল বর্মনের বাড়িতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। ওঁর ঋণের ৫০ হাজার টাকা প্রদেশ কংগ্রেস মিটিয়ে দেবে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে জেলাশাসকের অফিসের সামনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ সমাবেশে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, “কৃষক ধানের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করছে, এটা বলা যাবে না? এর জন্য কি দিল্লি থেকে সার্টিফিকেট আনতে হবে? আট মাসেই সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে মনে করি না। কিন্তু সমস্যায় জর্জরিত কৃষকের পাশে না দাঁড়িয়ে অন্য গল্প কেন বলা হচ্ছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.