|
|
|
|
দৌড়ে কারচুপির অভিযোগ |
অপবাদে অবসাদে ছাত্রী, তদন্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তুফানগঞ্জ |
স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে কারচুপির সন্দেহে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে চোর অপবাদ দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ায় দেবশ্রুতি দাস নামে ওই ছাত্রী প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ইলা দেবী গার্লস হাই স্কুলে ১৮ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটেছে। ছাত্রীর বাবা মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির দ্বারস্থ হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছাত্রীর বাবাকে নিয়ে বৈঠক করতে উদ্যোগী হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোচবিহার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, “দেবশ্রুতির সাঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সে বারবার বলেছে আমি কি চুরি করেছি? মনে হচ্ছে সততার সঙ্গে দৌড়ানোর পরেও দেওয়া অপবাদ তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” দেবশ্রুতির ঘটনায় মানসিক রোগ চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন। তুফানগঞ্জ মানসিক হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক তথা জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মানসিক চিকিৎসক স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “দেবশ্রুতির সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন। ছোট থেকে চুরি করা অপরাধ জানার পরে সে রকম কিছু না করেও দেওয়া অপবাদ স্পর্শকাতর মনে প্রচন্ড চাপ তৈরি করে। তা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া। অথবা অবসাদ দেখা দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে চামচ দৌড় বিভাগে অংশ নেয় দেবশ্রুতি। প্রথম স্থান অর্জনের পরে চামচ বাঁকা করে সে কারচুপি করেছে সন্দেহ করে এক শিক্ষিকা তাকে চোর অপবাদ দেন বলে অভিযোগ। এর পরে ছাত্রীটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়ে আমল না-পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাত্রীর বাবা দীপককান্তি দাস ২৭ জানুয়ারি লিখিত ভাবে চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির কাছে মেয়েকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ জানান। ঘটনার কথা চাউর হতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা শিক্ষা দফতর নড়েচড়ে বসেছে। অভিভাবকের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাছাই পর্বে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীদের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। চামচে মার্বেল রেখে দৌড়নোর বিভাগে দেবশ্রুতি অংশ নেয়। ওই ছাত্রীর বাবা দীপককান্তিবাবু বলেন, “স্কুল থেকে চামচ ও মার্বেল দেওয়া হয়েছিল। তাই সেটা বাঁকানোর সুযোগ নেই। কিন্তু তার পরেও কারচুপির অভিযোগ তুলে মেয়েকে বাদ দেওয়া হয়। মেয়ে কারণ জানতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা বলেন চুরি তো অনেকেই করে। স্বীকার করে কত জন?” পরিবারের লোকজন জানান, ওই কথা শোনার পর থেকে দেবাশ্রুতি স্কুলে যেতে চাইছে না। কেন চুরির অপবাদ দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন করছে। বাড়িতে মন মরা হয়ে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতির কথা জানানো হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা মিটিং ডেকেও বাতিল করে দেন। এর পরে তাঁরা বাধ্য হয়ে চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির দ্বারস্থ হয়েছেন। ইলাদেবী গার্লস হাইস্কুলের যে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে চোর অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই রীনা দে অবশ্য স্কুল পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা না-করে মন্তব্য করতে চাননি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গীতা দেবনাথ বলেন, “মঙ্গলবার ওই অভিভাবকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অনেক আগে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু সরস্বতী পুজোর জন্য পিছিয়ে দিতে হয়েছে।” কোচবিহারের ডি আই (হাই) মহাদেব শৈব বলেন, “তুফানগঞ্জের এ আইয়ের কাছে ঘটনার খোঁজ নেব।” |
|
|
|
|
|