সিপিএম-কংগ্রেস গোলমালে জখম সাত |
জঙ্গলের কাঠ চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে একদল সিপিএম সমর্থকের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল নকশালবাড়িতে। সোমবার সকালে নকশালবাড়ির মুড়ি বস্তিতে ওই হামলার ঘটনার জেরে ৭ সিপিএম সমর্থক জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬ জনকে নকশালবাড়ি হাসপাতালে এবং সাবিত্রী বর্মন নামে এক মহিলাকে উঃবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় অভিযুক্ত কংগ্রেস সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিতে সিপিএমের পক্ষ থেকে নকশালবাড়ি থানায় দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তোলা হলেও নকশালবাড়ির সিপিএম নেতা গৌতম ঘোষ হুমকি দিয়েছেন, “পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না-করলে এলাকার মিছিল ও বন্ধ পালন করে জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।” নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ তথা কংগ্রেসের সুনীল ঘোষের দাবি, “এটি কাঠ চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিবাদ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও বিবাদ নেই। জখমদের দেখতে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে আমরা নকশালবাড়ি হাসপাতালে যাই। জখমদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সিপিএম অহেতুক এর মধ্যে রাজনীতি টেনে আনছে।” পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুড়ি বস্তির বাসিন্দা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি তথা এলাকার সিপিএম নেতা ধীরেন বর্মন ও তার দুই ছেলের সঙ্গে রবিবার সন্ধ্যায় রথখোলা মোড়ে কয়েকজন কংগ্রেস সমর্থকের গোলমাল হয়। ধীরেনবাবুর সঙ্গে আসবাব তৈরির বেশ কিছু কাঠ ছিল। ওই কাঠ বেআইনি ভাবে টুকুরিয়ার জঙ্গল থেকে কেটে আনা হয়েছে অভিযোগ করে ওই কংগ্রেস সমর্থকেরা টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে দু’পক্ষের বচসার সময়ে ভোজালির খোঁচায় জখম হন অনিল রায় নামে এক কংগ্রেস সমর্থক। সোমবার অনিল রায়ের ছেলে সুরজ মুড়ি বস্তি দিয়ে যাওয়ার সময়ে ধীরেন বর্মনের লোকেরা তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তার পরেই বেঙাইজোত থেকে একদল কংগ্রেস সমর্থক মুড়ি বস্তিতে গিয়ে সিপিএম সমর্থকদের উপরে হামলা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ এবং নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারা। হাসপাতালে যাঁদের ভর্তি করা হয়েছে তার মধ্যে সিপিএম নেতা ধীরেন বর্মনও রয়েছেন। হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূলের নকশালবাড়ি অঞ্চল কমিটির সভাপতি তপন কুণ্ডুও। তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটানো উচিত ছিল। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সিপিএম অহেতুক এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি টেনে আনছে।” অন্যদিকে, সিপিএম নেতা গৌতমবাবুর দাবি, “হামলার পরে চোরাই কাঠের কাহিনি তৈরি করছে কংগ্রেস। পুলিশ তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
|
ভর সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার দায়ে সাত বছর কারাদণ্ড হল এক ব্যক্তির। সোমবার শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক ফার্স্ট কোর্ট) শুভার্থী সরকার ওই রায় দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির নাম নেপাল চক্রবর্তী। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি একহাতে জ্বলন্ত মশাল এবং অন্য হাতে রাম দা নিয়ে আচমকা ওই দোকানে ঢুকে পড়েন। দোকানের মালিক সন্তোষ সরকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতের রাম দা দিয়ে নেপালবাবু কোপ মারেন। রাম দার ঘায়ে সন্তোষবাবুর বুড়ো আঙুল ছিন্ন হয়ে যায়। শরীরের অন্যত্রও চোট লাগে। মেঝেয় ছিটকে পড়ে সন্তোষবাবু যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন সেই সময়ে নেপালবাবু সঙ্গে করে আনা কেরোসিন তেল ঢেলে দেন ওই ব্যবসায়ীর শরীরে। তার পরে জ্বলন্ত মশাল দিয়ে সন্তোষবাবুর শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন। আশপাশের দোকানিরা অবশ্য ঘটনাটি টের পেয়ে সন্তোষবাবুকে উদ্ধার করে শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান। খবর পেয়ে পুলিশ নেপালবাবুকে গ্রেফতার করে। একতিয়াশালে যে বাড়িতে নেপালবাবু ভাড়া থাকতেন সেখান থেকে রাম দা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নেপালবাবু জেল হেফাজতে রয়েছেন। মামলায় মোট ১৬ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের বয়ানে নেপালবাবুই যে হামলা করেছেন তা প্রমাণিত হয়। কেন নেপালবাবু ওই ব্যবসায়ীর উপরে হামলা চালান তার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এক সময়ে নেপালবাবু শিলিগুড়ির বিধান রোড এলাকায় ওই ব্যবসায়ীর ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রীর দোকানের কর্মী ছিলেন। বিধান রোড এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হামলার কয়েক বছর আগে সন্তোষবাবুর দোকান থেকে চাকরি হারিয়েছিলেন ছিলেন। পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও বনিবনা ছিল না। সেই কারণে সন্তোষবাবুর উপরে তিনি খেপে ছিলেন। সরকারি আইনজীবী সমীরণ সূত্রধর এবং সন্দীপ নন্দী জানান, এদিন বিচারক যে রায় দিয়েছেন তাতে ইতিমধ্যেই নেপালবাবু যে কয়েক বছর জেলে কাটিয়েছেন তা সাজার মেয়াদের মধ্যেই ধরা হবে।
|
শ্বশুরবাড়িতে তো নয়ই, চার বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে হোমেও থাকতে চান না নির্যাতিতা গৃহবধূ কবিতা দেবনাথ। কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পুত্র সন্তানকে নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চান। মহকুমাশাসকের কাছে তাই কাজের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে রয়েছেন কবিতাদেবী। সোমবার ওই নির্যাতিতা বধূর হয়ে আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও’র সঙ্গে দেখা করেন তাঁর গ্রামের বাসিন্দা, অসমবঙ্গ যোগী সম্মেলনী সংস্থার প্রতিনিধিরা। বধূর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। মহকুমা শাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “কবিতা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। যদিও আপাতত হাসপাতালে রয়েছেন। তিনি একটি কাজ চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার ২ বিডিওকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।” বিডিও সৌমেন মাইতি জানিয়েছেন, স্থায়ী কোনও কাজের ব্যবস্থা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দৈনিক শ্রমিক, স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে কোনও কাজের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে। এ দিন কবিতাদেবী বলেন, “মহকুমাশাসকের কাছে কাজের আর্জি জানিয়েছি। শ্বশুর বাড়িতে আর ফিরতে চাই না। ওখানে ফিরলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে অত্যাচার করার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সরকারি হোমে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে আমার ইচ্ছে নেই। আমার একটা কাজের ব্যবস্থা না হলে কী করে বাঁচব তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।” ১০ জানুয়ারি বাড়ির কয়েকটি গাছ থেকে সুপারি পাড়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কবিতাদেবীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। শামুকতলার পুলিশ কবিতা দেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
|
মেয়াদ বাড়ানো হল শ্যামল সেন কমিটির |
প্রস্তাবিত ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এ (জিটিএ) তরাই-ডুয়ার্সের কোনও অংশ অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে যে কমিটি গড়া হয়েছিল তার মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়াল রাজ্য সরকার। মহাকরণ সূত্রের খবর, সোমবার সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে জিটিএ-চুক্তির সময়ে গত বছর জুলাই মাসে তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে মোর্চার দাবি খতিয়ে দেখতে ওই কমিটি গড়া হয়। রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, ছ’মাসের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট জমা দিলে সেই অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ করবে। কমিটির কাছে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা দাবিপত্র জমা পড়ে। তা নিয়ে প্রশাসনিক অফিসারদের সঙ্গে কথাও বলে কমিটি। কিন্তু অনেক কাজই অসমাপ্ত থাকায় পূর্ব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি কমিটি। এই পরিস্থিতিতে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা অবশ্য খোলা মনেই দেখছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে প্রশাসনের বাড়তি সময় লাগতেই পারে। তবে আগামী ছ’মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা না পড়লে পাহাড়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে পারে বলে ওই নেতার আশঙ্কা। মোর্চার তরফে অবশ্য সরকারি ভাবে বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া হতে পারে। পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী একাধিক দল অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনেও ‘টালবাহানা’ চলবে বলে অভিযোগ করেছেন।
|
পুলিশের তল্লাশিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল নিষিদ্ধপল্লিতে। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে শিলিগুড়ি থানার খালপাড়ার নিষিদ্ধপল্লিতে। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অভিযোগ, পুলিশ কর্মীরা নিষিদ্ধপল্লির প্রতিটি বাড়ির লোকসংখ্যা হিসেব করছিল। সবার নাম তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করে। তার প্রতিবাদ করেছে তারা। কমিটির পক্ষে মিঠু চক্রবর্তী বলেন, “এখানে যে সব মেয়েরা থাকেন, তাদের অনেকের বিয়ে হয়। সবার নাম প্রকাশ্যে আসুক তা আমরা চাই না। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই পুলিশ জোর করে প্রতিটি বাড়িতে ঢুকে লোকসংখ্যার হিসেব করছিলেন। সবার নাম জানতে চাইছিলেন। বাসিন্দাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে পুলিশ।” পুলিশ জানায়, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এক কিশোরীর খোঁজে তারা এ দিন নিষিদ্ধপল্লিতে তল্লাশি চালান। |