স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ‘বলি’। শালতোড়ার কোলাকুড়ি গ্রামে তান্ত্রিকের ঘর থেকে সদ্যোজাত শিশুর মুণ্ড উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকে অবশ্য ‘নরবলি’ বলতে নারাজ বাঁকুড়ার পুলিশ প্রণব কুমার।
কোলাকুড়ি গ্রামেরই এক বাসিন্দার দায়ের করা খুন ও দেহ লোপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃত তান্ত্রিক লক্ষ্মীকান্ত কর্মকারকে সোমবার বাঁকুড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক এক দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হল না কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার ‘কেস ডায়েরি’ আদালতে জমা না দেওয়ায় পুলিশি হেফাজতের আবেদন বিচারক মঞ্জুর করেননি। ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশ সুপার শালতোড়া থানায় ফোন করে আজ, মঙ্গলবারই ‘কেস ডায়েরি’ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আজই লক্ষ্মীকান্তকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে।
পুলিশ সুপার এ দিন বলেন, “মুণ্ডটি ময়না-তদন্তের জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্টই বলবে, এটি নরবলি কি না।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমাদের ধারণা, এটি খুনের ঘটনা। উদ্ধার হওয়া মুণ্ডটি দেখে স্পষ্ট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই সদ্যোজাতের মাথা কাটা হয়েছে। |
ধৃত ব্যক্তি তন্ত্রসাধনা করে বলেও পুলিশ জেনেছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, তান্ত্রিকের ঘরের অদূরেই এ দিন উদ্ধার হয়েছে সদ্যোজাতের নাড়িও। শিশুটির ধড় এখনও মেলেনি। পুলিশ সুপার বলেন, “জেরার সময় ধৃত তান্ত্রিকের বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ওঁকে পুলিশি হেফাজতে পাওয়া গেলে আরও জেরা করা হবে।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুটিকে খুন করার পরে গলা কাটা হয়েছে বলে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এ দিন কোলাকুড়ি শ্মশানে লক্ষ্মীকান্তের চালাঘরের ভিতরে দেখা গেল, রয়েছে মাঝারি মাপের কালীমূর্তি। এলাকাবাসী খগেন গড়াই, কানাই বাউড়িদের দাবি, “কালীমূর্তির গলাতেই রবিবার দুপুরে ঝোলানো ছিল ওই শিশুর মুণ্ড।” পুলিশ সুপার অবশ্য বলেছেন, “উদ্ধার হওয়া মুণ্ডটি ওই তান্ত্রিকের ঘরের ভিতরে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটের মধ্যে ছিল।”
এ দিন মূর্তির কাছে গিয়ে চোখে পড়েছে শিবের ডান হাতে গাঢ় লাল রং। গ্রামবাসীদের দাবি, “ওটা রং নয়। কাটা মুণ্ড থেকে ঝরা রক্তের দাগ।” পুলিশ সুপারও বলেন, “ঘটনাস্থলে রক্তের মিলেছে। সেটি ওই শিশুরই রক্ত কি না, পরীক্ষা করে দেখা হবে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও দাবি, “ওই তান্ত্রিকের মা-ও তন্ত্র-সাধিকা। গ্রামের বাইরে থেকে প্রায়ই ‘ঝাড়ফুঁক’ করার জন্য ডাক আসে তাঁর।” গ্রামবাসীরা জানান, ঘটনার পর থেকেই লক্ষ্মীকান্তের মায়ের কোনও খোঁজ নেই। এ দিন বাড়িতে গিয়েও কারও দেখা মেলেনি। |