নিখোঁজ-কাণ্ড
চার্জশিটে লক্ষ্মণ-সহ সিপিএমের ৮৮ নেতা, কর্মীর নাম
সুশান্ত ঘোষের পরে লক্ষ্মণ শেঠ। দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে বন্দি রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের একদা ‘দাপুটে’ নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। আর এ বার নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে সিআইডি চার্জশিট দিল পূর্ব মেদিনীপুরের একদা ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সিপিএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নামে। নিখোঁজ-কাণ্ডে সিআইডি তদন্ত শুরু করার পর থেকেই প্রায় তিন মাস ধরে ‘আত্মগোপন’ করেছেন লক্ষ্মণবাবু। এমনকী, দলের সদ্য-সমাপ্ত জেলা সম্মেলনেও গরহাজির থেকেছেন। তাঁকে ‘ফেরার’ দেখিয়েই চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। আদালতের কাছে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হবে বলেও সিআইডি-সূত্রের খবর।
চার বছর আগে সিপিএমের ‘পুনর্দখল’-পর্বে নন্দীগ্রাম থেকে ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির যাঁরা ‘নিখোঁজ’ হন, তাঁদের খুন করে দেহ লোপাট করা হয়েছে বলেই চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিআইডি। খুন, প্রমাণ লোপ, ষড়যন্ত্র, অস্ত্র আইন-সহ একগুচ্ছ ধারায় মোট ৮৮ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে। তাঁদের মধ্যে সোমবার বিকেলে চার্জশিট দেওয়ার সময় পর্যন্তও জেলবন্দি ছিলেন ১৩ জন।
লক্ষ্মণ শেঠ
৭৫ জনকে ‘ফেরার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। রাতেই খেজুরির শেরখাঁচক থেকে ধরা হয়েছে নাড়ু করণ ও কানাইলাল ভুঁইয়া নামে দুই অভিযুক্তকে। ফেরারদের মধ্যে লক্ষ্মণবাবু ছাড়াও রয়েছেন পূর্ব পাঁশকুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় সাউ, কৃষকসভার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক অশোক গুড়িয়া, খেজুরির ‘দাপুটে’ নেতা হিমাংশু দাস, বিজন রায়, প্রজাপতি দাস, রবিউল হোসেন এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলিও।
সিআইডি-র চার্জশিট পেশের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ তথা নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘ফেরার’ অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “২০০৭-এর নভেম্বরে সিপিএমকে হামলার সুযোগ করে দিতে পুলিশের যে আধিকারিকদের নির্দেশে তেখালি ফাঁড়ি বন্ধ করা হয়েছিলতাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তা হলে আরও কারা অপরাধী, জানা যাবে।” এ ব্যাপারে শুভেন্দু রাজ্য পুলিশের তদনীন্তন ডিজি এবং এডিজি-র (আইনশৃঙ্খলা) বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
অন্য দিকে, সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কানু সাউয়ের বক্তব্য, “পুরোটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। লক্ষ্মণবাবু-সহ যাঁদের অভিযুক্ত দেখানো হচ্ছে, তাঁরা কেউই জড়িত নন। আমরা আইনগত ভাবেই লড়াই চালাব।” সিপিএম জেলা সম্পাদকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর আবার প্রশ্ন, “লক্ষ্মণবাবুরা যদি জড়িতই না হল, সিআইডি তদন্ত শুরু করার পরে প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপন করেছেন কেন!” কানুবাবু যদিও বলেন, “লক্ষ্মণবাবুরা আত্মগোপন করে নেই। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।” তা হলে দলের জেলা সম্মেলনেও কেন তাঁরা গরহাজির থাকলেনএ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি সিপিএম জেলা সম্পাদকের কাছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র’র বক্তব্য, “দল নেতা-কর্মীদের পাশেই থাকবে।”
সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ সিআইডি-র ডিএসপি শিশির রায়ের নেতৃত্বে ৯ জনের একটি দল হলদিয়া এসিজেএম আদালতে পৌঁছে ‘জি আর’ সেকশনে ২১৫ পাতার চার্জশিট জমা দেন। ১৩৮ জনের জবানবন্দি নথিভুক্ত করা হয়েছে, দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং নিহতদের দেহ পাচারে ব্যবহৃত একটি অ্যাম্বুল্যান্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিআইডি।
হলদিয়া আদালতে সিআইডি-র আধিকারিকেরা
এর পরেও অবশ্য তদন্ত চলবে এবং প্রয়োজনে ‘পরিপূরক চার্জশিট’ও দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সিআইডি। হাইকোর্টের নির্দেশেই নিখোঁজ-কাণ্ডে তদন্ত করছে সিআইডি। তাই হাইকোর্টেও তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। চার্জশিটে সিআইডি জানিয়েছে, নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের করপল্লিতে ২০০৭-এর ১০ নভেম্বর ভূমি-কমিটির মিছিলে হামলার পরে নিহতদের দেহ প্রথমে খেজুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। শেরখাঁচকের জননী ইটভাটা এবং স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে রাখা হয়। খেজুরি থেকে আগেই ধৃত সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অজিত বরের নৌকায় দেহগুলি পরে রসুলপুর ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি সিআইডি-র। যাঁদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে এই মামলা, তাঁদের অন্যতম গোকুলনগরের আদিত্য বেরার ছেলে পূর্ণেন্দুর প্রতিক্রিয়া, “দেরিতে হলেও বিচার পাব বলে আশা জেগেছে।” আর এক ‘নিখোঁজ’ সাউদখালির বলরাম সিংহের স্ত্রী কল্যাণীদেবীর দাবি, “স্বামীকে ফেরত চাই। আর যদি কোনও অঘটন ঘটে থাকে, কঠোর শাস্তি চাই অপরাধীদের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.