রাজ্যের উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্নও
‘টানাটানি’র সংসারেও ৮০০ ক্লাবকে ১৬ কোটি
ক দিকে তিনি জানালেন, সরকারের কোষাগারে অভাব রয়েছে।
পরক্ষণে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের প্রায় আটশো ক্লাবের মধ্যে তিনিই বিতরণ করলেন ১৬ কোটি টাকা! জানালেন, জেলায়-জেলায় খেলাধুলোর উন্নয়নের স্বার্থেই এই অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ভাল কাজ করলে পরের বছরও আর্থিক সাহায্য মিলবে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ঘোষণার সঙ্গে একেবারেই মিলল না অনুদান-প্রাপক কয়েক জন ক্লাব-কর্তার বক্তব্য। যেমন, সরকারি সাহায্যের টাকা কী ভাবে খরচ করবেন জানতে চাইলে কোচবিহারের এক ক্লাবের কর্মকর্তা নিরঞ্জন দে বলে গেলেন, “ক্লাব প্রাঙ্গণে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরির ইচ্ছে রয়েছে। পুজোর সময়ে প্যান্ডেলের খরচটা তো বাঁচবে!” যার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জেগেছে, খেলাধুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার টাকা বিলোলেও সে উদ্দেশ্য কতটা সার্থক হবে?
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ক্রীড়া দফতর আয়োজিত ‘বিবেকানন্দ স্মারক আর্থিক অনুদান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রাজ্যের ১৯টি জেলার প্রায় আটশো ক্লাবের প্রতিটিকে সরকারের তরফে দু’লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের দেড় হাজার ক্লাবকে এই অনুদান দেওয়া হবে। প্রথম দফায় দু’লাখ। আর আগামী বছর থেকে এক লাখ টাকা করে। তবে সে জন্য ক্লাবগুলোকে হিসেবের নথিপত্র, অডিট-রিপোর্ট ইত্যাদি পেশ করতে হবে। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকায় খেলাধুলোর প্রসারের স্বার্থেই এই আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে।”
নন্দীগ্রামের ক্লাব-কর্তাদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে।— নিজস্ব চিত্র
অনুষ্ঠানে পূর্বতন সরকারকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ করেছেন, বাম সরকারের কাছে টাকা থাকলেও খেলাধুলোর উন্নয়নে খরচ হয়নি। মমতার কথায়, “১২ জানুয়ারি স্বামীজির জন্মোৎসবের
দিন জঙ্গলমহলের ৭১০টি ফুটবল ক্লাবের প্রতিটিকে পঁচিশ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি। ওই পরিমাণ টাকা হয়তো কিছুই নয়। ওদের (পূর্বতন সরকার) হাতে যখন টাকা ছিল, তখন দেয়নি। এখন অভাব রয়েছে, তা-ও দিয়েছি।”
মুখ্যমন্ত্রী এ-ও ঘোষণা করেছেন, আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও খেলাধুলোর উন্নয়নে জেলার বিভিন্ন ক্লাবকে সরকারি অনুদান বন্ধ করা হবে না। কোষাগারে টানাটানির মধ্যে এই খরচের যৌক্তিকতা কী, তা নিয়ে ‘বিতর্কে’ না-গেলেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন রাতে বলেন, “কাদের, কী উদ্দেশ্যে, কোন নীতির ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হল, তা পরিষ্কার নয়।” পাশাপাশি আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত রাজ্য সরকারের পক্ষে এমন অনুদানের পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়েও সূর্যবাবুরা সন্দিহান। বিরোধী দলনেতার কথায়, “রাজকোষের যা অবস্থা, ধানের জন্য চাষিকে দেওয়া সরকারি চেকও বাউন্স করছে। ক্লাবগুলোও কত টাকা হাতে পাবে, বলা কঠিন।”
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনের অনুষ্ঠানে বলেছেন, “যে ভাবে হোক, টাকা জোগাড় করব। এ সব কুৎসার পিছনে কারা রয়েছেন, তা জানি।” তাঁর অভিযোগ: বিগত সরকারের আমলে ক্লাবের নিজস্ব জমি না-থাকলে সরকারি সাহায্য মিলত না। লালফিতের ফাঁসে তা আটকে থাকত। “কিন্তু ছোটখাটো ক্লাবগুলো নিজস্ব জমি পাবে কোথায়?” প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। এবং ঘোষণা করেছেন, আজ মঙ্গলবার সুন্দরবনে আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামের ছেলেদের খেলাধুলোর সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর দেবেন তিনি। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে সরকার শীঘ্রই ‘বিবেক মেলা’র আয়োজনও করবে।
একই সঙ্গে নিজস্ব প্রচেষ্টায় যাঁরা ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে খেলতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্যদানের ব্যাপারটা ক্রীড়া দফতরকে মাথায় রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার বিভিন্ন স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে দার্জিলিং, ক্যানিং, ঝাড়গ্রামে নতুন স্টেডিয়াম গড়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, কোনও বিধানসভা এলাকায় স্টেডিয়াম গড়ার জায়গা থাকলে সেখানে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। প্রয়োজনে সেগুলো বেসরকারি ভাবে বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা যেতে পারে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.