|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু ... |
কলেজ রাজনীতি এখন এলাকা দখলের লড়াই |
সুকান্ত চৌধুরীর শিক্ষা-প্রাঙ্গণে হিংসা (১৭/১) সম্পর্কে লিখিত প্রবন্ধটির কয়েকটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি। সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজে ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কলেজ-প্রাঙ্গণে দাদাগিরি এবং কলেজ-অধ্যক্ষদের যে ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে তাতে একটি প্রশ্নই উঠে আসছে তা হলে কি কলেজে এ বার রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে? শ্রীচৌধুরী একটি বাস্তব প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, সেটা হল কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের কি আদৌ কোনও দরকার আছে। কিন্তু যেটা তুলে ধরেননি সেটা হল এই ছাত্র ইউনিয়নের (পড়ুন ছাত্ররাজনীতি) সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কত জন ছাত্রছাত্রী জড়িত এবং কলেজের উন্নতি প্রসঙ্গে তাদের সত্যিকারের ভূমিকা কী অথবা তাঁরা কি আদৌ কোনও সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার অধিকারী?
প্রশ্নটির তাত্ত্বিক উত্তর হয়তো হবে এমনই যে, গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক চেতনা তৈরি ও অধিকার রক্ষার জন্যই ছাত্ররাজনীতির যখেষ্ট গুরুত্ব। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও কলেজ- ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হল কলেজের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী (প্রায় ৯৯ শতাংশ) কলেজে রাজনীতি পছন্দ করেন না এবং তাঁদের অভিভাবকরা নিজ সন্তানদের কলেজে পাঠান রাজনীতি করার জন্য নয়, পঠন-পাঠনে মনোনিবেশ করার জন্য। ধরুন, কলেজে ৩০০০ ছাত্রছাত্রী আছে। সেখানে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী কলেজে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকে। সুতরাং বলা যেতে পারে শতকরা ১ জন ছাত্র বা ছাত্রী রাজনীতি করে। আবার ভোটের রাজনীতির হিসাব কলেজগুলিতে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে মনে রাখতে হবে যাঁরা ভোট দেন তাঁরা সকলেই যে কলেজে রাজনীতি পছন্দ করেন, তা নয়। কারণ, ভোট-পরবর্তী ছাত্র সংসদ গঠন বা তাদের কর্মধারা সম্পর্কে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই ওয়াকিবহাল থাকেন না। আর সংসদের কাজ কী? বছরে একবার নবীনবরণ উৎসব, কলেজ সোশাল অর্গানাইজ করা, পত্রিকা প্রকাশ করা অথবা ভর্তির সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর খবরদারি করা। যার সঙ্গে কলেজের পঠন-পাঠন ও গবেষণা সংক্রান্ত কোনও কাজের যোগ থাকে না। কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকা কম এবং এই কারণে পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটছে ছাত্র সংসদের এ ব্যাপারে করার কিছুই থাকে না। শ্রেণিকক্ষ অপ্রতুল, এই ব্যাপারেই বা ছাত্র সংসদ কী করবে? এ কথা সত্যি যে, এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁরা পারেন, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। |
|
সুতরাং যে প্রশ্নটা উঠে আসছে তা হল, ১ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার মূল্য দিতে হচ্ছে বাকি ৯৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রী, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীকে। প্রতি বছর কলেজে ভোট আসা মানেই একটা দুঃস্বপ্ন বয়ে নিয়ে আসা। যার পরিণতি এ বার দেখলাম রায়গঞ্জ, রামপুরহাট ও মাজদিয়ায়। কলেজ অধ্যক্ষকে প্রথমে ঘেরাও ও পরে হেনস্থা। টিভি-র দৌলতে এখন সকলের ঘরে এই ছবি পৌঁছে গেছে। আসলে কলেজ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এলাকা দখলের সুবর্ণ সুযোগ এসে গেছে। এই ব্যাপারে বাম-ডান সব দলই সমান দায়ী। কারণ, তারাই কলেজ দখলকে কেন্দ্র করে কলেজে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। আশ্চর্য, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনও নিরপেক্ষ নয়। প্রায়শই, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কথায় পুলিশকে চলতে হয়। তাই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যায়। আসলে প্রশাসন তার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে রাজধর্ম পালন করতে পারছে না। বাম আমলের ‘আমরা-ওরা’র বিভেদ এই আমলেও দেখতে পাচ্ছি।
কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহু শিক্ষাদিবস নষ্ট হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট কলেজে (যেখানে অধ্যাপকের সংখ্যা কম) ভোটের দিন ঘোষণার আগে থেকেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আর এই প্রস্তুতিতেই শামিল হন স্বয়ং অধ্যাপকরাই। ফলে, ক্লাস কামাই দিয়ে, পঠন-পাঠনকে অবহেলা করে অধ্যাপকরা বাধ্য হন ভোটের কাজে অংশগ্রহণ করতে। এর ফলে সবচেয়ে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাঁরা ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই। প্রায় মাসখানেক এই প্রস্তুতি চলতে থাকে। বহু শিক্ষাদিবস নষ্ট হয়ে যায়। এপ্রিল মাসে ফাইনাল পরীক্ষা। জানুয়ারি মাসে ভোট। সুতরাং শিক্ষাদিবস নষ্ট হওয়ার ফলে অধ্যাপকরা ঠিক সময়ে সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে পারেন না।
কলেজে কলেজে পঠন-পাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে ছাত্র-রাজনীতি পুরোপুরি বর্জন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে ভাবার সময় এসেছে। যদি পুরোপুরি বন্ধ না করা যায়, তা হলে অন্তত তিন বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে সরকারকে নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মাবলি প্রণয়ন এবং তা কড়া হাতে প্রয়োগ করতে হবে। যাতে কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের (পড়ুন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও দুর্বৃত্ত) কলেজে অনুপ্রবেশ না-করতে পারে। আশা করি, এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই সহমত পোষণ করবে। |
অভিজিৎ বিশ্বাস। আংশিক সময়ের শিক্ষক, চাকদহ কলেজ, চাকদহ, নদিয়া
|
শিক্ষক বদলি |
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সরকারি কলেজে বদলি নীতি শীঘ্রই বদলে দিচ্ছে রাজ্য’ (২৩-১) সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষামন্ত্রীকে এই মর্মে অনুরোধ করতে চাই যে, আন্তর্মহাবিদ্যালয় বদলির নীতি নির্ধারণের সময় উনি যেন একই সঙ্গে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মহাবিদ্যালয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথাও স্মরণে রাখেন।
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মহাবিদ্যালয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজস্ব শহরে, বাড়ির কাছাকাছি কোনও শহরে বা জেলায় বদলি করলে তাঁদের যাতায়াতেরও যেমন সুবিধা হবে, তেমনই আর বদলির জন্য সচেষ্ট না-হয়ে তাঁরা নিশ্চিন্ত মনে পাঠদানে যুক্ত থাকতে পারবেন ও গবেষণার কাজে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারবেন। তাঁদের ছুটির প্রয়োজনও কমে যাবে। এবং এতে পড়াশোনোর পরিবেশের সার্বিক উন্নতিই হবে।
নিজস্ব শহর থেকে দূরে কর্মরত সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মহাবিদ্যালয়গুলির বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাই এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। |
পিনাকী রায়। সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, মালদহ মহাবিদ্যালয়, মালদহ |
|
|
|
|
|