তাঁর সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ভোট ময়দানে সব পক্ষই মোটামুটি এক সুরে কথা বলছে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সকলেরই গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। বড় দলগুলি তো বটেই, তথাকথিত ছোট দলগুলিও তাঁর
সঙ্গে জোট গড়েনি। অন্তত এখনও। অথচ এত কিছুর
পরেও এখনও সে ভাবে মুখই খোলেননি মায়াবতী! উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘নীরবতা’ই ভাবাচ্ছে সব পক্ষকে। ‘মায়া’-জালে কী রহস্য, তা নিয়েই আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ সব দলের।
উত্তরপ্রদেশের ভোট ময়দানে গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে ঝড়ের গতিতে প্রচার চালাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। সংরক্ষণের তাস খেলে সংখ্যালঘু ভোট ঝুলিতে ভরার রাজনীতিতেও সওয়ার হয়েছে কংগ্রেস। ছেলে অখিলেশকে সামনে রেখে লখনউয়ের তখ্ত ফিরে পেতে সক্রিয় মুলায়ম সিংহ যাদব। কখনও সাইকেলে, কখনও বাসে চেপে গোটা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন অখিলেশ। সংখ্যালঘু ভোট টানতে শাহি ইমামের সমর্থনও আদায় করেছেন মুলায়ম। বসে নেই বিজেপিও। উমা ভারতীকে সুকৌশলে তুলে ধরে অনগ্রসর শ্রেণির ভোট টানতে সক্রিয় তারা। পাশাপাশি অতি পিছড়ে বর্গের ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত বাবুসিংহ কুশওয়াহাকেও দলে এনে গুটি সাজিয়েছে তারা। তুমুল সমালোচনার মুখে কুশওয়াহার সদস্যপদ স্থগিত রেখে বিতর্ক ধামাচাপাও দিয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ সব পক্ষই উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে নানা ভাবে দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে ভোট-যুদ্ধে নেমেছে।
আর মায়াবতী? আজ, মঙ্গলবার থেকে তিনি সরকারি ভাবে ভোটের প্রচারে নামবেন। তার আগে পর্যন্ত সব শিবিরেই জল্পনা, কী হয়, কী হয়! গদি বাঁচাতে কী বলেন তিনি, সে দিকেই এখন নজর সকলের।
গত বছর হঠাৎই উত্তরপ্রদেশ ভাগের কথা বলে ঝড় তুলেছিলেন মায়াবতী। কিন্তু সেই কৌশল ভেস্তে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ মায়াবতীর। নির্বাচন কমিশন যখন রাজ্য জুড়ে মায়াবতী ও তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনের আচরণকে ‘দলিত-বিরোধী’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সব পক্ষই এখন তাকিয়ে আগামিকালের দিকে। কী বলেন ‘বহেনজি’।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এ বারের নির্বাচনে মায়াবতীর পতন হবে, এটা ধরে নিয়েই সব দল কৌশল রচনা করেছে। গত নির্বাচনে উচ্চবর্ণ থেকে দলিত সব পক্ষেরই ভোট পেয়েছিলেন মায়াবতী। এ বারে সেই ভোটেই থাবা বসাতে চাইছে সকলে। কেউ উচ্চবর্ণের, কেউ দলিত ভোট পেতে মরিয়া।” এই অবস্থায় বসপা-নেত্রী কী করছেন? ওই বিজেপি নেতার কথায়, “মায়াবতীর মতো রাজনীতিক চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন। শেষ বাজারে তিনি হঠাৎ কোনও চমক দেবেনই। অন্য দল তাঁর ভোট কাড়ার যে চেষ্টা করছে, তা ঠেকাতে মায়াবতী হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, তা তো হয় না।” কিন্তু মায়াবতীর আস্তিনে কী তাস লুকনো আছে, তা এখনও অজানাই। এক বার সেটি প্রকাশ্যে এলে ভোটের হাওয়া কোন দিকে মোড় নেয়, সে দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে সব দলকে।
বিজেপির সমস্যাটা অন্যত্র। শুধু ভোটের আগে নয়, ভোটের পরেও মায়াবতী কী করেন, তা আঁচ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন দলের নেতারা। উত্তরাখণ্ডে ভোট পর্ব মিটেছে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, প্রাথমিক ভাবে যা খবর, তাতে সরকার গড়তে মায়াবতীর সমর্থন নিতে হতেও পারে। কিন্তু তাতেও সমস্যা আছে। উত্তরাখণ্ডের বিনিময়ে উত্তরপ্রদেশে যে ‘বহেনজি’ সমর্থন চাইবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এখনও পর্যন্ত বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী থেকে রাজনাথ সিংহ গলা ফাটিয়ে বলে আসছেন, ভোটের আগে বা পরে মায়াবতীর সঙ্গে কোনও সমঝোতা হবে না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিজেপি ভেঙে বসপাতে বিধায়ক যাওয়ার আশঙ্কাও তাড়া করে বেড়াচ্ছে গডকড়ীদের। দলের অনেকের আশঙ্কা, কুশওয়াহা এখন বিজেপির পক্ষে ভোট কাড়লেও নির্বাচনের পরে বিজেপির বেশ কিছু বিধায়ককে নিয়ে ফের মায়াবতীর আশ্রয়ে চলে যেতে পারেন। বিধায়ক খোয়ানোর থেকে সরাসরি সমর্থন দেওয়াই ভাল কি না, তা নিয়েও চিন্তা বিজেপি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে খেসারত দিতে হতে পারে দলকে।
সব মিলিয়ে অস্বস্তির পাল্লাটা বিজেপির পক্ষে বেশ ভারীই। কারণ, মুলায়মের সঙ্গে বিজেপি জোট গড়তে পারবে না। আবার মায়াবতী প্রয়োজনে কংগ্রেসের সঙ্গেও যেতে পারেন।
ফলে এখন অপেক্ষা, মায়াবতীর চালের! |