কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
দালালের উৎপাত, জমি কিনতে বিপাকে এনটিপিসি
ণিকমহল এবং অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কাই সত্যি হল।
বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনতে নেমে দালালদের উৎপাতের সম্মুখীন হল এনটিপিসি। অগত্যা তারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু রাজ্যে শিল্প গড়তে গেলে শিল্পোদ্যোগীদেরই জমি কিনতে হবে বলে যে নীতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েছেন, তা নিয়ে ফের বিতর্কের অবকাশ তৈরি হল।
জমি আন্দোলনকে পুঁজি করে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মমতা শিল্পের জন্য অধিগ্রহণ রদ করে দেওয়ায় বেশ কিছু প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এনটিপিসি-ই প্রথম সংস্থা যারা তাঁর শর্ত মেনে সরাসরি প্রায় ৫০০ একর জমি কেনার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রথমেই বাদ সেধেছে দালালদের দৌরাত্ম্য। সোমবার কাটোয়ায় সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার রামানুজ মিশ্র বলেন, “দালালদের ঠেকাতে আমরা ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতা চেয়েছি। জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।”
যে রাজ্যে সিংহভাগ জমি ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের হাতে ছড়িয়ে রয়েছে, সেখানে সরকারের সাহায্য ছাড়া এক লপ্তে বড় জমি কেনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন শিল্পপতিরা। সম্প্রতি ‘বেঙ্গল লিড্স’ নামে শিল্প সম্মেলন করেও রাজ্য সরকার এই সংশয় ঘোচাতে পারেনি। কলকাতায় এসে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজও মন্তব্য করেন, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই শিল্পের জন্য জমি পাওয়া সম্ভব নয়। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে যাঁদের বিপর্যয়ের সূচনা সেই বামেরাও বারবার দাবি করছিলেন, সরকার হস্তক্ষেপ না করলে দালালদের ঠেকানো সম্ভব নয়। তাতে শিল্পপতি ও জমিমালিক, উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কাটোয়ায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল) হাতে তুলে দিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। পরে অর্থাভাবে কাজ থমকে যাওয়ায় প্রকল্পের ভার নেয় জাতীয় তাপবিদ্যুৎ নিগম (এনটিপিসি)। বাকি অন্তত ৫০০ একর জমি কিনতে সম্প্রতি কাটোয়ার শ্রীখণ্ডে তারা ‘ফিল্ড অফিস’ খুলেছে। কিন্তু তার পর থেকেই যেখানে জমি কেনার কথা সেই চুড়পুনি, শ্রীখণ্ড ও জাজিগ্রাম মৌজায় চাষিদের বাড়ি-বাড়ি হানা দিচ্ছে দালালেরা। বহু সময়ে পরিচয় ভাঁড়িয়ে চাষিদের থেকে জমির নথিপত্রের প্রতিলিপিও হাতাচ্ছে বলে অভিযোগ। চুড়পুনি গ্রামের অজিত গুপ্ত, নবকুমার দাস, অনাদি দাসদের ক্ষোভ, “এনটিপিসি-র কর্মী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে দালালেরা বলেছিল, নথিপত্র দিলে ওরাই সব ব্যবস্থা করে দেবে। সরল বিশ্বাসে জমির পরচার প্রতিলিপি দিয়েছি।” শ্রীখণ্ড গ্রামের আজিজুর রহমান, শেখ হবিবুল্লা বলেন, “আমাদের কাছেও দালাল এসেছিল।”
শুধু এনটিপিসি নয়, পরিচিত কোনও বড় বিপণন সংস্থার কর্মী হিসেবেও নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে দালালেরা। চাষিদের তারা বলছে, ওই সংস্থা এনটিপিসি-র হয়ে জমি কিনছে। চুড়পুনির চাষি প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বহুজাতিক সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে এক জন আমার ১৫ বিঘা জমির কাগজপত্র চেয়েছিল। কয়েক লক্ষ টাকা দামও দেবে বলেছিল। আমি দিইনি।” দালালেরা ইতিমধ্যে যে সব জমির কাগজ নিয়েছে, তার মধ্যে অধিগৃহীত জমিও (শুনানি হয়ে গিয়েছে, চেক বিলি হয়নি) আছে। অনেকেরই আশঙ্কা, ওই সব কাগজপত্র দেখিয়ে এনটিপিসি বা তার নিযুক্ত সংস্থার কর্মী হিসেবে চাষিদের আস্থা অর্জন করে বাকি জমি হাতাতে চাইছে দালালেরা। চুড়পুনির প্রবীণ চাষি অশোক ঘোষ স্বীকার করেন, “আমিও দালালদের পাল্লায় পড়ে বেশ কয়েক জনের থেকে জমির কাগজপত্র নিয়েছিলাম। ওরা বলছিল, ওদের হাতে কাগজপত্র থাকলে এনটিপিসি থেকে তাড়াতাড়ি টাকা পাওয়া যাবে।”
এনটিপিসি-র কাটোয়ার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু বলেন, “জমির কাগজ নিয়ে চাষিদের সঙ্গে-সঙ্গে ২৫ শতাংশ এবং পরে বাকি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। আমরা চাষিদের বিভ্রান্ত হতে বারণ করছি। কোনও বিভ্রান্তি থাকলে আমাদের ফিল্ড অফিসে যোগাযোগ করুন।”
শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “আমরা প্রতিটি গ্রামে মুখে মুখে প্রচার করছি যে কারও মাধ্যমে নয়, এনটিপিসি সরাসরি জমি কিনবে।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য, স্থানীয় নেতা অচিন্ত্য মল্লিকের কটাক্ষ, “আমরা আগেই বলেছিলাম, শিল্প সংস্থা সরাসরি জমি কিনতে গেলে এলাকায় দালালরাজ জেঁকে বসবে। তাই সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।”
‘বেঙ্গল লিড্স’ সম্মেলনে গিয়ে মমতা অবশ্য জানিয়েছিলেন, শিল্পের জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ না করলেও প্রয়োজনে সব রকম সহায়তা করবে। কিন্তু তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়নি। এ বার এনটিপিসি যখন সমস্যার মুখে, রাজ্য সরকার কেমন ভাবে কতটা ‘সহায়তা’ করে, শিল্পমহল সম্ভবত সে দিকে নজর রাখবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.