পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই শনিবার বালুরঘাট শহরে আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল আধিকারিক মানিক সাহার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। রবিবার বালুরঘাট অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্রের আধিকারিক সুবল মণ্ডল এই অভিযোগ করেছেন। উত্তেজিত জনতার ধাক্কায় মানিকবাবু আত্রেয়ী খাড়িতে বোল্ডারের উপরে পড়ে যান বলে দমকল কেন্দ্রের ওই আধিকারিক বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই দিন বলেছেন, “জনতা হঠাতে পুলিশ কোনও রকম সাহায্য করেনি।” আগুন নেভানোর কাজে দমকল কর্মীদের থেকে এক দল জনতা হোস পাইপ কেড়ে নিলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালুরঘাট থানার আইসি শান্তনু কোঁয়ার নিষ্ক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন দমকলের কর্মীরা। পরে শেষ পর্যন্ত বিএসএফ জওয়ানদের নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। ওই স্টেশনারি দোকানের মালিকের বিরুদ্ধেও আগুন লাগানোর অভিযোগ তুলে দমকলের তরফে তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের অসহযোগিতা নিয়ে দমকল আধিকারিকের ওই অভিযোগ কার্যত সমর্থন করেছেন ঘটনার সময় উপস্থিত কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী এবং বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস। এ দিন কারামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ছিল না। পুলিশ সুপারকে অভিযোগের তদন্ত করতে বলেছি।” চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে নিজে বার বার আইসিকে অবস্থা সামালা দিতে অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। শেষে পুলিশ সুপারকে ফোন করি। এরপর জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার চলে আসেন। তারা বিএসএফের সাহায্য চান।”
আইসি শান্তনু কোঁয়ার অভিযোগ সম্পর্কে মুখ খোলেননি। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “দমকলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। থানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার আত্রেয়ী খাঁড়ির ধারে মণিহারি ও প্রসাধন সামগ্রীর একটি দোকানের পিছন দিকে রাত সওয়া ৯ টা নাগাদ আগুন লাগে। সে সময় ওই দোকান খোলাই ছিল। সাটার নামিয়ে দোকানের মালিক পরিমল পাল পাশেই বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে লাগোয়া দোকানিরা জানান। এরপর দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে পরিমলবাবু ছুটে এসে সাটার তুলে দেন। খবর পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দমকলের দুটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে চলে আসে। তার আগেই সেখানে কয়েকশো মানুষ ভিড় করেন। কংক্রিটের দোকান হওয়ায় পিছনে আগুনের জায়গায় দমকল কর্মীরা যেতে পারছিলেন না। দোকানের সামনে থেকে ক্রমশ ধোঁয়া বের হতে থাকে। সে সময় বালুরঘাট থানার পুলিশের সামনে দমকল কর্মীদের হাত থেকে একদল উন্মত্ত জনতা হোস পাইপ ছিনিয়ে জল দিতে থাকেন। দমকলের গাড়ি থেকে মই লাগিয়ে ওই দোকানের ছাদে ওঠেন কর্মীরা। তাদের সঙ্গে জনতাও উঠে যায়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে কার্যত দমকল কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রেখে একাংশ জনতার দাপাদাপি চলতে দেখেও থানা কর্তৃপক্ষ উদাসীন ছিল বলে অভিযোগ। এ সময় বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন ঘটনাস্থলে হাজির হন। সে সময় দোকানের ছাদ থেকে মই নামিয়ে সেতুর পাশে রেলিং দিয়ে শুকিয়ে যাওয়া খাঁড়িতে নামানোর উদ্যোগে হাত লাগান দমকলের স্পেশাল অফিসার মানিকবাবু। ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী দমকল কর্মী বৈদ্যনাথ বর্মন বলেন, “ওই দোকানের ছাদ থেকে দেখি হুড়োহুড়ির সময় রেলিং থেকে খাঁড়ির নিচে পড়ে যান মানিকবাবু। টর্চ জ্বালিয়ে নিচে নেমে মানিকবাবুর দেহ উদ্ধার করা হয়।” |