শিশু চুরির অভিযোগকে ঘিরে ফের তপ্ত সরকারি হাসপাতাল। শিশুটির বাড়ির লোকজন রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানোর পরে তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গড়লেন সুপার।
দিন পনেরো আগেই কলকাতায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি যায় এক সদ্যোজাত। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। শনিবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিহারের মুঙ্গেরের বধূ রুবি সাউ অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতালে তাঁর শিশুকন্যাকে ‘চুরি’ করা হয়েছে। কিন্তু এ দিন পর্যন্ত শিশুটির হদিস মেলেনি।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ১৮ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন রুবি দেবী। সেই রাতেই সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
২৪ তারিখ হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু বাড়ির লোকজন না আসায় তিনি ওয়ার্ডে থেকে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে সদ্যোজাতদের পৃথক একটি ওয়ার্ডে রাখা হয়। শিশুর কপালে ও মায়ের হাতে একটি নির্দিষ্ট নম্বর লেখা কাগজ সাঁটানো থাকে, যা দেখে কোন শিশু কার, তা বোঝা যায়। মাঝে মধ্যে দুধ খাওয়ানোর জন্য শিশুকে মায়ের কাছে দেওয়া হয়। |
হাসপাতালের সামনে রুবি সাউ। উদিত সিংহের তোলা ছবি। |
রুবিদেবী অভিযোগ করেন, শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ মেয়েকে দুধ খাওয়ানোর জন্য তাঁর কাছে দেওয়া হয়েছিল। ১১টা নাগাদ এক নার্স তাঁকে জানান, তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। রুবিদেবীর অভিযোগ, “ঘণ্টা তিনেক আগেও যে সুস্থ ছিল, সে কী ভাবে মারা গেল বা তার অবস্থার অবনতির কথা আগে কেন জানানো হয়নি, তা জানতে চাইলে আমার হাতে লাগানো নম্বর জোর করে ছিঁড়ে দেন এক নার্স। এর পরে সাদা কাগজে টিপ সই নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন আমাকে। মেয়ের মৃতদেহ দেখতে চাইলে ২৪ ঘণ্টা পরে আসতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী শনিবার সকালে হাসপাতালে গেলে, কেউ কোনও কথা শুনতে রাজি হননি।” হাসপাতালের সুপার ও ডেপুটি সুপারের অফিস বন্ধ থাকায় শনিবার রাতে ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে শিশু চুরির অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ হয়নি।
রুবিদেবীর দাবি, “আমার মেয়ে মারা যায়নি। ওয়ার্ডে একা পড়ে রয়েছি দেখে ওকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।” রবিবার বর্ধমানের বুদবুদে তাঁর বাপের বাড়ি থেকে বেশ কিছু লোকজন হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। এ দিনও সুপারের অফিস বন্ধ ছিল। তবে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন সুপার অসিতবরণ সামন্ত। তিনি বলেন, “তিন সদস্যের একটি দল এই ঘটনার তদন্ত করবে। বুধবারের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই ঠিক কী ঘটেছে, বলা সম্ভব হবে।”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরির ঘটনার পরে স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র দাবি করেছিলেন, সরকারি হাসপাতালে যে সংখ্যক রোগীকে নিত্য পরিষেবা দিতে হয়, তাতে ‘এমন ঘটনা’ আর ঘটবে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। বাড়ির লোকজন ‘সতর্ক না থাকলে’ শিশু চুরি আটকানো প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য-কর্তারা।
বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার অসিতবরণবাবু অবশ্য বলেন, “এই ঘটনাটি নিয়ে আমারও সন্দেহ হচ্ছে। তাই তদন্ত করা হবে।” রুবিদেবী এ দিন তাঁর কাছে জানতে চান, শিশুটি যদি মারা গিয়ে থাকে তবে মৃতদেহ সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হল না কেন? সুপার বলেন, “মৃতদেহ সঙ্গে সঙ্গে না দেওয়া গাফিলতি তো বটেই, নিয়মবিরুদ্ধও। কোনও নার্স ওই প্রসূতির হাতে লাগানো কাগজ ছিঁড়ে দেন বা ওয়ার্ড থেকে বের করে দিয়েছেন কি না, তা-ও দেখা হবে।” |