ক্যানসার গবেষণায় নতুন দিশা দিচ্ছেন বাংলার ‘সোনা’র মেয়ে
লঙ্কার থেকে অস্ত্র। সোনা। জীবনদায়ী যুদ্ধে আমেরিকায় এক বঙ্গললনার হাত ধরেই ক্রমশ আরও ধারালো হয়ে উঠছে এই স্বর্ণ-অস্ত্র।
অদূর ভবিষ্যতে স্রেফ এমআরআইয়ের মাধ্যমেই কি ক্যানসার ধরা পড়বে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে? সেই সম্ভাবনা জাগিয়েছেন এক বাঙালিনি, রিজিয়া বর্ধন। এবং এখানে তাঁর অন্যতম অস্ত্র হল সোনার কণা। সোনার ন্যানো পার্টিকলস। দেহের কোনও অংশে ক্যানসার হলে এখন এমআরআই-এ তার হদিশ মেলে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নয়। কিন্তু রিজিয়ার গবেষণার ফলে, ভবিষ্যতে এমআরআই এবং ফ্লুরোসেন্স ইমেজিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে প্রাথমিক পর্যায়ের একেবারে গোড়াতে চিহ্নিত করার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেকটাই।
ফোর্বস পত্রিকা সম্প্রতি সারা বিশ্বে তিরিশের গণ্ডি না পেরনো ৩০ জনকে বাছাই করেছে ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, টেকনোলজিসব বিভাগে। যাঁরা ‘বিশ্বকে পুনরাবিষ্কারের অপেক্ষায়’। ওই তালিকাতেই রয়েছেন শিবপুর রামকৃষ্ণপুরের শ্যামল বর্ধন ও দেবযানী বর্ধনের ছোট মেয়ে ‘রিজু’। ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে পোস্ট ডক্টরেট করছেন তিনি। ‘নেচার’-সহ একাধিক প্রথম সারির জার্নালে রিজিয়ার গবেষণার
রিজিয়া বর্ধন
কথা প্রকাশিত হয়েছে।
ইদানীং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে হইচই হচ্ছে খুব। সোনার ন্যানো পার্টিকলস দিয়ে ক্যানসার মোকাবিলার রাস্তা প্রথম দেখিয়েছিলেন রিজিয়ারই এক অধ্যাপক। বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত রিজিয়া সেটাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। সানফ্রান্সিসকোর কাছে হেওয়ার্ড থেকে ফোনে তিনি বললেন, “আশা করছি, দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে সাধারণ মানুষ ব্যাপারটার সুবিধা নিতে পারবেন।”
সাধারণত এমআরআইয়ে দেহের সংশ্লিষ্ট অংশের ছবি তোলা হয় চৌম্বক তরঙ্গের মাধ্যমে। আর ফ্লুরোসেন্স ইমেজিংয়ে দেহে প্রবেশ করানো হয় কোনও প্রতিপ্রভ বস্তু। অর্থাৎ যা কিনা বিকিরণ শুষে নিয়ে নিজে আলো ছড়ায়। এখানেই এ বার কাজে লাগানো হচ্ছে সোনা। রিজিয়া ব্যাখ্যা করছিলেন, “সোনা এমনিতে সোনালি। কিন্তু সোনার কণা বিকিরণ (এ ক্ষেত্রে লেজার রশ্মি) পেলে তা থেকে লাল-গোলাপি-বেগুনি-সবুজ সব রং বেরোতে থাকে। সেই রঙের তারতম্য দেখে অতি ক্ষুদ্র টিউমারও (আকারে যখন ২-৩ মিলিমিটার) প্রথম ধাপেই ধরা পড়ে যায়।” কলকাতার বিশিষ্ট ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় রিজিয়ার গবেষণার কথা শুনে খুশি। বললেন, “নানা আধুনিক ব্যবস্থা আসছে। শুনে মনে হচ্ছে, এটা আধুনিকতম এমআরআই। সময়ই বলবে, এটা কতখানি নির্ভরযোগ্য। তবে বাঙালি এক জন এমন আবিষ্কার করছে, এটা দারুণ।”
ক্যানসার ধরা পড়ার পরে তা সারানোর ক্ষেত্রেও একই ভাবে কাজে লাগে সোনার ন্যানো পার্টিকলস। সোনার সাহায্যে ফোটোথার্মাল থেরাপি পশ্চিমে সবে শুরু হয়েছে। রিজিয়া জানালেন, “সোনার ধর্ম হল, আলো শুষে নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা। যখন লেজার রশ্মি ওই প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ন্যানো পার্টিকলসের উপরে পড়ে, ওই উত্তপ্ত স্বর্ণ-কণা ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলে। একেই ফোটোথার্মাল থেরাপি বলা হয়। কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক কিন্তু ক্যানসার-আক্রান্ত কোষের সঙ্গে অনেক সুস্থ কোষকেও মেরে ফেলে। কিন্তু এখানে তা ঘটে না।”
পাশাপাশি রিজিয়া জানান, সোনা শরীরের পক্ষে কোনও ভাবেই ক্ষতিকর নয়। ফলে কোনও বাড়তি সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই। কেমোথেরাপিতে অহরহ ব্যথা, বমি, চুলপড়া এবং রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ফোটোথার্মাল থেরাপিতে শুধু ওই অঞ্চলে একটা দাগ হবে, সাধারণ ঘা-র মতো। সেটা সেরে যাবে দু’চার সপ্তাহের মধ্যে।
বছর এগারো আগে ভারত ছেড়েছেন রিজিয়া। নাগপুর থেকে বারো ক্লাস পাশ করেই চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। রসায়ন থেকে অঙ্ক। অঙ্ক থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। সেখান থেকে মেডিক্যাল সায়েন্স। মা দেবযানী বলছিলেন, “চিরকালই ওর পড়ার বিষয় প্রচুর। প্রথম থেকেই ক্লাসে ফার্স্ট হত। সিবিএসই-তে সারা ভারতে দশ নম্বর ছিল। ক্লাস টুয়েলভে এগারো নম্বর।” সেই রিজিয়াকে আমেরিকা যাওয়ার আগে বাবা বলেছিলেন, “শুধু স্কুল বা কলেজে প্রথম হয়ে লাভ নেই। সারা বিশ্বের মধ্যেই নজর কাড়াটা আসল হওয়া উচিত।”
পড়াশোনার চাপে কলকাতায় তিন বারের বেশি আসেননি। গত বছর এখানে এসে বিয়ে করে যান আমেরিকান গবেষক কেরি পাইন্টকে। রিজিয়ার গর্ব, সেই কেরিও ভবিষ্যতের বিশ্বসেরা তিরিশ বিজ্ঞানীর তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। তিনি ন্যানো টেকনোলজিতে এমন ব্যাটারির খোঁজ দিয়েছেন, যা আর চার্জ করতে হবে না।
রিজিয়ার দিদি রেবেকা নিজে ডাক্তার। বোনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তিনিও। “রোগীদের দেখেছি, কেমোথেরাপি খুব কষ্টকর। আমি তো চাইব, বোনের আবিষ্কার দ্রুত বাজারে আসুক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.