উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকায় কতটা কী কাজ হয়েছে তা নিয়ে কার্যত জবাবদিহি চাইলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন। রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হলে দলের মুখপত্রের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় বক্তব্য রাখেন নিরুপমবাবু। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে শিলিগুড়িতে যাবেন। সে প্রসঙ্গ তুলেই নিরুপমবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি উত্তরবঙ্গ সফরে আসবেন বলে শুনেছি। আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আর দু’মাস বাকি। আশা করি ওই টাকায় কতটা কী উন্নয়ন উত্তরবঙ্গে হয়েছে তা উনি সাধারণ মানুষকে জানাবেন।” দার্জিলিং পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী বলেন, “ভূমিকম্পের পর মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এবারে আশা করি তিনি জানাবেন ওই টাকার কতটা পাহাড়বাসী পেয়েছেন।” |
এ দিনের সভায় বক্তব্যে অধিকাংশ সময় নিরুপমবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আট মাসের সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। কৃষক ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করছেন। ৫ মাসের বেতন না পেয়ে পরিবহণ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। বেতন না পেয়ে এক পার্শ্বশিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বলেন, “আট মাসের মধ্যে এই সরকার নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এই সরকার সত্য স্বীকার করতে চাইছেন না। বামফ্রন্ট আমলে চা বাগানের মানুষ সমস্যায় পড়েছিলেন। আমরা তা স্বীকার করেছিলাম। সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তাঁদের রক্ষা করতে। আমরা তা পেরেছি।’ তিনি দাবি করেন, উন্নততর জীবনের লক্ষ্যে রাজ্যে পরিবর্তন এনেছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “মানুষ তো সবসময় আরও ভাল আশা করতেই পারেন। আমরা তা অস্বীকার করিনি। শিলিগুড়ি পুরসভায় আগে বামফ্রন্ট ছিল। এবারে ওরা রয়েছে। মানুষ বদল করে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যাণ্ড করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মানুষ পরিবর্তন করেছে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে। আমরা জানতাম ওরা উন্নত জীবন দিতে পারবে না। যাদের কোনও নীতি নেই, দৃষ্টিভঙ্গি নেই তারা কীভাবে উন্নত জীবন দেবে! না হলে কেউ লক্ষ লক্ষ চাকরি দেওয়ার কথা, অসংখ্য প্রতিশ্রুতির কথা বলে!” শিক্ষেক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরি করা হচ্ছে বলেও নিরুপমবাবু অভিযোগ করেন। রায়গঞ্জ ও মাজদিয়ার একই ঘটনায় দুই রকমের বিচারে রাজ্যে যে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেই দাবিও করেন তিনি। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বদলানো হয়েছে। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় আক্রমণ নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। একই ঘটনার দু’রকম বিচার হচ্ছে। এই সরকার মানুষের কল্যাণে কোনও কাজ করবে না।” পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নে যে তারাও শরিক হতে চান সে কথাও এদিন জানান নিরুপমবাবু। তিনি বলেন, “মানুষের ভাল যেটাতে হয়, যা ন্যায়সঙ্গত সে সব ব্যপারে আমরা সরকারের পাশে আছি। আমরা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছি না। রাজ্যের সঙ্কটে যাতে কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সহায়তা করে সে দাবি নিয়ে আমরা দিল্লিতে গিয়েছি। সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।” এদিনের সভায় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। |