|
|
|
|
|
সর্বশক্তি দিয়ে বাংলারই
পাশে, ‘বার্তা’ কারাটদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
পশ্চিমবঙ্গে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ দলের পাশে ‘সর্বশক্তি’ দিয়ে দাঁড়ানোর কথা বলছে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। মাওবাদী হিংসা থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘শাসক জোটের তাণ্ডব’, নানা প্রশ্নেই পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ‘রক্ষা’ করার জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক দলিলে। ক্ষমতায় থাকাকালীন সর্বভারতীয় সিপিএমের অন্যতম ‘ভরসাস্থল’ ছিল আলিমুদ্দিন। বস্তুত, দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারানো যে সারা দেশেই বাম আন্দোলনের ক্ষতি করেছে, তা মেনেই নেওয়া হয়েছে এ বারের খসড়া দলিলে।
খসড়া প্রতিবেদনের ‘আগামী দিনের কর্তব্য’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এবং বামেদের রক্ষা করার জন্য গোটা দল চেষ্টা চালাবে। মানুষ এবং গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট করার জন্য সমগ্র দল প্রয়াস নেবে। হিংস্র আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দলকে সাহায্য করতে হবে’। সিপিএমেরই একাংশের ব্যাখ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের ‘বাম দুর্গে’র পতনের জন্য রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রকাশ কারাটও ‘দায়’ এড়াতে পারেন না। সেই জন্যই পার্টি কংগ্রেসের দলিলে পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে আলিমুদ্দিনকে ‘বার্তা’ দিয়ে রাখলেন কারাটেরা।
পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে যেমন রবিবারই ফের বিগত বাম জমানার পাশে দাঁড়িয়েছেন কারাট। ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলনের শুরুতে আগরতলায় দলীয় সমাবেশে এ দিন কারাট বলেছেন, “আমরা জানি, বামপন্থী শাসিত রাজ্যে কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হয় না। পশ্চিমবঙ্গেও বামপন্থীরা ক্ষমতায় থাকার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এখন
দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা জীবন দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর কারণ, সেখানে এখন বামপন্থীরা ক্ষমতায় নেই।” একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার সরকারকে যেমন ‘রক্ষা’ করার কথা বলতে হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলে, তেমনই বলতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জমি পুনরুদ্ধারের কথা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় গ্রামীণ এলাকাতেই প্রথম আন্দোলন শুরু করেছে বঙ্গ সিপিএম। খসড়া প্রতিবেদন তারই পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘বাম সরকারের সাফল্য চাইলেই অস্বীকার করা যাবে না। ভূমি সংস্কার, পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং গণতন্ত্রীকরণ, শ্রমজীবী মানুষের জন্য অধিকার নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এ সবই তৃণমূলের নতুন জমানায় আক্রান্ত। ভূমিসংস্কারকে অগ্রাহ্য করে কৃষকের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পঞ্চায়েতের ব্যবস্থাটিকেই খর্ব করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজ আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে’।
এ রাজ্যে শিক্ষার আঙিনায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সূত্র ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব’ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দীর্ঘলালিত গণতান্ত্রিক নীতির উপরেই ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছে তৃণমূলের নেত্ৃত্বাধীন নতুন সরকার’। হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্র রাজনীতিকেই যে ‘কলঙ্কিত’ করার চেষ্টা হচ্ছে, বলা হয়েছে সে কথাও।
গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী আক্রমণে ২১০ জন সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে প্রতিবেদনে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ঘটনা সেখানে স্থান পেয়েছে। বলা হয়েছে, ‘সিপিএমের উপরে আক্রমণ চালানোর জন্য তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদীদের আঁতাঁত নকশালবাদের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়’। মাওবাদীরা ‘অতি-বাম অ্যাডভেঞ্চারের ঝোঁকের অবক্ষয়িত রূপ’ এমনই বলেছে সিপিএমের দলিল।
সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যাঁরাই থাকুন, তাঁর জমানায় প্রমোদ দাশগুপ্তের আলাদা গুরুত্ব ছিল দলে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার কার্যক্রমে বঙ্গ সিপিএমের ‘পৃথক গুরুত্ব’ আর সে ভাবে থাকেনি। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে গিয়ে সেই পশ্চিমবঙ্গের পার্টিই যে ফের ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থান’ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে, এ বারের পার্টি কংগ্রেসের দলিল তারই ‘স্বীকৃতি’ বলে দলের ওই অংশের অভিমত। |
|
|
|
|
|