বন্ধ চালকলের নামে ধান কিনে বেআইনি কারবার চালানোর অভিযোগ উঠেছে এক চালকল মালিকের বিরুদ্ধে। হুগলির আরামবাগ মহকুমায় এই ঘটনায় ‘প্রভাবশালী’ এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষকদের একাংশ। মহকুমার অন্য চালকল মালিকদের একাংশও এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা খাদ্য নিয়ামকের দফতরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা। আরও অভিযোগ, ‘প্রকৃত’ চাষিদের বদলে ফড়েদের কাছ থেকে ধান কিনছে ওই বন্ধ চালকলগুলি। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি চালও কেনা হচ্ছে।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ধান কেনার মাস্টার রোল খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্ত চালকল মালিক রামপ্রসাদ মাঝির দাবি, তিনটি চালকল সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি খোলা হয়েছে। ফলে, ধান কেনা নিয়ে বেআইনি কিছু করেননি তিনি। ফড়েদের কাছ থেকে ধান কেনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কে চাষি, কে ফড়ে, তা দেখার কথা ব্লক স্তরে। এ ব্যাপারে তাঁর কোনও দায়িত্ব নেই। এ ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
চালকলগুলি চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে সরকারকে লেভি দেওয়ার কথা। সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কুইন্ট্যাল-পিছু ১০৮০ টাকা পান চাষিরা। ৮০০ কুইন্ট্যাল ধান থেকে চাল হয় ৬৮০ কুইন্ট্যাল। সেই চাল কুইন্ট্যাল-প্রতি ১৭১৪.৫০ টাকায় সরকারকে বিক্রি করেন চালকল মালিকেরা। রামপ্রসাদবাবু তিনটি বন্ধ চালকলের নামে ধান কিনে অনৈতিক ভাবে দু’কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছেন বলে অভিযোগ। হুগলির অতিরিক্ত জেলা খাদ্য নিয়ামক (আরামবাগ বিভাগ) কাশীনাথ দলুই বলেন, “লেভি-সংক্রান্ত বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মিলগুলি থেকে লেভি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহকুমাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠানো হচ্ছে।”
আরামবাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯৬টি চালকল আছে। তার মধ্যে ৮টি বন্ধ। চালকলগুলির মালিকদের বক্তব্য, যে পরিমাণে ধান তারা কিনতে পারে, তার থেকে কম কিনতে হচ্ছে। কারণ, সরকার থেকে বলা হচ্ছে, চাল রাখার মতো প্রয়োজনীয় গুদামের অভাব আছে। কাশীনাথবাবু জানান, দু’টি নতুন গুদাম ঘর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একটি আরামবাগের চাঁদুরে। অন্যটি তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙায়। প্রত্যন্ত গ্রামে ধান কেনার জন্য কৃষি সমবায় সমিতিগুলিকেও চাঙ্গা করা হচ্ছে।” খাদ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মহকুমার চালকলগুলি থেকে মোট ৪৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। শিবির করে ধান কেনা হয়েছে ১৮৮০ মেট্রিক টন। মোট লেভি পাওয়া গিয়েছে ২২ হাজার ৩৩১ মেট্রিক টন। চালকল মালিকদের দিতে হয়েছে ৩৮ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯৯৫ টাকা।
রামপ্রসাদবাবু আরামবাগ মহকুমা রাইস মিল মালিক সংগঠনের সহ সভাপতি। ওই সংগঠনের সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধ মিলের নামে লেভি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মহকুমাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”
অভিযোগকারী চাষিদের মধ্যে নাজির আহমেদ, সুকুমার ধাড়া, রঞ্জন রায়দের বক্তব্য, “বেশ কিছু এখনও ধান বিক্রিই করতে পারেননি। কিছু চাষি কমবেশি ১০ কুইন্ট্যাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ধান ফড়েরাই কিনে নিচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষও দালাল ছেড়েছে বাজারে। তারাই ধান কিনছে অনেক কম দামে।” |