শিক্ষার আলো পথ দেখিয়েছে ফতুল্লাপুরকে। আর তাই রাজনীতি ভুলে প্রায় ৩০টি বারোয়ারি পুজোর আয়োজনে উৎসবে মেতেছে গোটা গ্রাম। তবুও মনোকষ্ট গ্রামের প্রবীণদের। কারণ সরস্বতী পূজোকে ঘিরে গ্রামের যাত্রাপালায় ইতি পড়ায় এখন তার জায়গা নিয়েছে বাইরে থেকে ভাড়া করে আসা অর্কেস্টা, ফিল্মি গানের জলসা।
কদিন আগেও এই উৎসবকে ঘিরে গ্রাম জুড়ে বসত যাত্রা, থিয়েটারের আসর। গ্রামের তরুণেরাই দল বেঁধে আসর বসাত বসন্ত পঞ্চমী থেকে সপ্তমীর দিনগুলিতে। গ্রাম জুড়ে একদিকে চলত সরস্বতী পূজোর আয়োজন, অন্যদিকে স্কুল ঘরে চলত যাত্রাপালার মহড়া। সুতির ফতুল্লাপুর গ্রামে সরস্বতী পুজোর উৎসব ছাপিয়ে যেত শারোদৎসবের আড়ম্বরকেও। আজও গ্রাম জুড়ে সেই ধূম অব্যাহত। বরং বেড়েছে আতিশয্য। হ্যারিকেন ও হ্যাজাকের জায়গা নিয়েছে বিদ্যুতের রোশনাই। বছর দশ আগের হাতেগোনা ১২টি পুজোর ক্রমশ বিস্তার ঘটছে গোটা গ্রাম জুড়েই। অতীতে একসময় যাত্রার নিয়মিত অভিনেতা পটলচন্দ্র দাস বলেন, “চাণক্য, সিঁথির সিঁদুর, বাগদত্তা একাধিক যাত্রাপালার আসর বসত গ্রামে সরস্বতী পূজোর রাতে। স্কুল ঘরে দু’মাস আগেই শুরু হয়ে যেত তার মহড়া। সন্ধ্যে হলেই মহড়া দেখতে আসতেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। যাত্রাপালার জায়গা নিয়েছে আধুনিক নাচগান।” যাত্রাপালার অন্যতম মধ্যমণি ৭৪ বছরের কংগ্রেস নেতা সত্যরঞ্জন দাস বলেন, “বছর ১৫ আগেও গ্রামবাসীদের যথেষ্ট উৎসাহ ছিল। গ্রামের মেয়েরাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে।” প্রবীণ জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “অহিভূষণ দাস ও সুধীরকুমার দাসই ছিলেন সব থেকে উদ্যোগী।” দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন জিতেনবাবুর দুই ভাইঝি, প্রভাতী দাস ও মিনতি দাস। গ্রামের বৌ আভারানি বলেন, “ফতুল্লাপুরে অভিনয় করেছি দাতা কর্ণ, ডাকঘর, দেবী সুলতানার মতো বহু নাটকে। আজও মনে পড়ে যাত্রার জন্য ভাড়া করা পোশাক পরে ভয়ে সেঁধিয়ে যেতাম পাছে যাত্রার কথা ভুলে যাই।” গ্রামে শিক্ষার হার বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। শিক্ষার আগ্রহেই সরস্বতী পূজো নিয়ে এত উচ্ছ্বাস। |