রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
জয়া বচ্চনের সঙ্গে সিনেমায় অভিনয়! ধর্মেন্দ্রর কাছ থেকে পাওয়া শুভেচ্ছাবার্তা। অসিত সেনের হিন্দি ছবিতে শুটিং।
অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে শুনলে। কিন্তু ইউরোপের একমাত্র এশীয় কোচ, জার্মানির বাঙালি কোচ রবিন দত্তের জীবনের অন্যতম সেরা স্মৃতি হয়ে আছে এ গুলো। তাঁর বাবা-মা’রও।
ক’দিন পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিওনেল মেসির বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলতে নামছে রবিনের দল বেয়ার লেভারকুসেন। যেখানে খেলেন মাইকেল বালাক। সেই রবিন একদা অসিত সেনের বিখ্যাত ‘অন্নদাতা’ ছবিতে জয়া ভাদুড়িকে ‘আশীর্বাদ’ করেছিলেন।
রবিনের বাবা সব্যসাচী দত্ত তাঁর জার্মান স্ত্রী রোজমেরিকে নিয়ে এখন কলকাতায়। তাঁরাই বলছিলেন, বিখ্যাত জার্মান ফুটবল কোচের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার গল্প। সত্তর দশকের শুরুতে বছর দুই মুম্বইয়ে কাজ করতে এসেছিলেন দত্ত দম্পতি। থাকতেন খার অঞ্চলে। পাশের বাড়িতে থাকতেন অসিত সেন। “উনি আমাদের বাড়িতে আড্ডা মারতে আসতেন। খুব ভাল আলাপ হয়ে গেছিল। তখন ধর্মেন্দ্র থেকে শুরু করে সবাই অসিতবাবুর কাছে আসতেন। উনিই এক দিন রবিনকে নিয়ে গেলেন শুটিং করাতে। তখন ওর সাত আট বছর বয়স।” বলছিলেন সব্যসাচীবাবু। যিনি অতীতে ময়দানে ক্রিকেট খেলেছেন মিলন সমিতির হয়ে। |
শহরে রবিন দত্তের মা ও বাবা। ছবি: উৎপল সরকার |
বাংলা বা হিন্দি না জানলেও রোজমেরির এখনও মনে আছে ‘অন্নদাতা’ ছবির সেই দৃশ্য। “ওটা একটা স্বপ্ন দৃশ্য ছিল। জয়া ভাদুড়ি ছিলেন বাচ্চাদের মধ্যে। রবিনকে বৃদ্ধ সাজানো হয়েছিল। ও সাধু সেজে জয়া ভাদুড়িকে আশীর্বাদ করছিল।” রোজমেরির কথার ফাঁকে সব্যসাচীবাবুর সংযোজন, “ওই দৃশ্যে ওমপ্রকাশও ছিলেন। আরও একটা দুটো দৃশ্যে অভিনয় ছিল রবিনের। ছবিটার সিডি অনেক দিন আমাদের কাছে ছিল। এখন হারিয়ে ফেলেছি। রবিনকে ধর্মেন্দ্র একটা শুভেচ্ছা বার্তা লিখেছিল। ওটাও হারিয়ে গেছে।”
বেয়ার লেভারকুসেনে ছেলে কোচ হওয়ার পরে বুন্দেশলিগার একটা খেলাও দেখা হয়নি স্টুটগার্টের দত্ত দম্পতির। জার্মানি ফিরে তাঁদের ইচ্ছে, বার্সেলোনার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটা দেখতে যাওয়ার। মেসিই প্রিয়তম ফুটবলার রোজমেরির। তাই রীতিমত উত্তেজিত তিনি। “বার্সেলোনাকে হারানো কঠিন। লেভারকুসেন ড্র করতে পারলেই খুশি হব।” বললেন লেভারকুসেন কোচের মা।
বেকেনবাউয়ার-ফোলার প্রশংসা করেছেন তাঁর ছেলের। অনেকেই বলছেন, রবিন ভবিষ্যতে জাতীয় কোচ হতে পারেন জার্মানির। তা নিয়ে চাপা গর্ব বাবা-মা’র। কলকাতায় প্রচুর আত্মীয় ছড়িয়ে। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেই আসা এ শহরে। পারিবারিক বাড়িটা হারিয়ে গিয়েছে, তাই ওঠেন হোটেলে। সেখান থেকেই প্রতিদিন নানা আত্মীয়র সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া। হোটেলের লাউঞ্জে বসে বললেন, “রবিন বহু যুগ আগে কলকাতায় এসেছিল। বাংলা বলতে পারে না। রাজস্থানের কোটায় আমরা থাকার সময় হিন্দি শিখেছিল। এখন ভুলে গেছে।”
লেভারকুসেনে ক’দিন আগেই মাইকেল বালাকের সঙ্গে রবিন দত্তের ঠোকাঠুকি লেগেছে। পারফরম্যান্স ভাল নয় বলে বালাককে একটা ম্যাচে তুলে নেন রবিন। প্রকাশ্যেই হাবেভাবে বিরক্তি প্রকাশ করেন বালাক। সমর্থকরা এ নিয়ে দু’ভাগ। কেউ রবিনের পক্ষে, কেউ রবিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু লেভারকুসেনে রবিনের প্রধান সমর্থক, স্পোর্টিং ডিরেক্টর রুডি ফোলার সরাসরি দাঁড়িয়েছেন রবিনের হয়ে। বলেছেন, “আমি হলে আরও আগে বালাককে তুলে নিতাম।” ক্লাবের সি ই ও উল্ফগ্যাং হলফজাসেরও রবিনের হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, “বালাকের কাছে যা প্রত্যাশা ছিল, পাওয়া যায়নি।” তবু সব মিলিয়ে রবিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়েছে। লেভারকুসেন এখন ছয়ে।
জার্মানির বাঙালি কোচের বাবা-মা কি তাতে উদ্বিগ্ন? সব্যসাচীবাবু বললেন, “সব টিমের পয়েন্টের ফারাক অনেক কম। আর ম্যাচও অনেক বাকি। মনে হয়, বেয়ারলেভারকুসেন তিন নম্বরে থাকবে।” রোজমেরির সহাস্য উত্তর, “প্রথম তিনে থাকলেই আমি খুশি। পরের বারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা খেলতে হবে।” |